নিঃস্বার্থ সেবাই হোক ‘স্বেচ্ছাসেবক দিবস’র মূল প্রতিপাদ্য
প্রকাশ:
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৭:২৫ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
|| শেখ খালিদ সাইফুল্লাহ || ৫ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপি পালিত হবে বিশ্ব স্বেচ্ছাসেবক দিবস। ১৯৮৫ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে। এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো সমাজে স্বেচ্ছাসেবকদের অবদান ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা জনসাধারণকে মনে করিয়ে দেয়া। স্বেচ্ছাসেবীরা সমাজের বন্ধু ও পরম হিতৈষী। দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও দুর্যোগে তাদের বেশ ভূমিকা রয়েছে।জনসেবার ব্রত নিয়ে আর্তমানবতার জন্য দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা,স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা বলা। শুধু কি তাই? সমাজকে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে গাঁথতে তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টাও অতুলনীয়। স্বেচ্ছাসেবা মানে নিজ ইচ্ছায় সেবা, অর্থাৎ- নিজের জন্য আবশ্যক নয় এমন কাজ পরোপকারী মনোভাব নিয়ে সম্পন্ন করার নামই স্বেচ্ছাসেবা। অন্য অর্থে-স্বেচ্ছাসেবা হলো মূলত সৃষ্টির সেবা; মানবসেবা। এ ক্ষেত্রে স্বার্থহীন মানবসেবাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। স্বেচ্ছাসেবক কোনো আর্থিক বা সামাজিক স্বার্থের জন্য কাজ করে না, বরং পুণ্যার্জনের নিমিত্তে নিজেকে মানবসেবায় বিলিয়ে দিয়ে। এতে একজন প্রকৃত স্বেচ্ছাসেবকের আসল লক্ষ্য থাকে শুধু সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন। আসলে আমাদের সৃষ্টিই হচ্ছে একে অপরের কল্যাণকামিতার জন্য। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে থাকা ও সহযোগিতার হাতকে সম্প্রসারণ করা। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০) এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবার গুরুত্ব বোঝাতে বলা হয়েছে - ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৪) মানবতার মুক্তির দূত, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা. মানব সেবার জন্য আরবের যুবকদের নিয়ে গঠন করেছিলেন হিলফুল ফুজুল। দরিদ্র ও দুস্থদের সহায়তা করেছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে। মানব সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন চূড়ান্ত পর্যায়ের।সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী ও স্বেচ্ছাসেবী মানসের অধিকারী। পবিত্র কোরআনে তাঁদের পরস্পরকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা এসেছে। মদিনা রাষ্ট্রের পরতে পরতে সাহাবায়ে কেরামের স্বেচ্ছাশ্রমের দাগ লেগে আছে। মসজিদ-ই-নববী নির্মিত হয়েছিল মুসলিম সমাজের স্বেচ্ছাশ্রমে। খন্দকের যুদ্ধে সাহাবিদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুল সা. পরিখা খননে যোগ দেন। ইসলামের যেকোনো সংকটে সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের জান-মাল অকাতরে বিলিয়ে দেন। দুনিয়ার কোনো স্বার্থের জন্য নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানবসেবা এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এসব স্বেচ্ছাশ্রম করেছেন। পৃথিবীর সব ধর্মে মানবসেবাকে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ইসলাম ধর্মে স্বেচ্ছাসেবাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কোরআন-হাদীসে স্বেচ্ছাশ্রমের ব্যাপক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ইহা একজন মুমিনের অন্যতম গুণ। এ জন্য অসহায়-দুস্থ মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায়দের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে, আমি নিজকে যতটুকু ভালোবাসি। স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সাহায্য। রাসুল সা. বলেন-'কোনো বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও ততোক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ -(মুসলিম, হাদিস : ২১৪৮,তিরমিজি) স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার জান্নাত। মহানবী সা. বলেন, ‘যে মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় পেয়ে বস্ত্র দান করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৫২) সুতরাং আমাদের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে সমাজ তথা দেশের জনকল্যাণমুখী সব কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করা। সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজনে অকাতরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, যাতে করে এসব কাজের জন্য আমরা নিজেরা মনের দিক থেকে ভালো থাকতে পারি, নিঃস্বার্থ পরোপকার দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। লেখক: শিক্ষক,স্বেচ্ছাসেবক ও সমাজকর্মী। কেএল/ |