ভোট দিয়ে মদের দোকান বন্ধ করল যে গ্রামের বাসিন্দারা
প্রকাশ: ০৪ মার্চ, ২০২৪, ১১:৪৭ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

রাজস্থানের কোটপুতলি-বেহরোর জেলার এক গ্রামের মানুষ ভোট দিয়ে স্থানীয় মদের দোকান বন্ধ করিয়েছেন। দোকানটি বন্ধ করার পক্ষে মানুষের রায় জানার পরে প্রশাসন বলেছে, আগামী অর্থবছর থেকে ওই গ্রামে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া হবে না।

প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে খুশির বন্যা বয়ে গেছে গ্রামটিতে। আবির খেলে আর নেচে-গেয়ে উৎসবে মেতেছেন বাসিন্দারা। ওই গ্রামটিতে কান্সলি নামের একশো বছরের বেশি পুরনো এক প্রাসাদ রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় যথেষ্ট সমৃদ্ধ এই গ্রামটি। এখান থেকে অনেক নামকরা ব্যবসায়ী ও আমলা উঠে এসেছেন।

মদের দোকান বন্ধের বিপক্ষে ৪টি ভোট

কোটপুতলি-বেহরোরের অতিরিক্ত জেলা কালেক্টর যোগেশ কুমার ডাগুর বলছিলেন, ‘পঞ্চায়েতের ৩ হাজার ৮৭২ জন ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ৯৩২ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৯১৯ জন ভোটার মদের দোকান বন্ধের পক্ষে ও চারজন মদের দোকান বন্ধ না করার পক্ষে ভোট দেন। নয়টি ভোট বাতিল হয়েছে।

ডাগুর বলেন, ‘কান্সলি গ্রাম পঞ্চায়েত ২০২২ সালের জুন মাসে গ্রামে মদের দোকান বন্ধ করার জন্য স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি আবেদন দিয়েছিল। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন মহকুমা কর্মকর্তা গ্রামে একটি সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেন স্থানীয় প্রশাসনকে। প্রথম সমীক্ষায় ২৪ শতাংশ মানুষ মদের দোকান বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।’

রাজ্যের আবগারি আইন অনুযায়ী, স্থানীয় ভোটারদের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি যদি মদের দোকান বন্ধের পক্ষে রায় দেন, তাহলেই সেই দোকান বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।

ওই সমীক্ষা রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে দেন আবগারি কমিশনারের কাছে। সেখান থেকে নির্দেশ আসে যে আবারও সমীক্ষা চালিয়ে ভোটদান প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তবে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনের কারণে তখন ভোটের ব্যবস্থা করা যায়নি।

অতিরিক্ত জেলা কালেক্টর জানান, ২৬শে ফেব্রুয়ারির ভোটে নারীদের অংশগ্রহণ যথেষ্ট বেশি ছিল। ভোটাভুটির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবগারি কমিশনারকে জানানো হয় এবং সেখান থেকে মদের দোকান বন্ধের নির্দেশিকা জারি হয়।

কান্সলিতে গত ছয় বছর ধরে মদের দোকান বন্ধ করার চেষ্টা চলছিল। তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান বিকাশ নায়েক বলেন, ‘২০১৬ সালে মানুষ মদের দোকানের বাইরে অনশন ও লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।’

এখন গ্রামবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ওই দোকানে সারারাত মদ পাওয়া যায়। গ্রামেই মদ এত সহজলভ্য হওয়ার কারণে মানুষ মদে আসক্ত হয়ে পড়েছিল।

ওই মদের দোকানের মালিক বিক্রম গুর্জর বলছিলে, ‘গ্রামবাসীরা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানাই। আমি মদের ব্যবসা করি, তবে সবাইকে কোনো ধরনের নেশা না করতে পরামর্শও দিই।’

মদের দোকানটি ছিল সরকারি স্কুল পেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছে। দোকান থেকে একটু সামনে গেলেই মোহনপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের আরেকটি সরকারি স্কুল।

একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার বলছিলেন, ‘আমরা মদ নিষিদ্ধ করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। স্কুলের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে কান্সলি থেকে আসে। আমাদের স্কুল থেকে ১০০ মিটার দূরেই মদের দোকানটি আছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার সময়ে একজন শিক্ষক বাইরে দাঁড়িয়ে নজর রাখেন যাতে ওদের কেউ বিরক্ত না করে।’ তথ্যসূত্র-বিবিসি

হাআমা/