গাজায় যুদ্ধাপরাধ তদন্তের ডাক জাতিসংঘের
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৪:০১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি হত্যার ঘটনায় 'সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ' তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বুধবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ইসরায়েল সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী মঙ্গলবার গাজা সিটির রেমাল এলাকায় আনান ভবন হিসেবে পরিচিত একটি আবাসিক ভবনে ঢুকে ১১ ফিলিস্তিনি পুরুষকে সারি করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

অভিযোগ ওঠেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অভিযানের নামে ওই ভবনে ঢুকে এবং ভবনটির বিভিন্ন ফ্ল্যাটে গিয়ে গিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশু সবাইকে ধরে এনে এক জায়গায় জড়ো করে। একপর্যায়ে পুরুষদের আলাদা করে নারী-শিশু স্বজনদের চোখের সামনেই ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’ করার মতো তাদের গুলি করে হত্যা করে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয় বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অন্তত ১১ ফিলিস্তিনির ‘সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করার মাধ্যমে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ’ করেছে। এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

ওএইচসএইচআর বুধবার আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এ অভিযোগগুলোর একটি স্বাধীন, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং কার্যকর তদন্ত প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং যদি অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে দায়ীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। ইসরায়েল সরকারকে এই ধরনের গুরুতর লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ইসরায়েলি বাহিনীর ওই অভিযানে বেঁচে যাওয়া ও আহত বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইসরায়েলি সৈন্যরা আবাসিক বিল্ডিং ঘেরাও করে গুলি চালাতে থাকে। একপর্যায়ে ভবনের ভেতরে প্রতিটি কক্ষে ঢুকে নারী ও শিশুদের থেকে পুরুষদের আলাদা করে। পরিবারের সদস্যদের সামনে সেনারা ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে। পুরুষদের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে।

গুলিতে আহত এক নারী বলেন, সেনারা আমাদের ঘরে ঢুকে পুরুষ ও সন্তানদের আলাদা করে ফেলে। আমার শ্বশুর ও ছেলেকে গুলি করে তাৎক্ষণিক হত্যা করে।

তিনি বলেন, সৈন্যরা প্রত্যেক বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ে, পুরুষদের হত্যা করে এবং নারী ও শিশুদের আটক করে। তাদের হদিস আমরা জানি না। তারা ভবনের প্রত্যেক তলায় একই কাজ করেছে।

বেঁচে যাওয়া আরেক নারী বলেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা সব নারীকে এক ঘরে আটকে রাখে, তারপর আমাদের ওপর তিনটি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে, মেশিনগানের গুলি চালাতে থাকে। এতে আমার হাতে গুলি লেগেছে, আমার এক মেয়ের মাথায় গুলি লেগেছে। আরেক মেয়ে নিহত হয়েছে। আমার ছেলের চোখে বুলেট ঢুকে গেছে।

এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে এ ঘটনাকে গুরুতর যুদ্ধাপরাধ বলছেন বিশ্লেষকরা।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক তেমের কারমাউত গাজায় এসব বেআইনি হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য জাতিসংঘের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই জাতীয় তদন্ত কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটিই মূল বিষয়। কেননা, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি অপরাধের তদন্ত করতে পারে এমন কোনো সংস্থাকে বর্তমানে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

জেএম/