যে সুরা তেলাওয়াত না করে নবী করিম সা. ঘুমাতেন না
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারী, ২০২৪, ০২:৫৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| ওলিউল্লাহ তাহসিন ||

আল্লাহ তায়ালার শাশ্বত বাণী আল কুরআন। কুরআনুল কারীমের প্রতিটি আয়াতে রয়েছে মানব জীবনের সমাধান ও সফলতা। এ কুরআন বুঝে পড়ার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে তা পাঠের ফজীলত।

কুরআনুল কারীমের প্রতিটি হরফ তেলাওয়াত করে দশটি করে নেকী অর্জন করা যায়। নিয়মিত কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করলে অন্তর নরম হয়। আল্লাহর সাথে মুহাব্বত বৃদ্ধি পায়। কুরআনুল কারীমের বিশেষ কিছু এমন সূরা রয়েছে যেগুলো অনেক ফজীলতপূর্ণ। আবার অনেক সুরা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৈনন্দিন পাঠ করতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত সূরা বা আয়াত রাতে ঘুমানোর আগে পাঠ করতেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সূরা মুলক, সূরা সাজদাহ, সূরা বনী ইসরাঈল, সূরা জুমার ইত্যাদি।

সূরা মুলক ও সূরা সাজদাহ সম্পর্কে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা মুলক ও সূরা সাজদাহ তেলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। (তিরমিযী:২৮৯২)

সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা জুমার সম্পর্কে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা জুমার তেলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। (তিরমিযী: ৩৪০৫)

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস সম্পর্কে এক হাদীসে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন।  (বুখারী:৫৭৪৮, ৬৩১৯)

এছাড়া কিছু সূরা তেলাওয়াতের ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহিত করেছেন।

এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত নাওফাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, তুমি ’’কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ সূরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী। (আবু দাউদ: ৫০৫৫)

আয়াতুল কুরসী পাঠ করার ব্যাপারে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,  হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। এতে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হিফাযতকারী থাকবে। ফলে শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার নিকটবর্তী হতে পারবে না।[সংক্ষিপ্ত] (বুখারী:৩২৭৫)

এছাড়া সূরা বাকারার শেষ দু' আয়াত তেলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত আবু মাসউদ বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূরাহ বাকারার শেষে এমন দু’টি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দু’টি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দু’টোই যথেষ্ট।
(বুখারী:৪০০৮; মুসলিম:৮০৭)

ইমাম নববী রহমাতুল্লাহ আলাইহি উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন, কেউ বলেন, সারা রাত ইবাদত করার সম্পূরক হবে। কেউ বলেন, শয়তান থেকে পাঠকারী নিরাপদে থাকবে। কেউ বলেন, বিপদাপদ থেকে নিরাপদে থাকবে। সবগুলোরই সম্ভাবনা রয়েছে। (শরহে মুসলিম:২/৯২)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের উক্ত সূরাগুলো দৈনন্দিন ঘুমের আগে পাঠ করার তাওফীক দান করুন।

কেএল/