ঈমান শেখার জন্য আমরা এই ময়দানে এসেছি
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৪:৪৮ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

শায়েখ ওমর খতিব, জর্ডান

শুক্রবার বাদ জুমার বয়ান -
আল্লাহ তায়ালা একমাত্র বানানেওয়ালা। তিনি সব সৃষ্টি করেছেন কারও মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া। তার কোনো শরিক নেই। সম্ভব জিনিসও তার মুহতাজ আর অসম্ভব জিনিসও তার মুহতাজ। এই দুনিয়ার সবকিছু এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি একমাত্র স্রষ্টা। পৃথিবীর সবকিছু তাঁর সৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ কোনোকিছু করতে চাইলে মাধ্যম দিয়েও করতে পারেন, আবার মাধ্যম ছাড়াও করতে পারেন। আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামকে বাবা ছাড়া জিবরাইল আলাইহিস সালামের ফুঁকে বানিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা খালেক হওয়ার পাশাপাশি মালেক। তার কাছে সব মালিকানা। তিনি রাজিক। তিনি রিজিকদাতা। তিনি চাইলে মাধ্যম দিয়ে রিজিক দিতে পারেন আবার চাইলে মাধ্যম ছাড়াও রিজিক দিতে পারেন। তিনি মারিয়াম আলাইহিস সালামকে শীতের সময় গরমের ফল, গরমের সময় শীতের ফল দিয়েছেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের কোনো রিজিক ছাড়াই পরিচালিত করেন। ফেরেশতারা কেমন বড়? তাদের একজন হলেন হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম। তার রয়েছে ৬০০ ডানা। দুটি ডানা প্রসারিত করলে জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বেষ্টন করে ফেলে। কাউমে লুতকে ডানার অগ্রভাগ দিয়ে উপরে নিয়ে জমিনে উল্টে ফেলেছেন। তাদের আরেকজন হলেন ইসরাফিল আলাইহিস সালাম। তার এক ফুৎকারে আসমান-জমিন, চাঁদ-সুরুজ, গ্রহ-তারা, পাহাড় পর্বত সব তছনছ হয়ে যাবে। আল্লাহ কোনো আসবাবের মুহতাজ নন বরং আসবাব তার উদ্দেশ্য পূরণে আল্লাহর মুহতাজ। এজন্য আল্লাহকে দিলে প্রবেশ করাতে হবে আর দিল থেকে আল্লাহ ছাড়া সবকিছুর (শিরকি) প্রভাব দূর করতে হবে।

ওহ দোস্ত!
আল্লাহকে পাওয়ার মাধ্যম হলেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাকে পাওয়ার জন্য তার সিরাত (আদর্শ), ছুরত (আকৃতি) ও সারিরাত (অন্তর্গত) বিষয় গ্রহণ করতে হবে। তার মেহনতকে নিজের মেহনত বানাতে হবে। বিদায় হজের সময় সাহাবাদের সংখ্যা ছিল এক লক্ষাধিক। কিন্তু মক্কা-মদিনায় মাত্র ১০/১৫ হাজার সাহাবার কবর পাওয়া যায়। সাহাবায়ে কেরাম রাসুলের দাওয়াতি মেহনত নিয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন। আমরা নিয়ত করি এই মেহনতকে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানাবো।

মেরে ভাই! 
এতদূর থেকে এতো কষ্ট করে আমরা এসেছি। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা এসেছি। পাগল উদ্দেশ্য ছাড়া চলে। আমরা পাগল না বাচ্চাও না। তাহলে আমাদের উদ্দেশ্য কী? আমাদের উদ্দেশ্য হলো দীনের জন্য মেহনত করা। সমস্ত মানুষ যেন দীন পেয়ে যায়। কারণ সবাই সফল হতে চায়। 
সফল হওয়ার অর্থ হলো যা ইচ্ছা তা পূর্ণ হওয়া। একজন ছাত্র পরীক্ষা দেয় তার উদ্দেশ্যে হলো পাস করা। একজন ব্যবসায়ী ব্যবসা করে তার উদ্দেশ্য হলো টাকা কামাই করা। এভাবে মানুষ যে যা চায় তা পাওয়াই তার সফলতা। সফলতা দুই প্রকার; ১. দুনিয়ার সফলতা ২. আখেরাতের সফলতা।
দুনিয়ার সফলতা কখনও পূরণ হয়, কখনও হয় না। হলেও লাভ, না হলেও লাভ। আমরা দুনিয়াতেও সফল হতে পারি, আখেরাতেও সফল হতে পারি। আসলে দুনিয়ার সফলতার মধ্যে কোনো সফলতা নেই। বলুন তো! একজন মানুষ দুনিয়াতে অনেকগুলো সফলতা অর্জন করে মারা গেল। তো কী হলো! কিছুই হলো না। দুনিয়ার কোনো সফলতাকে যে সফলতা মনে করে সে আসলে বোকার স্বর্গে, ধোঁকার স্বর্গে বাস করে। আসল সফলতা হলো দীন মানার মধ্যে। দীনকে আল্লাহ কামিয়াবির জন্য দিয়েছেন। দীন মানার নাম কামিয়াবি। যে ধোঁকার মধ্যে থাকে সে সফল হতে পারে না। আগে ধোঁকা বের করতে হবে। ধোঁকা বের করার দোয়া হলো লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

মেরে ভাই, দোস্ত ও বুজুর্গ! 
দীন মানার অর্থ হলো ঈমান আনা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানা। এই দুই কাজ করতে পারলে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি ও সফলতা আসবে। দুনিয়ার সবকিছু আমার বাধ্য হবে। বাঘ, সিংহ আমার বাধ্য হবে। আল্লাহ তায়ালা নায-নেয়ামতের জান্নাত দেবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, জান্নাতে তোমরা যা ইচ্ছা সব পাবে। জান্নাত পেতে হলে ঈমান ঠিক করতে হবে। আর ঈমান শেখার জন্যই আমরা এই ময়দানে এসেছি। আল্লাহ আমাদের ঈমান শিখে এই ময়দান থেকে বের করুন। দীনের জন্য কবুল করুন।

শ্রুতিলিখন: আল-আমীন বিন সিরাজুল হক

কেএল/