আল্লাহর রহমতের দরজা ২৪ ঘণ্টাই খোলা
প্রকাশ:
২৮ মার্চ, ২০২৪, ১২:৩৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
|| নাজমুল হুদা মজনু || জীবনের পূর্ণতার জন্য আল্লাহর কাছে ফিরে আসার বিকল্প নেই। যারা হেদায়েতের আলো থেকে যত দূরে তারা ততই অসহায়; নিঃস্ব-নিঃসঙ্গ অন্ধকারে নিমজ্জিত। দুনিয়ার শত দুর্বিপাক-দুঃসময়ে যখন কেউ পাশে দাঁড়ানোর থাকে না তখন বেঁচে থাকা দুঃসহ হয়ে যায়। একটু সুখ-স্বস্তির সন্ধানে অশুভ অমানিশায় ডুব দেয় তারা। দুনিয়ার মিথ্যা মরীচিকার পিছে দৌড়িয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষ হতাশার হাওর-বাঁওড়ে ঘুরপাক খায়। এ সময় সবাই পর হয়ে, মুখ ফিরিয়ে নিলেও একমাত্র মহা দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হতভাগা বান্দা থেকে তাঁর রহমতের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন না। আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে যারা অন্য কারো মুখাপেক্ষী হয় তারা বড়ই কপালপোড়া। আল্লাহ তায়ালাকে ডাকলে সাড়া দেন তিনি। আল্লাহ তায়ালার রহমত ছাড়া মানুষের একটি নিঃশ্বাস নেয়ারও ক্ষমতা নেই। মানুষ সবসময়ই আল্লাহ তায়ালার মুখাপেক্ষী, তা সত্ত্বেও ধনসম্পদ, পদ-পদবি, প্রভাব-প্রতিপত্তির বদৌলতে সম্মান-মর্যাদার দাবিদার যারা তারা তো অহঙ্কারী বটেই; সেই সাথে যারা মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালাকে ডাকে না তারা অবশ্যই অহঙ্কারী।আর অহঙ্কার হলো আল্লাহ তায়ালার চাদর। তা নিয়ে টানাটানি করলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। কুরআনে কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেবো। যারা আমার ইবাদত নিয়ে অহঙ্কার করে তারা শিগগিরই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মুমিন : আয়াত ৬০) এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অহঙ্কার আমার সম্মানের চাদর আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক; যে ব্যক্তি এ দু'টির কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করে, আমি তাকে আজাবে নিক্ষেপ করি।’ (আবু দাউদ: ৪০৯০) আল্লাহ তায়ালার হুকুম এবং তাঁর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর নির্দেশিত পথ অর্থাৎ সুন্নাহ মোতাবেক চলাই মূলত আল্লাহর পথে চলা। এর বাইরে গেলেই তখন বিভ্রাট ও বিপত্তি ঘটে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারীদের পছন্দ করেন না। যারা প্রতিপালকের ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়; বরং মহান আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান—তারাই আসলে অহঙ্কারী। তাদের তথাকথিত বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড আল্লাহ তায়ালার কাছে কোনো মূল্য নেই। আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন— আল্লাহর কালাম কুরআনুল কারিম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা মেনে জীবন যাপন করাই ইসলাম। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনকে সহজ করে দিয়েছেন। তিনি যে জগতে শ্রেষ্ঠ দয়ালু এ কথা মুমিনের অন্তরে অঙ্কন করে রাখা উচিত। আল্লাহ তায়ালার দয়ার ভাণ্ডারে কোনো কমতি নেই। এ কথা সর্বসম্মত যে, মানুষের কাছে কিছু চাইলে মানুষ বিব্রত বোধ করে আর আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইলে আল্লাহ তায়ালা যারপরনাই খুশি হয়ে যান। লক্ষণীয় যে, কুরআনে কারিমে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাকে দোয়া করার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়ার মাধ্যমে অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়। এখানে আসহাবে কাহাফের একটি বিশেষ দোয়া লিপিবদ্ধ করা হলো— আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে যে ব্যক্তি যেমন ধারণা পোষণ করে আল্লাহ তায়ালা তার সাথে তেমনি আচরণ করে থাকেন। ভুলত্রুটি গুনাহখাতা নিয়েই মানুষের জীবন। ক্রমাগত সে ছুটে চলে প্রবহমান স্রোতধারার মতো। এই প্রবল তরঙ্গের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে একমাত্র মহা স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার হাতেই। নিরাশার নিকষ অন্ধকারে আলোর দিশা দান করেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। পাপীতাপী বান্দা যখন কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে ফিরে আসে তার জন্য রাহমানুর রাহিমের রহমতের দরজা ২৪ ঘণ্টা খোলা। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা জুমার-৫৩) দুনিয়ার চলার পথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের জন্য অনেক নিয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে জীবন- মৃত্যু অন্যতম। তিনি তো অকারণে জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেননি। এ কথা তিনি কুরআনুল কারিমে নিজেই বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-'(কত) মহান সেই পুণ্যময় সত্তা, যাঁর হাতে (রয়েছে আসমান- জমিনের যাবতীয়) সার্বভৌমত্ব, (এ সৃষ্টি জগতের) সবকিছুর ওপর তিনি একক ক্ষমতাবান।' 'যিনি জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে এর দ্বারা তিনি তােমাদের যাচাই করে নিতে পারেন, কর্মক্ষেত্রে কে (এখানে) তােমাদের মধ্যে বেশি ভালো। তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি অসীম ক্ষমাশীল। (আল-মুলক : ১-২) লেখক : গবেষক, সাংবাদিক এনএ/ |