কবরের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়া ও আমল
প্রকাশ:
২৫ মে, ২০২৪, ১২:৪২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
পরকালের প্রথম ঘাঁটি হচ্ছে কবর। মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় হচ্ছে কবরের জগত বা আলমে বরজখ। কবর আজাব সত্য। মহানবী সা. প্রায়ই এই দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি: ২৮২২) কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ভিত্তিতে জাহান্নামের গর্ত কিংবা জান্নাতের টুকরোয় পরিণত হবে কবর। (তাবিয়াতুল হায়াত ফিল কবর; আল-ইসলাম সুওয়ালুন ওয়া জাওয়াব : ০৪-১১-২০১৮) যদি কেউ এই ঘাঁটি থেকে থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য সহজ হবে। আর যদি কেউ কবর থেকে মুক্তি না পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য আরো কঠিন হবে।’ (তিরমিজি: ২৩০৮) কবর আজাবের কারণসমূহের মধ্যে গিবত-পরনিন্দা, প্রস্রাব থেকে পরিচ্ছন্ন না হওয়া, অন্যের দোষ খোঁজা, সম্পদ হরণ, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও প্রাপ্য থেকে অন্যকে বঞ্চিত করা, কুরআন-হাদিস অস্বীকার করা, কুরআন তেলাওয়াত বা অধ্যয়ন না করা, ফরজ নামাজ না পড়ে ইচ্ছাকৃত ঘুমানো, মিথ্যা বলা, সুদ খাওয়া ও জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া অন্যতম। (ড. আবদুল্লাহ ইবনে হামুদ আল-ফারিহ; মিন আসবাবি আজাবিল কাবরি মাআদ দলিল, শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮) কবর আজাব থেকে মুক্তির উপায় এছাড়াও তাওহিদ-বিশ্বাস, তাকওয়ায় অটলতা, আল্লাহর রাস্তায় গমন ও শাহাদাত বরণ, ইসলামি রাষ্ট্রের পাহারা দেওয়া, নিয়মিত সুরা মুলক পাঠ এবং সময়োপযোগী আমল-ইবাদত ইত্যাদি কবর আজাব থেকে রক্ষা করে। (ড. খালিদ রাতিব, আল-আসবাব আল-মুনজিয়া মিন আজাবিল কবর; শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮) সুরা মুলকের ব্যাপারে নবীজি সা. ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিদিন ইশার নামাজের পর রাতে ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি সুরা তাবারাকাল্লাজি, অর্থাৎ সুরা মুলক তেলাওয়াত করবে, তার মৃত্যুর পর কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি: ২৮৯০, মুসতাদরাকে হাকেম) পেটের রোগে মৃত্যু হলেও কবরের আজাব নেই। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যাকে তার পেটের কোনো রোগ হত্যা করে তাকে কখনো কবরে ‘আজাব দেওয়া হবে না।’ (তিরমিজি: ১০৬৪; সুনান নাসায়ি: ৪/৯৮) জুমাবারে কেউ মারা গেলে তার কবর আজাব হয় না বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। (তিরমিজি: ১০৯৫; মেশকাত: ১৩৬৭; মুসনাদে আহমদ: ১১/১৪৭) এছাড়াও নবী-রাসুলগণ, সিদ্দিক, নাবালেগ ও পাগলদের কবর আজাব নেই মর্মে বিভিন্ন বর্ণনায় উঠে এসেছে। মোট কথা, আল্লাহর ওপর ঈমান, তাঁকে ভয় করা, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, দান-সদকা, দোয়া এবং তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমেই কবর আজাব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। মূলত এসব আমলই পরকালীন সফলতার বড় উপায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর দৃঢ় থাকে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা আহকাফ: ১৩) কবর আজাব থেকে মুক্তির দোয়া اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই মাসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন-মরণের বিপদাপদ থেকে।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল সা. এই দোয়াটি এমনভাবে শেখাতেন, যেভাবে তাদের কোরআনের সুরা শেখাতেন। (আবু দাউদ: ১৫৪২) আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। এনএ/ |