ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট একটি আমানত
প্রকাশ:
০৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ০১:২৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
|| মুফতি উবায়দুল হক খান || ভোট একটি আমানত। আমানতের খেয়ানত করা মুনাফেকি। ভোট দেওয়া মহান দায়িত্ব। নাগরিক অধিকার। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়াটাই সততা ও সুষ্ঠু নাগরিকতার দাবি। কিন্তু জেনে-শুনে অসৎ, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রার্থীকে ভোট দিলে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। ইসলামি শরিয়ত ভোট ও ভোটাধিকারকে একটি সাক্ষ্য এবং সুপারিশ বলে মনে করে। বস্তুত কাউকে ভোট দেয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য দেয়া, তিনি সৎ ও যোগ্য। এর বিপরীতে কোনো অসৎ ও অযোগ্যকে ভোট প্রদান বস্তুত ওই প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। এটা মহাপাপের কাজ। কুরআন ও হাদিসে এমন কাজ করতে বারণ করা হয়েছে। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রসঙ্গে কুরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাক।’ [সুরা হজ : ৩০] ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে টাকার লোভ, দুর্নীতি আর পেশিশক্তির কাছে জিম্মি হওয়া যাবে না। ভোটাধিকার প্রয়োগ ক্ষেত্রে এমন কাউকে বেছে নেওয়া যাবে না যে দুর্নীতিবাজ, যে সরাসরি মাদক-জুয়ার সাথে জড়িত। অসৎ অযোগ্য অশিক্ষিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে প্রনিতিধি নির্বাচন করলে জাতির ভাগ্যে মন্দ বা ধ্বংসাত্মক ছাড়া ভালো কিছু হবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা : এক. সাক্ষ্য প্রদান। দুই. সুপারিশ। তিন. প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান [জাওয়াহিরুল ফিকহ : ৫/৫৩৩]। ইসলামি শরিয়ত ভোট ও ভোটাধিকারকে একটি সাক্ষ্য এবং সুপারিশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ইসলামে সাক্ষ্য প্রদান করা এবং সুপারিশ করা উভয় বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে ভালোর সাক্ষ্য দেওয়া। সুতরাং ভালো ও যোগ্য প্রার্থীকে সাক্ষ্য দেওয়া মানে হলো সত্যকে সমর্থন করা। আর অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে হলো মিথ্যা বা মন্দকে সাক্ষ্য দেওয়া। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এমন কাজ করতে বারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ ‘আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করবে, তার অন্তর গুনাহগার হিসেবে গণ্য হবে।’ [সুরা বাকারা : ২৮৩] হজরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, মহানবী সা. বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তিকে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ডাকা হলে সে যদি সাক্ষ্য গোপন করে, তাহলে সে ওই ব্যক্তির মত যে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। ’ভোট প্রদানের সময় প্রার্থীর সততা ও যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলাম মনে করে, যারা ভোট দিবেন; তারা সমাজে ভালো কাজ করার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দিবেন। দুনিয়াতে মানুষের সবচেয়ে বড় আমানত হচ্ছে যথাযথ দায়িত্ব পালন। যেহেতু মানুষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোটের মাধ্যমেই দায়িত্বশীল নির্বাচন করে থাকেন। তাই ভোট হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত পবিত্র আমানত। ভোট দিতে হবে এমন মানুষকে যিনি মানুষের মধ্যে সমতা বিধান করতে পারবেন। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবী পরিচালনার জন্য সত্যদীনসহ খিলাফাতের মহান দায়িত্ব নিয়ে অগণিত অসংখ্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। এ নবি-রাসুলগণকে পাঠানোর পূর্বে আল্লাহ তাআলা তাঁর বিধানকে বহন করার জন্য আকাশ, পৃথিবী, পর্বতমালার সামনে পেশ করেছিলেন। কিন্তু তারা সবাই এ দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহণ করল। নিশ্চয় সে জালেম-অজ্ঞ।’ [সুরা আহযাব : ৭২] সুতরাং দায়িত্বপালন করা অনেক কঠিন কাজ। যে ব্যক্তি সৎ এবং দায়িত্ব পালনে যোগ্য ভোটের মাধ্যমে তাদেরকেই নির্বাচন করতে হবে। ঈমানের দাবিও তাই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভোটের মতো পবিত্র আমানতকে যথাস্থানে প্রয়োগ করে আমানতের সংরক্ষণ করার তাওফিক দিন। লেখক : মুহাদ্দিস, আল-জামিআতুল ইসলামিয়া হামিউস সুন্নাহ গাজীপুর; শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. গাজীপুর কেএল/ |