মাদরাসার আবাসন ব্যবস্থার উন্নতি চান মুহতামিমরা
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৮:৩৮ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

ইসলামি শিক্ষার আবাসন ব্যবস্থাপনার তথ্য পাওয়া যায় মদীনায় হিজরতের প্রথম লগ্নেই। হিজরি সনের প্রথম বছরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. আনসার ও মুহাজিরদের সহযোগিতায় মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মসজিদের সঙ্গে পৃথক দুটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটিকে মহানবী সা. আবাসগৃহ হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর অন্যটি ইসলামি শিক্ষার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন। যা ‘মাদরাসা-ই-সুফফা’ নামে পরিচিতি পায় পরবর্তীতে।
 
তেমনই ইতিহাস টেনে মাদারীপুর-শিবচর জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নিয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদী জানান, ‘কওমি মাদরাসার ব্যবস্থাপনা তো সুফ্ফা থেকে সূচনা লাভ করে। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে শুরু করে বড় বড় মুহাদ্দিস যারা তৈরি হয়েছেন, তাঁদের ওখানে আবাসন ব্যবস্থাপনারও তেমন প্রয়োজন ছিল না, আবার তাঁদের পানাহারের ব্যবস্থাও ছিল না। প্রাথমিক অবস্থায় এরকম নাজুক ছিল। পরবর্তীতে আল্লাহ পাক যখন ওসাআত দিয়েছেন মাদরাসায়ে নিজামিয়ায়, তখন আবাসন ব্যবস্থাপনা হয়েছে। 

এখন আমাদের এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ পূর্ববর্তী সময়ে ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল আদর্শ ও স্বয়ংসম্পন্ন। আর ব্রিটিশ পরবর্তী বর্তমান সময়টা হলো একটা দুর্যোগময় মুহূর্ত। এখন একটা প্রতিষ্ঠান করে ছাত্র-শিক্ষক সকলকে আবাসন ব্যবস্থাপনার ধকল পোহাতে হয়।- যুক্ত করেন তিনি। 

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য প্রচলিত যেসব জেনারেল শিক্ষাধারা রয়েছে, তাদের জন্য সরকারি হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। সেখানে আবাসন থাকার ব্যবস্থা আলাদা, ক্লাস আলাদা- এরকম কওমি কিংবা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো করতে পারলে তো খুবই ভালো হত। কিন্তু সে সামর্থের পর্যায়ে আমরা পৌঁছেছি কি!

তিনি বলেন, ‘ইসলামি শিক্ষা তো সমস্ত মুসলিম জাতির ওপর ফরজ। এর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে।’

‘বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা আছে, তার পরিবেশগত উন্নয়ন আরো কিভাবে করা যায়, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবশে বজায় রাখা যায় এর জন্য চেষ্টা রাখতে হবে। সে সঙ্গে একটি কামরায় কত জন ছাত্র রাখা যায়, সে অনুপাতে ছাত্র ভর্তি নেওয়া।’- মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।  

মিরপুর-১৪ জামেউল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল বাশার নো’মানী বলেন, ‘হিন্দুস্তান-পাকিস্তানে কওমি মাদরাসার আবাসন ব্যবস্থাপনার জন্য যে ওসায়াত-প্রশস্ততা রয়েছে, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার আবাসন ব্যবস্থাপনার জন্য তেমন সুযোগ এখনো দেখছি না। এসব নিয়ে কেউ আজো ভাবছে কি!’

আবাসন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘাটতির জন্য আর্থিক সংকটকেই বড় করে দেখছেন তিনি। 

এদিকে নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড এর পরিচালক মাওলানা ইসমাঈল বেলায়েত হুসাইন বলেন, ‘মাদরাসায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পড়াশোনার পরিবেশ গড়তে সচেতনতামূলক উদ্যোগকে জরুরি মনে করছি। জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনতা অনেক জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘নূরানী, হিফজ ও কিতাব বিভাগসহ সকল মাদরাসায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে বোর্ডিং ঘর, টয়লেট, গোসলখানা, অজুর ব্যবস্থাপনা, মাদরাসার রুম, বারান্দা পরিস্কার-পরিপাটি রাখা। দৃষ্টিনন্দন করতে ফুল গাছ লাগানো যেতে পারে।’

তিনি তথ্য দেন, ‘আমরা একটি পরিবেশ বান্ধব মাদরাসা ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সরেজমিনে জরিপের মাধ্যমে মনোনীত সেরা ১০টি পরিবেশ বান্ধব মাদরাসাকে পুরস্কার, পদক ও সার্টিফিকেট প্রদান করবো, ইনশাআল্লাহ।

কেএল/