‘নবীনদেরকে অবশ্যই কোনো মুরুব্বির তত্ত্বাবধানে লেখালেখি করতে হবে’
প্রকাশ:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৮:৫২ রাত
নিউজ ডেস্ক |
মুফতি শোয়াইব আহমদ। একজন প্রাজ্ঞ হাফেজ, আলেম, মুফতি। ঢাকার ধামরাইয়ে দেশের অন্যতম ডাউটিয়া জামিয়া ইসলামিয়া কওমি মাদরাসার স্বনামধন্য শিক্ষক। ছাত্র গড়ার কারিগড়। অনেক ছাত্র তাঁর হাত ধরেই লেখালেখিতে এসেছে। কওমি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নময়ী করে তুলতে যেসব শিক্ষক অন্দরে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি তাদের অন্যতম। তাঁর জীবনের নানা দিক নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- মুহাম্মাদ যায়েদ খান
মুফতি শোয়াইব আহমদ: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহ আওয়ার ইসলাম: আপনার জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা কোথায়? মুফতি শোয়াইব আহমদ: নানাবাড়িতে আমার জন্ম হয়েছে। নানাবাড়ি আমাদের গ্রাম থেকে দুই গ্রাম পরে। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলায় আমাদের বাড়ি। আর বেড়ে উঠা তো বিভিন্ন জায়গায়। এখনো যেহেতু বয়স বাড়ছে তাই নির্দিষ্ট করে কোন জায়গার কথা বলা যাবে না। তবে, কাটিয়ে আসা জীবনের বেশি অংশ কেটেছে কওমি মাদরাসায়। আওয়ার ইসলাম: প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি মাদরাসা থেকে নাকি স্কুল থেকে? সেসময়ের স্মৃতি-অনুভূতি কী? মুফতি শোয়াইব আহমদ: আমার প্রাথমিক লেখাপড়া স্কুল থেকে শুরু হয়। গোয়ালদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল আমার শৈশবের ঝাঁপসা স্মৃতি। তাই, স্কুল জীবনের প্রথম দিনের কথা মনে নেই। তবে, স্কুল থেকে যখন মাদরাসায় ভর্তি হই, তখনকার প্রথম দিনের কথা খুব মনে আছে। প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে মাদরাসায় গিয়েছিলাম। মনে অন্যরকম আনন্দ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। দাদাজান সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। দাদার হাত ধরে হাটতে হাঁটতে মজা খেতে খেতে গেছি। ভর্তি করালেন। উস্তাদ ছিলেন দাদাজানের পরিচিত। আমাকে খুব আদর করলেন। আমি তো দারুণ আনন্দিত। ভর্তি কার্যক্রম শেষে আমাকে ক্লাসরুমে বসিয়ে দিয়ে দাদাজান যখন বললেন, ‘ভাই তুমি থাক। আমি চলে যাবো।’ কষ্টে আমার মনে হয়েছিল ভেতরের পাঁজরের হাড়গুলো যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছিলাম, এ কী সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনে।
মুফতি শোয়াইব আহমদ: ঢাকার সাভারের অন্যতম শীর্ষ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া সিদ্দীকিয়া যাদুরচর মাদরাসায় আমার প্রথম খেদমত হয়।মুহতামিম আলহাজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমি সাহেব আমাকে এ সুযোগ দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁর ছায়া আমাদের উপর আরো দীর্ঘ করুক। আমারতো তেমন কোনো যোগ্যতা নেই। সমস্ত অযোগ্যতা যেন আমায় এসে ঘিরে ধরেছিল। ভয়ে কুঞ্চিত হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে এতোটুকু সাহস ছিল যে আমার সাথে উস্তাদগণের দোয়া আছে। আল্লাহ সাহায্য করবেন আশা করি। তারপর থেকে আল্লাহর সাহায্যে দরস চলতে থাকে আজো। আওয়ার ইসলাম: আমরা সবসময় আপনার মাঝে ব্যক্তি গড়ার একটা চেষ্টা বা আগ্রহ দেখতে পাই। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্পিত দায়িত্বের বাইরেও আপনি ছাত্রদের নিয়ে ভাবেন। মেহনত করেন। আপনার এই চেতনার বাতিঘর কে? মুফতি শোয়াইব আহমদ: নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষকতা। এবং পরবর্তী আকাবিরগণ। উস্তাদ গড়ে তুলবেন ছাত্রকে। ইসলামের খেদমতে একেকজন ছাত্র দ্বীনের অতন্দ্র প্রহরী- সেই ছাত্র গড়াইতো একজন উস্তাদের কাজ। আওয়ার ইসলাম: দরস প্রদানে আপনি কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করেন? মুফতি শোয়াইব আহমদ: পড়ানোর তো বহুত পদ্ধতি আছে। আমি সাধারণত তিন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। এক- কিতাবের বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে পড়ানোর ধরন নির্ধারণ করা হয়। দুই- বোঝানোর পদ্ধতি; বোঝানোর ক্ষেত্রে যত সহজ করে বোঝানো যায় সে চেষ্টা করা হয়। তিন- ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল ছাত্রকে টার্গেট রেখে বোঝানো হয়। আওয়ার ইসলাম: প্রত্যেক শিক্ষকের এমন কিছু ব্যাপার থাকে যেটার কারণে ছাত্ররা তার প্রতি দুর্বল থাকে বা আলাদা একটা আগ্রহ কাজ করে। তো, আপনি শিক্ষক হিসেবে আপনার মধ্যে এমন কোন দিক আছে বল মনে করেন যে, ছাত্রদের কাছে আমি এই জায়গাটায় সেরা? মুফতি শোয়াইব আহমদ: কোনো জায়গায়ই আমি সেরা নই। কখনো মনেও হয় না।
মুফতি শোয়াইব আহমদ: জীবনের একেক দিক একেক উস্তাদ থেকে অনুপ্রাণিত হই। অনেক সময় বড় ভাই বা ছোটদের থেকে প্রেরণা পাই। আওয়ার ইসলাম: ছাত্রদেরকে আপনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দিতে দেখা যায় প্রায় সময়। এটা কেন করেন? আপনার লেখালেখির জীবন শুরু হয় কখন থেকে এবং কার থেকে প্রেরণা পেলেন? মুফতি শোয়াইব আহমদ: লেখালেখি হলো দ্বীন প্রচারের স্থায়ী ও টেকসই মাধ্যম। অথচ এই ক্ষেত্রে মানুষের নজর কম। ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে বক্তৃতার যেমন প্রয়োজন, তেমনি হাতের-লিখনী শক্তিরও প্রয়োজন কোনো অংশে কম নয়। সেই প্রেরণা আমি আমার উস্তাদদের থেকে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। আর সেটাই আমি ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করি। আমার লেখালেখির শুরুটা মাসিক আদর্শ নারী পত্রিকার মাধ্যমে, আমি তখন কওমি শিক্ষা সিলেবাসের কিতাবের শুরু তথা তাইসীর জামাতে পড়তাম।
মুফতি শোয়াইব আহমদ: লেখালেখিতে ভালো ও চিন্তায় পরিশুদ্ধ এমন লেখকদের লেখা পড়লে ভালো হয়। আর লেখকের জন্য পড়ার নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নেই। তবে, নেগেটিভ কোনো বিষয় পড়ার আগে অবশ্যই সে বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পজেটিভ জ্ঞান অর্জন করে নিতে হবে। অশুদ্ধ চিন্তার কারো বই পড়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুদ্ধ চিন্তা সঞ্চয় করে নিতে হবে। নবীনদেরকে অবশ্যই কোনো মুরুব্বির তত্ত্বাবধানে লেখালেখি করতে হবে। আওয়ার ইসলাম: শিক্ষকের কাছে ছাত্র সবসময়ই প্রিয় হয়ে থাকে। তো আপনার কাছে সবার থেকে প্রিয় কয়েকজন ছাত্রের নাম জানতে চাই! এবং তারা প্রিয় হওয়ার কারণ? মুফতি শোয়াইব আহমদ: আমার সব ছাত্রই আমার কাছে প্রিয়। তাদের প্রিয় হবার কারণ হলো তারা আমার ছাত্র। আওয়ার ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এনএ/
|