মেডিকেল থেকে উঠে আসা সেই ছেলেটি আজ ইসলামিক স্কলার
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর, ২০২৩, ০৭:৫২ বিকাল
নাহিদ হাসান

।। তানবিরুল হক আবিদ।।

পৃথিবীতে খুব কম বক্তাই আছে যাদের কথা মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনে। খুব কম সুবক্তায় আছেন যাদের কথা হৃদয় বিগলিত করে। যাদের কথা শুনলে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে জমা হয় জল। শব্দ দূষণের এ যুগে যেখানে মানুষদের কিছু শোনানো এক ধরনের চ্যালেঞ্জ, সেখানে এই বাগ্মি তার বাকপটুতায় মুগ্ধ করে রেখেছেন শ্রোতাদের। বিগলিত করেন শ্রোতাদের অন্তর।

 বলছি ইসলামিক স্কলার মাওলানা তারিক জামিলের কথা। পাকিস্তানের এই সুবক্তাকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় অনেক দেশেই আজ তিনি সুপরিচিতি এবং শ্রদ্ধাভাজন একজন ব্যক্তিত্ব। অসাধারণ বাচনভঙ্গি অগাধ পাণ্ডিত্য আর সময়োপযোগি তাঁর বক্তব্য শ্রোতাদেরকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।

১৯৫৩ সালের পহেলা অক্টোবর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের তুলাম্বায় এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তারিক জামিল। ছোটবেলা থেকেই আভিজাত্যের মধ্যে বেড়ে উঠলেও তিনি ছিলেন বিদ্যানুরাগী আর প্রচন্ড মেধাবী।

বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে মেডিকেলে পড়ার সময় তার এক বন্ধু তাকে তিন দিনের জামাতে নিয়ে যায়। এরপর তিনি যান চার মাসের দাওয়াতী কাজে। সেখানে এক যুবক তাকে বলে," তুই ডাক্তার হয়ে কি করবি, এর থেকে উচিত তোর মাওলানা হওয়া"। এরপরেই বদলে যায় তার চিন্তাভাবনা। স্থির করেন মাওলানা হবেন তিনি।এই চিন্তা বাসায় গিয়ে বলার সাথে সাথে বদলে যায় তার চিরচেনা বাবার মুখ। 

২৩ শে নভেম্বর ১৯৭২ । সকাল ৯ টা। তারিখ জামিলের জীবনে নেমে আসে এক কঠিন দিন। আদরের সন্তান হওয়ার পরেও এই দিন মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁকে। কারণ তিনি মাওলানা হতে চেয়েছিলেন। তার বাবা রেগে গিয়ে বলেন,"তুমি মাওলানা হতে চাইলে আমার ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে হও"। কারণ বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে তারিখ জামিল ডাক্তার হবে।

সেদিনের সেই ঘর ছাড়া যুবক আজ দিনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দুনিয়া জুড়ে। তার বাগ্মিতায় মুসলমানদের মন ও চিন্তাধারা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। সেই সাথে প্রতিদিন ইসলাম কবুল করছে অনেকেই। তারিক জামিলের আলোচনা শুনে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম কবুল করেছিলেন পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটার ইউসুফ ইউহানিয়া। এবং জীবন দর্শন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে ইজামুল হক, সাকলাইন মুশতাক, সাঈদ আনোয়ার, হাশিম আমলা, জুনায়েদ জামশেদ সহ অনেক রথী মহারথীর।

ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী সোফিয়া, দুই পুত্র ইউসুফ ওমর ও আসিফ জামিলকে নিয়ে তার সংসার। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, তার ছোট পুত্র মাত্র কদিন আগেই আত্মহত্যা করে। কারণ হিসেবে জানা যায়, নিজের জীবন নিয়ে ডিপ্রেশনে থাকাই এমন ভুল করে আসিফ।

এখন মাওলানার বয়স ৭০ বছর। আর এই বয়সেও তিনি নিজ দেশ ও দেশের বাইরে প্রতিনিয়ত চোষেবেড়িয়ে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন অবিরত। কারণ এতেই যে তার হৃদয় পরিতৃপ্ত হয়। আর সাথে সাথে বিগলিত ও সমৃদ্ধ হয় হাজারো শ্রোতার মন।

এনএ/