দীন ছাড়া জীবনের কোনো মূল্য নেই : মাওলানা ইবরাহিম দেওলা
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৪:৩৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, ভারত||

বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব বয়ান-
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অত্যন্ত দয়া করে দীন দিয়েছেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য যেভাবে নেয়ামত তেমনি কিন্তু মহান দায়িত্ব। আল্লাহর কাছে দীন ছাড়া অন্য কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, দীন ছাড়া আখেরাতে কোনো বদলা দেওয়া হবে না। তাই আল্লাহর কাছে কবুলের জন্য দীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম ছাড়া অন্য দীন নিয়ে যে আল্লাহর কাছে যাবে সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ!
আমাদের এই দাওয়াতি মেহনতের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো দীনকে আমাদের জিন্দেগিতে নিয়ে আসা। জিন্দেগির প্রতিটি শো’বাতে দীন প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা ব্যবসা করবো কিন্তু তার মাঝে দীন থাকবে। আমাদের চলাফেরা, আচার-আচারণ, ব্যক্তিজীবন, দেশ পরিচালনা সবকিছুতে দীন থাকবে। ওষুধ যখন একজন মানুষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে তখন তা পুরো অঙ্গে মিশে উপকারিতা দিতে থাকে। তেমনি দীন যদি আমাদের ভেতরে প্রবেশ করে তখন তখন এটা আমাদের জিন্দেগিকে ফায়দামন্দ করে দেবে।

মেরে দোস্ত!
হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে পানির সঙ্গে তুলনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি যে দীন নিয়ে এসেছি এটি হলো পানি বহন করা মেঘমালার মতো।’ এই জমিনে যত মাখলুক আছে তাদের জীবিত থাকার জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি ছাড়া যেমন কোনো মাখলুকের জীবনের দাম নেই তেমনি দীন ছাড়া কোনো মানুষের জীবনের দাম নেই। আমাদের জিন্দেগিতে যদি দীন চলে আসে তখন এর সঙ্গে আমাদের জন্য আল্লাহর কুদরত যুক্ত হবে। আর তখন আমরা শক্তিশালী হয়ে যাবো। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমাদের যা শক্তি তা একেবারেই দুর্বল। আল্লাহ নিজ কুদরত তোমাদের সঙ্গে দিয়ে তোমাদের শক্তিশালী করে দেবেন। আর এই কুদরত নিজেদের সঙ্গে নেওয়ার একমাত্র পদ্ধতি হলো দীনকে সঙ্গে নেওয়া। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি হতে পারবো। কামিয়াবির আর কোনো রাস্তা নেই, পন্থা নেই।

মেরে ভাই দোস্ত!
এই দুনিয়ায় আল্লাহ আমাদের অনেক নেয়ামত দান করেছেন। আমাদের চারপাশে যা আছে সবকিছুই আল্লাহর দেওয়া। সবই আল্লাহ আমাদের কল্যাণের তৈরি করেছেন। তাই বলা যায়, এসবই আমাদের জন্য নেয়ামত। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলে দীন। আর এই দীন আল্লাহ নির্দিষ্ট কোনো মানুষের জন্য পাঠাননি। এই দীন সবার জন্য। সব ধরনের মানুষের কামিয়াবির জন্য আল্লাহ দীন দিয়েছেন। এর মধ্যেই সবার কামিয়াবি। কামিয়াবির অর্থ কী? কামিয়াবি হলো আমরা মনে মনে যা আকাক্সক্ষা করি তা হাসিল করা। আমরা সবাই মনে মনে আকাক্সক্ষা করি মওতের পর জান্নাত হাসিলের। তা হাসিল করাই কিন্তু কামিয়াব। কিন্তু তা কীভাবে হাসিল করবো? এরজন্য কিন্তু একমাত্র উপায় হলো দীন। আমরা যখন দীন মানবো দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানেই সফলতা আসা শুরু হবে। দুনিয়ার কামিয়াবিও কিন্তু আমাদের দরকার। কেননা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের দুনিয়ার অধিকারও ভুল না, আখেরাতের অধিকার সম্পর্কেও উদাসীন হয়ো না।

মেরে দোস্ত!
দুনিয়ার কোনো ব্যবসায়ী যখন ব্যবসা শুরু করে তখন সে মুনাফা করতে শুরু করে। ব্যবসায়ী জিন্দেগির একটা সময় গিয়ে সে বুঝতে পারে, হায় আমি যদি আরও বেশি চেষ্টা করতাম তাহলে তো আরও মুনাফা করতে পারতাম। তখন সে পূর্বের জন্য আফসোস করে। এমনিভাবে দুনিয়ার সব মানুষ মওতের সময় আফসোস করবে। বদকারও আফসোস করবে। নেককারও আফসোস করবে। বদকার আফসোস করবে তার জীবনে করা বদ আমলের জন্য। কিন্তু তার তখন কিছুই করার থাকবে না। সাহাবায়ে কেরাম জনাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল বদকার আফসোস করবে বুঝলাম। কিন্তু নেককার আফসোস করবে কেন? মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে আফসোস করে বলবে, হায় আমি তো চাইলে আরও বেশি নেকি হাসিল করতে পারতাম। তাহলে তো আরও বেশি কামিয়াবি হতাম।’ তাই আমাদের এই দুনিয়া থেকেই আখেরাত গুছিয়ে নিতে হবে। আখেরাতের কামিয়াবি দুনিয়ার ওপরই নির্ভর করছে। এখান থেকেই পরকাল তৈরি করতে হবে।

আরেকটা বিষয় হলো, নিজের পরকাল জীবনের সম্বল হাসিলের পাশাপাশি ভাই-বেরাদর, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের আখেরাত গোছানোর ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। শুধু নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচলে হবে না। অন্য ভাইকেও বাঁচাতে হবে। আল্লাহ বলেন, জাহান্নাম থেকে নিজে বাঁচো অপর ভাইকে বাঁচাও। প্রথমে নিজে বাঁচবো। এরপর অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করবো। নিজে দীন মানবো। অন্য ভাইয়ের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেবো।

মুহতারাম দোস্ত বুযুর্গ!
যেদিন মওত আসবে সেদিন মানুষের দৃষ্টি প্রখর হয়ে যাবে। তার চামড়ার চোখ বন্ধ হলেও সে তার আখেরাতের লাভ-লোকসান সব দেখতে পাবে। যেমন একজন ঘুমন্ত লোক চোখ বন্ধ হলেও অনেক কিছুই দেখতে পায়। মওতের সময় মানুষ ভাববে, হায় আমি যদি ওই আমলটা করতাম তাহলে সেই কামিয়াবি পাইতাম। এভাবে আখেরাতের লাভ-লোকসান দেখে আফসোস করবে।

মুহতারাম ভাই ও দোস্ত!
আল্লাহ নবী পাঠিয়ে আমাদের দীন দিয়েছেন। এহসান করেছেন। এই এহসানের কথা তিনি কুরআনেও বলেছেন। আল্লাহর এই এহসান যারা ঈমানদার তারা গ্রহণ করেছেন। যারা এটাকে গ্রহণ করেনি তারা দুনিয়ায়ও ক্ষতিগ্রস্ত আখেরাতেও ক্ষতিগ্রস্ত।

আল্লাহ আমাদের যে দীন দিয়েছেন তা হলো দুইটি জিনিসের নাম। একটি হলো ঈমান। আরেকটি হলো ইলম। ঈমান তো কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। আর ইলম হলো আল্লাহ তায়ালা হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যা নাজিল করেছেন। ঈমান দ্বারা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম হবে। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্যেই তিনি ঈমান দিয়েছেন। ঈমানের দাবি হলো ইবাদত। আর আল্লাহর এতায়াতের নামই হলো ইবাদত। তাই ঈমান হলো, আল্লাহর হুকুমে চলবো। আল্লাহর এতায়াত করবো। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করবো।

আল্লাহ তায়ালা জিন ও ইনসানকে ইবাদতের হুকুম দিয়েছেন। আল্লাহর সঙ্গে তায়াল্লুকের কথা বলেছেন। তায়াল্লুক করতে হবে ইবাদতের মাধ্যমে। ইবাদত কী? তা কিন্তু আগে জানতে হবে। তা জানার জন্য রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যে ইলম নাজিল করা হয়েছে তা জানতে হবে। যাকে ইলম বলা হয়। ইলম এবং ইমান যখন একসঙ্গে হবে তখনই দীন আসবে। জীবনে আল্লাহর এতায়াত আসবে। আল্লাহ যা বলেছেন তার এতায়াত করা, মেনে নেওয়ার নামই হলো ইবাদত। এই যে ময়দানে এখন বৃষ্টি হচ্ছে সবই কিন্তু আল্লাহর হুকুম। এসবই তাকদিরে তিনি লিখে দিয়েছেন। যে আল্লাহর দেওয়া তাকদিরে রাজি হবে, আল্লাহ তার ওপর রাজি হয়ে যাবেন। তাকদিরে যা আছে তা আমাদের জীবনে আসবেই। কেননা তা দুনিয়া সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে লেখা। সব সেই মোতাবেক হবেই। আমরা যদি একে খোশদিলে মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি, আল্লাহ যে পরিস্থিতে রাখেন তার ওপর খুশি থাকি আল্লাহ আমাদের ওপর খুশি হয়ে যাবেন। তার সঙ্গে আমাদের তায়াল্লুক ঠিক হয়ে যাবে। আর যার তায়াল্লুক আল্লাহর সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহ সব মাখলুকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঠিক করে দেবেন।

শ্রুতিলিখন ও ভাষান্তর:  কাউসার লাবীব

কেএল/