মুত্তাকিরাই আল্লাহর বন্ধু
প্রকাশ:
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১০:০২ রাত
নিউজ ডেস্ক |
|| নাজমুল হুদা মজনু || বন্ধুত্ব কামনা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সুখে-দুখে সবাই বন্ধু খোঁজে আর আল্লাহ তায়ালাই মু'মিন-মুত্তাকিদের প্রকৃত বন্ধু। আল্লাহ তায়ালা কেবল মু'মিনদের ভালোবেসে ক্ষান্ত নন; তার প্রিয় বান্দাদের দুনিয়া ও আখেরাতে বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি-পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন।' (হুজুরাত-১৩) আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমিনে কায়েম করার লক্ষ্যে মুত্তাকিরাই অগ্রগামী। মুসলমানদের মধ্যে সংহতি হচ্ছে বিজয়ের সোপান; তাই ঐক্যের বিকল্প নেই। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, 'পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মু'মিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একটি অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে।' (বুখারি ও মুসলিম)। মুসলমানের বিজয়ের পূর্বশর্ত হচ্ছে নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সাম্য। কিন্তু মানুষের প্রকাশ্য শত্রু ইবলিস সতত সচেষ্ট এই ঐক্য ভাঙার প্রয়াসে। তাই নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষায় আল্লাহ তায়ালা পথ বাতলে দিয়েছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন ব্যক্তির হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকে ও সে (নিজে) নেক কাজ করে এবং বলে আমি তো মুসলমানদের একজন।' '(হে নবী) ভালো আর মন্দ কখনোই সমান হতে পারে না; তুমি ভালো (কাজ) দিয়ে মন্দকে প্রতিহত করো, তাহলে (তুমি দেখতে পাবে) তোমার এবং যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল তার মাঝে এমন (অবস্থা সৃষ্টি) হয়ে যাবে যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।' 'আর এ (বিষয়টি) শুধু তাদের (ভাগ্যেই লেখা) থাকে যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং (এসব) লোক শুধু তারাই হয় যারা সৌভাগ্যের অধিকারী।' (ফুসসিলাত-৩৩, ৩৪, ৩৫) সমাজের নানা অসঙ্গতি ও জালেমের জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ মু'মিনদের সান্ত্বনা ও সাহস জোগান স্বয়ং রাহমানির রাহিম আল্লাহ তায়ালা। কুরআনুল কারিমে তিনি বলেন, 'আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মু'মিন হও তবে তোমরাই বিজয়ী হবে। (আলে-ইমরান-১৩৯) হাজারো নেক আমলের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা এমন একটি বিধান বান্দাদেরকে দিয়েছেন, যার পুরস্কার অতি মূল্যবান আর তা হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সা.- কে জিজ্ঞেস করলাম, 'হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ কাজ সর্বোত্তম?' তিনি বললেন, 'সময় মতো সালাত আদায় করা।' আমি বললাম, 'অতঃপর কোন্টি?' তিনি বললেন, 'অতঃপর পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা।' আমি বললাম, 'অতঃপর কোন্টি?' তিনি বললেন, 'আল্লাহর পথে জিহাদ।' (বুখারি-২৭৮২) যারা দুনিয়ার কোনো কিছুকে ভয় না করে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তায়ালা সেসব মুত্তাকির উদ্দেশে বলেছেন, 'জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (তারা হচ্ছে ওই সব ব্যক্তি) যারা ঈমান আনয়ন করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে।' (ইউনুস-৬২, ৬৩) দুনিয়ার জমিনে কষ্টসহিষ্ণু মু'মিনের জীবন; ফলে এর বিপরীতে রয়েছে রাহমানির রাহিমের তরফ থেকে মহা পুরস্কার। কুরআনে হাকিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'নিশ্চয় আল্লাহ খরিদ করে নিয়েছেন মু'মিনদের থেকে তাদের জান ও তাদের মাল; এর বিনিময় এই যে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, কখনো হত্যা করে এবং কখনো নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আল্লাহর চেয়ে নিজের ওয়াদা অধিক পালনকারী আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আনন্দ করো তোমাদের সে সওদার জন্য, যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ। আর তা হলো বিরাট সাফল্য। (আত-তাওবাহ-১১১) মনে রাখতে হবে, বিজয়ের পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ নয়। আল্লাহর রাস্তায় জানমাল ব্যয় না করে কখনো কামিয়াবি অর্জন করা সম্ভব নয়। সিরাতুল মুস্তাকিম হাসিল করতে হলে শুধু ঘাম ঝরানোই নয়, জিহাদের ময়দানে তপ্ত রক্তও দিতে হয়। তাই তো মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে আহ্বান জানিয়েছেন- 'ওহে যারা ঈমান এনেছ? আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দেবো না, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে? তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি এবং জিহাদ করবে আল্লাহর পথে তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়েও। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন তোমাদের গুনাহখাতা এবং দাখিল করবেন জান্নাতে, প্রবাহিত হতে থাকবে যার পাদদেশে নহরগুলো এবং এমন মনোরম গৃহ যা রয়েছে অনন্তকাল জীবন যাপনের জন্য। এটাই মহা সাফল্য।' (আস সফ-১০-১২) আল্লাহর রাস্তায় চলতে গিয়ে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়; কিন্তু মু'মিন কখনো হতাশ হয় না। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কামনায় তারা তাঁর ওপরেই ভরসা করে সামনে এগিয়ে চলে। আনাস ইবনু মালিক রা: থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকেল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম। (বুখারি-২৭৯২) অবশ্য যে ব্যক্তি (আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত) প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলে এবং (সে ব্যাপারে) সাবধানতা অবলম্বন করে, (তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে) আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকি লোকদের খুব ভালোবাসেন। (আলে-ইমরান : ৭৬) লেখক : সাংবাদিক এনএ/ |