দ্বীনি দাওয়াতে সজীব ঊষর মরু
প্রকাশ: ০৮ মে, ২০২৪, ০৪:২৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহর অনুগত বান্দারা যখন প্রাণপণ চেষ্টা-প্রচেষ্টায় শ্রম-ঘাম ঝরায় তখন হাজারো প্রতিকূলতা এ পথের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রকৃত মুমিন কখনো সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়ায় না। প্রয়োজনে সে বুকের তপ্ত রক্ত ঝরায়। তাদের প্রতি অবিরাম অনুপ্রেরণা জোগান স্বয়ং আল্লাহ জাল্লা শানুহু।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইসলামের দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন যে, তবে কি যিনি প্রত্যেক ব্যক্তির উপার্জনের প্রতি নজর রাখেন তাঁর মোকাবেলায় এ দুঃসাহস করা হচ্ছে যে লোকেরা তাঁর কিছু শরিক ঠিক করে রেখেছে?

হে নবী! এদেরকে বলো, (যদি তারা সত্যিই আল্লাহর বানানো শরিক হয়ে থাকে তাহলে) তাদের পরিচয় দাও, তারা কারা? নাকি তোমরা আল্লাহকে এমন একটি নতুন খবর দিচ্ছো যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে তাঁর অজানাই রয়ে গেছে?

অথবা তোমরা এমনি যা মুখে আসে বলে দাও? আসলে যারা সত্যের দাওয়াত মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য তাদের প্রতারণাসমূহকে সুসজ্জিত করে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে সত্য-সঠিক পথ থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ যাকে গোমরাহিতে লিপ্ত করেন তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই।(আর-রাদ : ৪৩)

বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে যে, অকৃত্রিম দ্বীনি দাওয়াতের ফলে দেড় হাজার বছর আগে আল্লাহর সাহায্যে সজীব হয়ে উঠেছে মক্কার ঊষর মরুপ্রান্তর। এ ব্যাপারে আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাহস ও শক্তি জুগিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধুর উদ্দেশে বলেছেন,  (হে নবী, কাফেররা চায়), তােমার কাছে যা ওহি নাজিল হয় তার কিয়দংশ তুমি ছেড়ে দাও এবং এ কারণে তোমার মনােকষ্ট হবে যখন তারা বলে বসবে, এ ব্যক্তির ওপর কোনো ধন-ভাণ্ডার অবতীর্ণ হলাে না কেন, কিংবা তার সাথে (নবুওতের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য) কোনাে ফেরেশতা এলাে না কেন; তুমি এতে মনােক্ষুণ্ণ হয়াে না); তুমি তাে হচ্ছো (আজাবের) ভয় প্রদর্শনকারী (একজন রাসূল মাত্র); যাবতীয় কাজকর্মের (আসল) কর্মবিধায়ক তাে হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। (হুদ-১২)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অশেষ নেয়ামতের মাঝে মানুষকে কথা বলার জন্য জবান দিয়েছেন, শোনার জন্য কান দিয়েছেন, অনুধাবন ও চিন্তাভাবনার জন্য দিয়েছেন অন্তর। এ জন্য আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় মানুষের একান্ত কর্তব্য। অন্যথায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি অকৃতজ্ঞতা ছাড়া একে  আর কী বলা যায়?

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর হাবিবকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার সময় এ বিষয়ে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। কুরআন মাজিদে বলা হয়েছ—
'(হে নবী,) তুমি (এদের) বলে দাও (হ্যাঁ), তিনিই তোমাদের পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (শােনার ও দেখার জন্য) কান এবং চোখ দিয়েছেন, আরাে দিয়েছেন (চিন্তা করার মতাে) একটি অন্তর; কিন্তু তোমরা খুব কমই (এসব দানের) কৃতজ্ঞতা আদায় করাে। (মুলক-২৩)

আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বানকারী ব্যক্তি যে নামেই পরিচিত হোন না কেন দ্বীনের দাওয়াত দেয়া প্রতিটি মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিবকে বলেছেন, 'হে রাসূল, যা কিছু তোমার ওপর নাজিল করা হয়েছে তা তুমি (অন্যের কাছে) পৌঁছে দাও, যদি তুমি (তা) না করো তাহলে তুমি তো (মানুষের কাছে) তার বার্তা পৌঁছে দিলে না! আল্লাহ তায়ালা তোমাকে মানুষের (অনিষ্ট) থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কখনো কোনো অবাধ্য জাতিকে পথ প্রদর্শন করেন না। (আল-মায়েদা-৬৭)

আল্লাহ তায়ালা তাঁর একমাত্র মনোনীত দ্বীন-ইসলামের প্রচার ও প্রসারে নিবেদিত প্রাণ বান্দাদের মর্যাদার ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে বলেছেন, 'তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন ব্যক্তির হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকে এবং সে নিজে নেক কাজ করে এবং বলে আমি তো মুসলমানদেরই একজন।  (ফুসসিলাত-৩৩)

লেখক : আলোচক ও সাংবাদিক  

এনএ/