রোজা ভাঙে না যেসব কারণে
প্রকাশ:
২১ মার্চ, ২০২৪, ০১:২৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
রোজা আল্লাহর ফরজ বিধান। মানুষের শক্তি, সামর্থ্য ও সাধ্যের বাইরে ইসলামে কোনো বিধান নেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬) যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়না- ১. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোজা ভঙ্গ হবে না। তেমনি বমি কণ্ঠনালীতে এসে নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙবে না। (তিরমিজি: ১/১৫৩) ২. স্বপ্নদোষ হলে, শরীর থেকে রক্ত বের হলে, শিঙ্গা লাগালে (রক্ত দিলে) রোজা ভঙ্গ হবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিনটি বস্তু রোজা ভঙ্গ করবে না: বমি, সিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ। (ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার: ১২৯১) তবে রক্ত দিলে যদি শরীর দুর্বল হয়ে যায়, এতে রোজা মাকরূহ হবে; কিন্তু রোজা ভঙ্গ হবেনা। (বোখারি ১৯৪০) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজাদার অবস্থায় অনিচ্ছাবশত বা বাধ্য হয়ে বমি করবে, তার কাজা করতে হবে না। (আবু দাউদ: ১২৯৪) ৩. সুরমা, কাজল, সুগন্ধি ইত্যাদির দ্বারা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। আনাস ইবনু মালিক (রা.) রোজাদার অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন। (ফিকহুস সুনান: ১৩০৫) ৪. মশা, মাছি, ধুলাবালি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটে ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। ৫. ভুলে কিছু পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হবেনা। হাদিসে এসেছে, ‘যে রোজাদার ভুলে পানাহার করলো, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (মুসলিম: ১১৫৫) ৬.শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। (আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ: ৪/৩১৩) ৭. রোজা অবস্থায় অজ্ঞান, বেহুঁশ বা অচেতন হলে রোজা ভাঙবে না। (সুনানুল কুবরা: ৪/২৩৫)। ৮. রোজা অবস্থায় মিসওয়াক (কাঁচা বা পাকা ডাল যাই হোক) করলে রোজার কোন সমস্যা নেই। এমনকি ইফতারের পূর্বে করলেও অসুবিধা নেই। (বোখারি : ১/২৫৯)। ৯. নাইট্রোগ্লিসারিন-জাতীয় ইনহেলারে রোজা ভাঙবে না, তবে ভেনটোলিন ইনহেলারে রোজা ভেঙে যাবে, কারণ এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। ১০. নাকে ড্রপ, স্প্রে ব্যবহারের পর তা যদি গলার ভিতরে চলে যায়, তবে রোজা ভেঙে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙবে না। (মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিকহিল ইসলামী : ২/৪৫৪) ১১. খাবার ঠিকঠাক আছে কি না তা বোঝার জন্য ঘ্রাণ নিলে রোজা ভাঙবে না। ইবনু উসাইমীন রহ. বলেন, খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না। যদি গিলে ফেলা না হয়। (রমজান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৫) ১২. রোজা অবস্থায় নখ বা চুল কাটতে কোনো সমস্যা নেই। মেয়েরা হাতে-পায়ে মেহেদী দিলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। ১৩. সহবাস ছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলে রোজা ভাঙবে না। তবে বীর্যপাত হওয়া যাবে না। আয়েশা রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাদার অবস্থায় (স্ত্রীকে) চুমু খেতেন এবং আলিঙ্গন করতেন। তবে, নিজ আবেগ-উত্তেজনার উপর তার নিয়ন্ত্রণ ছিলো তোমাদের সবার চেয়ে বেশি। (ফিকহুস সুনান: ১২৯৫) ১৪. রাতে সহবাস করতে কোনো অসুবিধা নেই। এমনকি সহবাসের পর গোসল না করে সেহরি খেয়ে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর গোসল করলেও সমস্যা নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটি সাব্যস্ত আছে। (ফিকহুস সুনান: ১৩০৪) ১৫. গরমের কারণে, শরীর ঠাণ্ডা করতে একের অধিকবার গোসল করতেও সমস্যা নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটির প্রমাণ আছে। (আবু দাউদ: ২৩৬৫) ১৬. চোখ বা কানের ড্রপ দেয়া। ১৭. ইনহেলার বা অক্সিজেন গ্রহণ। ১৮. মিসওয়াক, টুথব্রাশ বা পেস্ট ব্যবহার অথবা দাঁত ফিলিং করা। তবে এক্ষেত্রে কোনো কিছু গিলে ফেলা পরিহার করতে হবে। ১৯. দেহের কোনো অংশে ক্যাথেটার কিংবা ক্যামেরা প্রবেশ করানো যদিওবা তা মুখ দিয়েও হয়। কেননা তা পানাহার কিংবা এর বিকল্প কিছু নয়। ২০. ক্রিম, তেল, মেকআপ, লিপস্টিক, ঠোঁট আর্দ্রকারী দ্রব্য, সুগন্ধি ব্যবহার। ২১. মুখের লালা কিংবা সর্দি গিলে ফেলা। ২২. কিছু হৃদরোগের ওষুধ/স্প্রে আছে যা জিহবার নিচে রাখা হয়, এ ধরনের ওষুধের কোনো অংশ গিলে না ফেললে তা মুখে রাখা সাওম ভঙ্গকারী নয়। ২৩. রক্ত পরীক্ষা করা। ২৪.চোখে সুরমা লাগানো। ২৫. স্বপ্নদোষ হওয়া। ২৬. দাত হতে রক্ত বাহির হওয়া। ২৭. জুনবী তথা নাপাক অবস্থায় সাহরি খাওযা। ২৮. চোখে ওষুধ লাগানো। এনএ/ |