ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’
প্রকাশ:
১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০৫:৩৯ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
ফরেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে এ বিষয়ে ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রহ.-এর একটি দারুণ লেখা। পরামর্শের জন্য ফারেগিন ছাড়াও যেকেউ এ লেখা থেকে উপকৃত হতে পারেন- শিক্ষার শেষ ধাপের মুহূর্তটি মাদরাসা পড়ুয়াদের জন্য বড়ই কঠিন। প্রত্যেক ফাযেলের অন্তরেই লুকায়িত থাকে ভবিষ্যতের ব্যাপারে প্রশ্ন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতএব ফুযালাদের সার্বিক অবস্থার বিবেচনায় তাদের সামনে তিনটি কথা পেশ করছি। মূলত একজন ফাযেল ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণে করতে হবে পরামর্শ। এরপর নিতে হবে সিদ্ধান্ত। পরামর্শ থেকে সিদ্ধান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে খুঁজতে হবে তিনটি প্রশ্নের উত্তর। প্রশ্ন ১. একজন ফাযেলের জন্য পরামর্শ করার আগে কী করতে হবে? উত্তর খুব সহজ। পরামর্শ করার আগে পরামর্শের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ফুযালারা একটি ভুলের শিকার হয়। তারা মনে করে তাসলীম, রেজা এবং উস্তাদদের ওপর আস্থার উদ্দেশ্য হলো, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বয়ং নিজে কোনো ধরনের চিন্তা-ভাবনা করা যাবে না। এ ধরনের আবেগী মনোভাব নিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা মোটেই ঠিক নয়। আরে ভাই! নিজের ব্যাপারে নিজের যতটুকু জ্ঞান আছে, অন্যজন তা কিভাবে জানবে। আর জানলেই বা কতটুকু জানবে? তুমি তোমার পরিবেশ-পরিস্থিতি, জরুরত, হাজত, সমস্যা, যোগ্যতা, আগ্রহ এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে খুব ভেবে-চিন্তে নির্ণয় করো তোমাকে কী করতে হবে এবং কী বুনতে হবে। তাদরীস, তাখাসসুস নাকি অন্য কিছু? প্রথমেই নিজের লক্ষ্য স্থির করে ভবিষ্যৎ কর্মের একটি খসড়া তৈরি করে নাও। অতঃপর স্তরবিন্যাস করে নিজের জন্য সর্বাধিক প্রযোজ্য দিকটি নির্ণয় করো। এই ধাপ অতিক্রম করার পরই তুমি পরামর্শ করার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। এবার তুমি তোমার মুহতারাম উস্তাদের সামনে নিজের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা এবং প্রাধান্য দেওয়া বিষয়গুলো পেশ করো। সব দিক সামনে রেখে তিনি যখন পরামর্শ দেবেন, আশা করি তা ফলপ্রসূ হবে। প্রশ্ন ২. পরামর্শ কার সাথে করবে? বাস্তব সত্য হলো, প্রত্যেক উস্তাদ ছাত্রদের প্রতি স্নেহশীল এবং দয়ালু হোন। কিন্তু ব্যাপারটি যেহেতু তোমার ভবিষ্যতের ভিত্তি নিয়ে, তাই পরামর্শক তোমাকেই ঠিক করতে হবে। তবে তা ভেবে-চিন্তে হতে হবে। শুধুমাত্র আকীদত মুহাব্বত দিয়ে নয়। কান পেতে খুব গুরুত্বসহ শোনো, পরামর্শ তার সাথেই করবে, যার মধ্যে তিনটি গুণ পাওয়া যাবে। ১। মুশীর তথা পরামর্শদাতা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে সার্বিকভাবে অবগত হতে হবে। তা তোমার জানানোর মাধ্যমেই হোক না কেন। ২। তুমি যে ব্যাপারে পরামর্শ নিতে চাও, তিনি সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার যোগ্য হতে হবে। যেমন, ইসলামী অর্থনীতির ওপর কোর্স করা অতি প্রয়োজনীয় এবং যুগোপযোগীও বটে। এ ব্যাপারে যিনি সম্যক অবগত নন, তাঁর কাছে পরামর্শ চাইলে তা কখনো ফলপ্রসূ হবে না। ৩। যেমনিভাবে মুশীরের প্রতি তোমার আকীদত মুহাব্বত থাকা প্রয়োজন, তেমনি তোমার প্রতিও তিনি স্নেহশীল হওয়া আবশ্যক। উল্লিখিত তিনটি গুণের একটিও যদি কোনো মুশীরের মধ্যে অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার সাথে পরামর্শ করা নিরর্থক হবে। ভেস্তে যাবে তোমার যাবতীয় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। নড়বড়ে হয়ে যাবে তোমার ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত। অতএব তুমি তোমার ব্যাপারে যা জানো তদানুযায়ী তোমাকেই উপযুক্ত মুশীর নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত মূলনীতিগুলো সামনে রেখে অগ্রসর হলে ইনশাআল্লাহ কখনো অনুতপ্ত হতে হবে না। প্রশ্ন ৩. পরামর্শ করার পর কী করতে হবে? উত্তর সহজ, পরামর্শের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখা। কারণ তুমি পরামর্শের যাবতীয় মূলনীতি মেনে যখন মুশীর ঠিক করবে, তখন তার মতামত ও পরামর্শের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখাই হবে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা। আকাবীরের সাথে জুড়ে থাকা- সৌজন্যে-মাসিক আল-আবরার, মে ২০১৮ কেএল/ |