দুনিয়ার ধোঁকা থেকে মুক্তি পেতে তাবলিগে সময় লাগাতে হবে
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৪:৪৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের
আহলে শূরা, কাকরাইল

শুক্রবার বাদ আসরের বয়ান-
আসরের পরের সময়টা অনেক কম। এ সময়টা অনেক কিমতি-দামি। আমাদের জীবনের হায়াতটাও এমনই। আমাদের হায়াতের প্রতিটা সময়কে কাজে লাগাতে হবে। আজ আমরা নিজেদের ঘর-বাড়ি থেকে এখানে এসেছি নিশ্চয়ই কোনো একটা উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য ছাড়া মুমিন চলতে পারে না। পাগলের কোনো উদ্দেশ্য নেই। ছোট বাচ্চার কোনো উদ্দেশ্য নেই। তো ভাই! আমাদের উদ্দেশ্য কী? আমাদের উদ্দেশ্য হলো- দীনের জন্য মেহনত করা। আমাদের জিন্দেগিতে যেন দীন আসে এবং সমস্ত মুসলমান, পুরো আলমের মানুষ যেন দীন পেয়ে যায়। দুনিয়ার মানুষ কামিয়াব হতে চায়। সফলতা পেতে চায়। ব্যর্থ জিন্দেগি কেউ চায় না। 
সফল জিন্দেগি কাকে বলে? যা ইচ্ছে করে তাই পায়। একজন ব্যবসায়ী সে তার টাকা খাটায়ে লাভ-সফল পেতে চায়। এমনিভাবে নানা মানুষ নানা কাজে সফল হত চায়। এই সফলতা হলো দুই রকমের। এক- দুনিয়ার সফলতা। দুই- আখেরাতে মউতের পরের সফলতা জান্নাতের মধ্যে। দুনিয়ার সফলতা মানুষের কখনও হয় আবার কখনও হয় না। দুনিয়ার সব ইচ্ছা মানুষের পূরণ হয় না। কিন্তু আখেরাতের সফলতা পেলে মানুষ যা ইচ্ছা করবে তাই পাবে।

মেরে মুহতারাম ভাই!
দুনিয়ার সফলতা পেতে আজ আমরা কত রকমের কষ্ট করছি। কত মানুষকে খুশি করতে আমরা রাত-দিন মেহনত করছি। ঘাম ঝরাচ্ছি। বিবির জন্য কষ্ট করলেন, দেখা গেল মারা গেলে সেই বিবিই আপনাকে ঘর থেকে বের করে দিলো। সন্তান আপনার লাশ রাখবে না ঘরে। যত বড় লোক হোন না কেন, মাল-দৌলতের অধিকারী হন না কেন, কোনো কিছুই আপনার উপকারে আসবে না। সবাই আপনাকে সাদা কাফনে মুড়িয়ে বিদায় দিয়ে আসবে। কিন্তু আপনার সঙ্গে থাকবে শুধু আপনার আমল। সেই আমলেই আপনার প্রকৃত সফলতা আর অসফলতার মুখ দেখাবে।

মেরে ভাই!
মউতের পরের জীবনই আসল জীবন। সে জীবনের সফলতাই প্রকৃত সফলতা। দুনিয়ার কোনো কিছুতেই সফলতা নেই। টাকার মধ্যে নাই, ব্যবসার মধ্যে নাই। অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়েও মনে খালি হাতে কবরে যায়, তাহলে সে কি সফলতা অর্জন করলো! যে টাকাকে সফলতা মনে করে, সে বোকার স্বর্গে বস করছে। টাকা যার কাছে গেছে, তার কাছে থাকে নাই। দুনিয়াতে কত প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিল। ফেরাউন ছিল। নমরুদের মতো কত পালোয়ান ছিল। কেউই তার সম্পদ ইত্যাদি কিছুই নিয়ে যেতে পারে নাই।  

মেরে দোস্ত ও বুজুর্গ!
সফলতা তাহলে কোথায়? সফলতা হলো আল্লাহ তায়ালা আমাদের যে দীন দিয়েছেন, সে দীন পালনের মধ্যেই সফলতা। সে দীন জিন্দেগিতে আনতে হবে। যদি তুমি দীন জিন্দেগিতে আনো, তাহলে তোমার বোকামি খতম হবে। ধোঁকা খতম হবে। তুমি তো এখানে ধোঁকা খাচ্ছো। তুমি টাকাকে বন্ধু মনে করছো। সেই টাকা মউতের পরে কোনো কাজে আসবে না। অথচ সেই টাকা পেলে কেউ কেউ চুমুও খায়। টাকা সাথে তার কী খাতির! কিন্তু এই টাকা তার সঙ্গে থাকতে পারে! দীন ছেড়ে আমরা টাকার মধ্যে ডুবে আছি! ধোঁকার মধ্যে আছি। সেই ধোঁকা কাটাতে আমাদের তাবলিগে সময় লাগাতে হবে। দ্বীনের মেহনত করতে হবে। কালেমার কাজ করতে হবে। কালেমার কাজ কেউ করলে সে সফল হয়ে যাবে। ‘কু-লু লা ইলাহা ইল্লাহ তুফলিহুন’। টাকার ধোঁকা, পদের ধোঁকা, ব্যবসার ধোঁকা সব ধোঁকা দূর হয়ে যাবে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার দ্বারা। এর আমল করার দ্বারা।

আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নাইÑ এই বিশ^াস রাখতে হবে। এই টাকা! তুমি আমার কোনো উপকার করতে পারবে না। এই ব্যবসা! তুমি আমার উপকারে আসবে না। এই ধারণা তৈরি হবে কালেমার কাজ করার দ্বারা। দুনিয়ার প্রত্যেকটা ছামান আপনাকে ধোঁকার দিকে ডাকছে। টাকা বলে আসো- আমারে নেও। ব্যবসা বলে আমারে নেও। এজন্য, বাজারে গিয়ে কেউ জোরে আওয়াজে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়লে তার অঢেল সওয়াব হবে।

মুহতারাম দোস্ত ও ভাই!
সাত আসমান, সাত জমিন আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এই সাত আসমান ও সাত জমিনে আল্লাহর হুকুম নাজিল করছেন। সবাই তার হুকুম পালন করছেন। আমরা দেখি বাতাসে ধূলিকণা উড়ে আমাদের গায়ে পড়তে, এই ধূলিকণা নিজের ইচ্ছায় আমার গায়ে পড়েনি, সে আল্লাহর ইচ্ছায় পড়েছে। ধূলিকণাকে আল্লাহ যেখানে পড়ার হুকুম করেন, সে সেখানেই পড়বে। অন্য কোথাও না। প্রতিটা বৃক্ষ, পাতা, লতাপাতা সব আল্লাহর হুকুম মতো চলছে। জলে-স্থলে যা কিছু আছে, সব আল্লাহর হুকুমে চলে। প্রতিটা প্রাণী, জীবজন্তু সবাই আল্লাহর হুকুমের গোলামি করে। আমরা আশরাফুল মাখলুকাত কেন আল্লাহর গোলামি করব না! শয়তান আমাদের এ ব্যাপারে বাধা দেয়। দুনিয়ার ধোঁকায় পড়তে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়। এজন্য, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আল্লাহ আমাদের কালেমা দিয়েছেন। কুরআন দিয়েছেন। দীন দিয়েছেন। এই দীনের মেহনত আমাদের জিন্দেগিতে আনতে হবে। তাহলে আমরা ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারবো। প্রকৃত সফলতার মুখ দেখতে পাবো। 

শ্রুতিলিখন : হাসান আল মাহমুদ  

কেএল/