তালাক দেওয়ায় স্ত্রীসহ নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৫:৪৭ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

নরসিংদীর রায়পুরায় তালাক দেওয়ার জের ধরে স্ত্রীসহ নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেন এক ব্যক্তি। পরে তাঁদের উদ্ধার করে নারীকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। ওই নারীর শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের ব্রাহ্মণেরটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ দুজন হলেন- গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বেলাশী এলাকার আতাউর আলীর ছেলে খলিলুর রহমান (৪০) ও তাঁর সাবেক স্ত্রী উপজেলার মরজাল ব্রাহ্মণেরটেক এলাকার মৃত মফিজুর রহমানের মেয়ে লতা আক্তার (২৭)। ওই নারী পেশায় একজন চিকিৎসক।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, লতা শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই বছর আগে নিজের পছন্দে খলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর চিকিৎসক লতা জানতে পারেন খলিল পেশায় একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। বিষয়টি লতা ও তার পরিবার স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি।

পরে প্রতারণা করে বিয়ের অভিযোগে স্বামীকে তালাক দেন লতা। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রবিবার দুপুরে লতার বাড়ি এসে রুমে ঢুকে দরজা-জানালা বন্ধ করে নিজের শরীরের পেট্রোল ঢেলে আগুন দেন খলিল। ওই অবস্থায় সাবেক স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। এতে লতার পুরো শরীর ঝলসে যায়। পরে চিৎকার শুনে লতার পরিবার ও প্রতিবেশীরা দরজা ও জানালা ভেঙে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সেখান থেকে সন্ধ্যায় লতাকে তার স্বজনা ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান। এদিকে পুলিশ ও স্থানীয়রা দগ্ধ খলিলকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতাল পাঠায়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকেও ঢাকায় রেফার্ড করেন।

শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম জানান, লতার শরীরে ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বর্তমানে তাকে জরুরি বিভাগে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজন।

তবে দগ্ধ খলিল এখন কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এ ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক ডা. মোহাম্মদ কবির বাশার কমল জানান, লতা ও খলিল নামে দগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসেনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায় সাবেক স্ত্রী লতার বাড়ির উঠানে দগ্ধ শরীর নিয়ে শুইয়ে আছেন খলিল। তাকে বলতে শোনা যায়, মৃত্যুর পর যেন লতার সঙ্গে তাঁর কবর দেওয়া হয়। এ সময় কালিমা পাঠ করেন এবং তাঁর বাবা ফোন নম্বর দেন স্থানীয়দের দেন তিনি। এদিকে খলিলের দেওয়া তাঁর বাবার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

মরজাল ইউপি সংরক্ষিত নারী সদস্য রেহেনা বেগম জানান, দুই মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানতে পারি চিকিৎসক লতার বিয়ে হয়েছে খলিল নামে ব্যক্তির সঙ্গে। এরপর তাদের মধ্যে ডির্ভোস হয়ে যায়।

তিনি জানান, মূলত স্ত্রী পক্ষ থেকে ডির্ভোস দেওয়ায় নিজের শরীরে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি স্ত্রীকেও সেই আগুনে পুড়ান সাবেক স্বামী খলিল।

এ ব্যাপারে জানতে দগ্ধ লতার বাড়িয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্বজনরা সবাই আহত লতার সঙ্গে হাসপাতালে আছেন বলে জানান প্রতিবেশীরা।

রায়পুরা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন জানান, ওই নারী চিকিৎসক ও তাঁর সাবেক স্বামীর শরীর আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। পরে তাদের উদ্ধার নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে দগ্ধ নারী চিকিৎসককে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

হাআমা/