মাদার তেরেসাকে ফলো করে মানবতার ফেরিওয়ালা : মিল্টনের আইনজীবি
প্রকাশ:
০২ মে, ২০২৪, ০৭:৫৭ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
মাদার তেরেসাকে ফলো করে মিল্টন সমাদ্দার মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (২ মে) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে একথা বলেন তার আইনজীবী আব্দুস সালাম শিকদার। তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দার নিজেকে মাদার তেরেসার সঙ্গে কম্পেয়ার করেন না। তবে মাদার তেরেসাকে ফলো করে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন তিনি। এদিন মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করে মিরপুর মডেল থানায় করা মামলায় সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর জোনাল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ কামাল হোসেন। রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মিল্টন সমাদ্দার নিবন্ধিত ডাক্তার নন। তার প্রতিষ্ঠানে সে নিবন্ধিত কোনও ডাক্তার নিয়োগ প্রদান করেনি। আসামি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সেবার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নিজে ডাক্তার সেজে অপর আসামিদের পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা করে, সেবা প্রদান করে, ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড ফলোয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করেন। আসামির দেখানো মতে তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্র ও তার টেবিলে থাকা ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। সার্টিফিকেটগুলোতে মিল্টন সমাদ্দার নিজে ডাক্তার সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৃত সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিদের মৃত ঘোষণা করেন। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যুর সনদপত্রে ভুয়া ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সীল এবং নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর ও সিল প্রদান করে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের কাছে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সেই সনদপত্র প্রদান করেছেন। আরও বলা হয়, আসামি দীর্ঘদিন যাবৎ মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক ও শিশুকে নিয়ে শারীরিক, মানসিক আঘাত করে। কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিক্রি করে থাকে বলে বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। আসামি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসা প্রদান না করে খাবারের যথাযথ মান বজায় না রেখে বিভিন্ন মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে মৃত্যু ঘটিয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি মৃত সার্টিফিকেট দিয়েছেন। মৃত্যু সনদ প্রদানে মৃত্যুর সঠিক কারণ, শিশু পাচার, মৃত সনদ জাল-জালিয়াতি করে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার সংক্রান্তে, আসামির সহযোগী অন্যান্য আসামিদের শনাক্তসহ নাম, ঠিকানা সংগ্রহ এবং গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, আসামির চাইল্ড হোম ও ওল্ড হোমে যারা মারা যেতেন, তাদের রাতে কবর দিত। ডেথ সার্টিফিকেট নিজে দিত। নিজেই কাটাছেঁড়া করত। পরবর্তীতে এটা ধরা পড়ে। পরে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। মিল্টন সমাদ্দারের পক্ষে আব্দুস সালাম শিকদার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, দোষ ধরার লোকের অভাব নেই। ভালো কাজ করেন কত জন? রাস্তায় একজন অসুস্থ মানুষ পড়ে থাকলে দেখার কেউ নেই। মিল্টন সমাদ্দার রাস্তা থেকে তুলে এনে তাদের মুখে ভাত তুলে দেয়। তাকেই তো মানবতার ফেরিওয়ালা বলা যায়। এটা নিয়ে তো ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া-ই যায়। তিনি বলেন, মন্দের ভিড়ে এখনও ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। মানুষ এখনও সেবা দিচ্ছেন। আর কেউ ভালো কর্মে আকর্ষিত হয়ে দান করলে এটা নেওয়া তো প্রতারণা করা নয়। মিল্টন সমাদ্দার প্রতিহিংসার শিকার। ভালো কাজ করেছে। এজন্য চক্ষুশূল হয়েছেন। আর তিনি তো তার আব্বার নামে জমি কিনেননি। ট্রাস্টের নামে কিনেছেন। ভালোকে অ্যাপ্রিসিয়েট করা উচিত। হয়রানি করতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাস্ট তো আজকের না। এতদিন তো চলে আসছে। থলের বিড়াল সাদা না কালো বেরিয়ে আসবে। আইনজীবী বলেন, ৫০টি না, একটিও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার তিনি রাখেন না বা কেউ দেয় না। কেউ মারা গেলে শুধু বলে দেয় কখন মারা গেছে। ডাক্তার পরিচয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি। এসব ভৌতিক কথা। পথে যারা অসুস্থ, আহত তাদের এনে সেবা করতেন মিল্টন সমাদ্দার। এরপর রিমান্ড বাতিল চেয়ে তার জামিনের আবেদন করেন তিনি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্তের দাবি রাখে। এজন্য তার ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। এর আগে, এদিন বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়। হাআমা/ |