ভারতে তিন দিনে পার্লামেন্ট থেকে বরখাস্ত ১৪১ বিরোধী এমপি
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৪:৫১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ভারতে পার্লামেন্ট থেকে আরও ৪৯ জন আইনপ্রণেতাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর আগে সোমবার লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ৭৮ জন বিরোধী সংসদ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়।

আর ১৪ তারিখ বরখাস্ত করা হয়েছিল ১৪ জনকে। সবমিলিয়ে তিন দিনে সাসপেন্ড হলেন ভারতের পার্লামেন্টের ১৪১ জন বিরোধী সংসদ সদস্য। লোকসভায় লাফিয়ে পড়ে রঙিন গ্যাস ছড়ানো নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করছিলেন বিরোধী সাংসদরা।

তারা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান ও স্লোগান দেন, প্রবল হই-হট্টগোল হয়। তারপরই তাদের সাসপেন্ড করা হয়। এরপর তিন দিনে রেকর্ড সংখ্যক সংসদ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হলো। এতে লোকসভা কার্যত বিরোধীশূন্য হয়ে পড়ল।


ভারতের সংসদীয়মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেছেন, বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ না দেখানো, প্ল্যাকার্ড না নিয়ে আসা, স্লোগান না দেওয়া নিয়ে একমত হয়েছিলেন। তারা এখন সেটাই করছেন। তাই তাদের সাসপেন্ড না করে কোনও উপায় ছিল না। 

আর বিরোধীরা বলছেন, সংসদ যখন চলছে, তখন সেখানে কিছু না বলে বাইরে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি কেন সংসদে এই নিয়ে কথা বলবেন না?


মঙ্গলবার লোকসভা থেকে অন্ততপক্ষে ৪৯ জন সংসদ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়। তার মধ্যে শশী থারুর, মালা রায়, মনীশ তিওয়ারি, কার্তি চিদম্বরম, সুপ্রিয়া সুলে, ফারুক আবদুল্লাহ, ডিম্পল যাদব, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা আছেন। 

মঙ্গলবার বিরোধী দলগুলোর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক আছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ডাকা বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিরোধী নেতারা যোগ দেবেন।

সেখানে আগামী লোকসভা নির্বাচনে একসঙ্গে লড়াই করা, আসন সমঝোতা নিয়ে যেমন কথা হবে, তেমনই আলোচনা হবে সংসদ থেকে এতজন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করে দেওয়া নিয়েও।

কী হয়েছিল?
সম্প্রতি দর্শক গ্যালারি থেকে দুইজন লোকসভায় লাফিয়ে নেমে পড়ে। তারা লোকসভায় রঙিন গ্যাস ছড়িয়ে দেয়। বিরোধীদের বক্তব্য, সংসদ যে সুরক্ষিত নয়, তা আবার প্রমাণিত হলো। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিবৃতি দিতে হবে।

লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য, তারা সংসদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন। তিনি বাইরে অনেক কথা বললেও সংসদে কিছুই বলছেন না। বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিরোধী সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদ দেখাতে লোকসভা ও রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে পড়েছিলেন। স্লোগান দিচ্ছিলেন। এই ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী স্পিকার বা চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিতেই পারেন। তারা সেইমতো ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে সচরাচর এতজন বিরোধী সংসদ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয় না।

গত বৃহস্পতিবার লোকসভায় ১৩ জন সংসদ সদস্য ও রাজ্যসভায় ডেরেক ওব্রায়েনকে সাসপেন্ড করা হয়। সোমবার করা হয় ৭৮ জনকে। এর মধ্যে অধীররঞ্জন চৌধুরী, কল্যাণ চৌধুরী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, শতাব্দী রায়, টি আর বালু, এ রাজা, দয়ানিধি মারানরা আছেন। লোকসভা থেকে সুখেন্দু শেখর রায়, নাদিমুল হক, জয়রাম রমেশদের সাসপেন্ড করা হয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এভাবে বিরোধী সব সংসদ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হলে, তারা মানুষের কথা বলবেন কী করে? তাহলে পুরো হাউসকেই সাসপেন্ড করা হোক। গণতন্ত্রের নামে প্রহসন হচ্ছে। মানুষের হয়ে কথা বলার কেউ নেই। জনতাই এবার ওদের সাসপেন্ড করবে।’

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, ‘গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর লোকসভা থেকে ১৩ জন বিরোধী সংসদ সদস্যকে সাসপেন্ড করার পর সোমবার আরও ৩৫ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাজ্যসভা থেকে সোমবার ৪৫ জনকে সাসপেন্ড করা হয়। বিরোধী সংসদ সদস্যরা যে দাবি তুলেছেন, তা পুরোপুরি সঙ্গত।’

বিজপির মুখপাত্র তুহিন সিনহা বলেছেন, সময় হলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বিবৃতি দেবেন। বিস্তারিতভাবে সব কথা জানাবেন। তার অভিযোগ, বিরোধী সংসদ সদস্যরা বেপরোয়া কাণ্ড করছেন। তারা সংসদে কোনও গুরুতর আলোচনা করতে চান না। তারা টাইম পাস করতে আসেন।

প্রতিবাদের ধরণ ও বিরোধীশূন্য সংসদ
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘এই ঘটনার দুইটি দিক আছে। একটা প্রতিবাদের ধরণ এবং অন্যটা শাস্তি। ভারতে বিরোধীদের প্রতিবাদের ধরণ নিয়ে বহুদিন ধরে আলোচনা চলছে। ইউপিএ আমলে এটা আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। এখনও আছে। কিন্তু তাই বলে বিরোধীশূন্য সংসদ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই বিষয়টাও ভেবে দেখা উচিত।’

মমতার প্রস্তাব
ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের আগে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বামের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেছেন, ‘কারও সঙ্গে আলোচনা করতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। বামেদের সঙ্গে কথা বলতেও আমার কোনও অসুবিধা নেই। তবে অন্যরা যদি করতে না চায়, তাহলে তার কোনও ওষুধও আমার জানা নেই।’

তবে এর পাশাপাশি মমতা এই ইঙ্গিতও দিয়েছেন, কংগ্রেসের জন্য দুইটির বেশি আসন ছাড়তে তিনি রাজি নন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলার মানুষ জানে ওদের দুইটি আসন আছে। আমি কথা বলতে রাজি।’

কংগ্রেস নেতারা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মেলাবেন না।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এনএ/