যেভাবে চলছে কওমি মাদরাসার ছাত্র কাফেলাগুলো-২
প্রকাশ:
২৬ মে, ২০২৪, ০৬:০৯ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
|| হাসান আল মাহমুদ | | কওমি শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে মাদরাসাগুলোতে ‘ছাত্র কাফেলা বা ছাত্র সংসদ’ নামে স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। কাফেলার উদ্যোগে বছর জুড়ে বক্তৃতা, বিতর্ক, প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রণয়নসহ নানা শিল্প-সংস্কৃতিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। মাদরাসার মুহতামিম বা পরিচালকের অনুমোদনে কোথাও শিক্ষকদের থেকে একজনকে বানানো হয় দায়িত্বশীল সভাপতি, কোথাও ছাত্রদের থেকে সভাপতি-সেক্রেটারি নির্ধারণ করে কমিটি গঠন করে পরিচালিত হয়ে থাকে ছাত্র কাফেলা। বছর জুড়ে কী কী আয়োজন করে থাকে, কীভাবে নানা আয়োজন বাস্তবায়ন করে থাকে সেসব জানতে ছাত্র কাফেলা বা ছাত্র সংসদের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। আজ থাকছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বছিলায় অবস্থিত শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর শাহেবজাদা বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া'র ছাত্র সংসদ ‘রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা’র গল্প। প্রথম পর্বের লিংক: যেভাবে চলছে কওমি মাদরাসার ছাত্র কাফেলাগুলো-১ গল্প জানাচ্ছেন কাফেলাটির সাবেক সভাপতি মাওলানা রিয়াদ হাসান। রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা: উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহমাতুল্লাহ আলাইহির মোবারক হাত ধরে যার পথ চলা শুরু হয়েছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে এবং সমাজ ও জাতির যোগ্য দায়িত্বশীল গড়ে তোলার মহান ব্রত নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এ কাফেলা। গঠন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রতি বছরের শুরুতে জামিয়ার মুনতাজিমিন আসাতিযায়ে কেরাম সকল শিক্ষকদের থেকে মতামত নিয়ে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে থাকেন যাদের মাঝে একজনকে আমির, তিনজন নায়েবে আমির ও ১১ জন থাকে নির্বাহী সদস্য। দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির বাকি ১৪ জন সদস্যকে নিয়ে পরামর্শের ভিত্তিতে কাফেলার কাজগুলো বাস্তবায়ন করে থাকেন। তবে কাফেলার সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য জামিয়ার পক্ষ থেকে তিনজন ওস্তাদকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োজিত করা হয়। ছাত্র কাফেলার কার্যক্রম: রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা দুই ধরনের কাজ করে থাকে ১. প্রচারণামূলক প্রচারনামূলক: ছাত্র কাফেরার প্রচারণা মূলক কাজের মধ্যে রয়েছে বক্তৃতা অনুষ্ঠান, পাঠাগার, পবিত্র ঈদুল আযহার পূর্বে ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান, ও রবিউল আউয়াল মাসে বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান। বক্তৃতা অনুষ্ঠান: জামিয়া ছাত্রদেরকে একজন দক্ষ আলোচক ও বাকপটু হিসেবে গড়ে তুলতে ছাত্র কাফেলা নিয়মিত আয়োজন করে থাকে আরবী বাংলা বক্তৃতা অনুষ্ঠানের। তন্মধ্যে নয়টি সাপ্তাহিক, তিনটি মাসিক ও একটি বার্ষিক বক্তৃতা হয়ে থাকে। প্রতি তিন সপ্তাহের বিজয়ীদেরকে নিয়ে আয়োজিত হয় ইজতেমায়ী তথা মাসিক বক্তৃতা অনুষ্ঠান। অতঃপর তিন ইজতেমার মধ্য থেকে ৯ জন বিজয়ীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমাউল ইজতেমা তথা বার্ষিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা। পাঠাগার: ছাত্রদের মেধাবিকাশের লক্ষ্যে রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা পরিচালনা করে থাকে একটি মানসম্মত পাঠাগার। যাতে ধর্মীয় আন্তর্জাতিক জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৫ সহস্রাধিক বই রয়েছে। ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান: পবিত্র ঈদুল আযহার পূর্বে রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা আয়োজন করে থাকে ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান। যাতে থাকে - ১. এসো জ্ঞানের ভুবনে বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান: রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য আয়োজন হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান। প্রায় ৩০ এরও অধিক ইভেন্ট নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এটি। তার মধ্যে রয়েছে- হিফজুল কুরআন, কোরআন হাদিসের আলোকে জীবন গড়ি, কুইজ ড্র, হিফজুল হাদিস, সংসদীয় বিতর্ক, জ্ঞানীর সন্ধানে, আবৃত্তি, সংবাদ পাঠ, হামদ নাত , টকশো, সাহাবা পরিচিতি ইত্যাদি। প্রকাশনামূলক: জামিয়ার ছাত্রদেরকে একজন আদর্শবান ও দক্ষ কলম সৈনিকরূপে গড়ে তুলতে ছাত্র কাফেলা প্রকাশ করে থাকে দেয়ালিকা। পবিত্র ঈদুল আযহা ও বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুইটি বাংলা দুটি আরবি ও একটি ছড়াসহ বছরে মোট ১০টি দেয়ালিকা প্রকাশ করে থাকে এবং সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ লেখক ও নির্বাচিত কবি হিসেবে বেশ কয়েকজনকে পুরস্কৃত করে থাকে। এছাড়াও ছাত্র কাফেলা আয়োজন করে থাকে আরবি বাংলা রচনা প্রতিযোগিতা। হাআমা/ |