‘বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যাওয়া; দোয়া কবুল না হলেও বুঝতে হবে এতেই কল্যাণ রয়েছে’
প্রকাশ:
২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:৩১ রাত
নিউজ ডেস্ক |
আগুনে পুড়ছে পুরো দেশ। প্রচন্ড্র রোদ আর তীব্র তাপদাহ। রোদের তেজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরমের তীব্রতা। হিটস্ট্রোকে মরছে মানুষ প্রতিদিন। জরিপ মতে চলতি এপ্রিলে গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে টানা ২৭ দিন ধরে চলছে দাবদাহ। এই প্রচন্ড্র গরমে আলেমসমাজ ও জসসাধারণের কী করা উচিত, কী করা উচিত নয় ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ মুফতি শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিচার্স সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার- হাসান আল মাহমুদ। শ্রুতি লিখন করেছেন নুর আলম সিদ্দিকী। আওয়ার ইসলাম: কী করলে বৃষ্টি হয়? মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ: বৃষ্টি এটা আল্লাহর রহমত। বৃষ্টি কবে, কখন দেবেন সেটা তিনি কুরআনে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে গোনাহ মাফ চাও। ক্ষমা চাইলে তিনি প্রথমত গোনাহ মাফ করবেন। দ্বিতীয়ত তিনি আসমান থেকে মেঘমালার মাধ্যমে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। (সূরা নুহ, আয়াত-১০-১১) বৃষ্টি চাওয়ার ৩ টি পদ্ধতি এক: জুমার খুৎবায় দোয়া করা। হজরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, জুমার দিন রাসুল সা. খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, ‘ (অনাবৃষ্টির কারণে) মাল-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব, আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দান করেন। রাসুল সা. দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের বৃষ্টি দান করুন ‘। আনাস রা. বলেন, দোয়ার পরপরই আকাশে মেঘ ছেয়ে গেল এবং অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামল। (বুখারি ও মুসলিম) দুই: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ইসতিসকার দোয়া করা। তিন: মাঠে গিয়ে ইস্তিস্কার নামাজ পড়ে দান-সদকাহ করে সর্বস্তরের মানুষ আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে মাফ চাইবে। ২ রাকাত নামাজ পড়বে। ইমাম সাহেব খুৎবা দিবেন তারপর হাত উঁচু করে দোয়া করা। আওয়ার ইসলাম: বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়লেই কি দোয়া কবুল হয়? মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ: দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তিনটি অর্থ আছে- প্রথমত: কিছু দোয়া আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য মঙ্গল মনে করেন, তাই সেসব দোয়া তিনি তৎক্ষণাৎ কবুল করেন। দ্বিতীয়ত: কিছু দোয়া যদি আল্লাহ তৎক্ষণাৎ মঙ্গলকর মনে না করেন, সে দোয়াতো কবুল করেন, বাকি এর ফলাফল তৎক্ষাণাৎ না দিয়ে পরবর্তীতে এমন সময়ে দেন, যা আমাদের জন্য কল্যাণকর। তূতীয়ত: কিছু দোয়া আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য মঙ্গলকর মনে করেন না বিধায় সেটার পরিবর্তে অন্য কিছু দান করেন, সেটা দেন না। মনে রাখতে হবে, দোয়া স্বতন্ত্র একটা ইবাদত। দোয়া করলেই সওয়াব। এজন্য এই তীব্র গরমে আমাদের সবার কাজ হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করা। দোয়া করলেই যে আল্লাহ বৃষ্টি দিবেন বিষয়টা এমন নয়। আল্লাহ বান্দার মঙ্গল চান, তাই যখন চান, তখনিই বৃষ্টি হয়। বহুত ইতিহাস আছে, ইস্তিস্কার নামাজ পড়ে দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গেই বৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের করণীয় হলো বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজসহ নানা প্রার্থনা করে যাওয়া। আল্লাহ যদি বৃষ্টি নাও দেন, বুঝতে হবে এতেই আমাদের কল্যাণ রয়েছে। আওয়ার ইসলাম: ‘ব্যাঙে ব্যাঙে বিয়ে দিলে নাকি বৃষ্টি হয়!’ ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে কিভাবে দেখা হয়? মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ: উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম একত্রে বসবাসের ফলে এজাতীয় কুসংস্কার আমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এটা হিন্দুয়ানী প্রথা। ওদের সাংস্কৃতি। ‘ব্যাঙে ব্যাঙে বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবে’ কুরআন-হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই। সোজা কথা হলো- এসব কুপ্রথা। আওয়ার ইসলাম: তীব্র তাপদাহে আলেম ও জনসাধারণের কী করা উচিত? মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ: তীব্র তাপদাহের কারণে মানুষ যেন গরমকে গালি না দেয় । কারণ হাদিসে আছে নবীজি সা. বলেছেন- তোমরা তুফানকে গালি দিওনা। কেননা তুফান-বাতাস নিজে নিজে আসেনি বরং আল্লাহ পাঠিয়েছেন। যাকে গালি দেওয়া হচ্ছে সে যদি গালির উপযুক্ত না হয়, তাহলে সে গালি তোমার ওপর বর্তাবে। দ্বিতীয়ত আমাদের করণীয় হলো দান-সদকাহ করা। কারণ, হাদিসে আছে, ‘সদকাহ বিপদকে হটিয়ে দেয়’। এই তীব্র গরমও একটা চরম বিপদ। জনসাধারণের জন্য পানির ব্যবস্থা করা। কল স্থাপন করা। শরবত খাওয়ানো। ঠান্ড পানি বিলানো। হাদিসে আছে, ‘পানির ব্যবস্থা করে উত্তম সদকাহ’। সর্বোপরি আমাদের সবার করণীয় হলো দুনিয়ার এই সামান্য গরমকে দেখে জাহান্নামের আগুন ও গরমের কথা অনুভব করে গোনাহ বর্জন করা। পাপের পথ ছেড়ে নেকের পথ অবলম্বন করা। হাআমা/ |