ফিলিস্তিন ইস্যুতে অকুতোভয় ‘আলজাজিরা’র পেছনের গল্প!
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর, ২০২৩, ০৩:৫৭ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| ইলিয়াছ আহমাদ ||

চলমান হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। যুদ্ধবিদ্ধস্ত গাজা উপত্যকা থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাহসী সংবাদ পরিবেশনা সবার নজর কাড়ছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের জন্য মুসলিম বিশ্বে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

আলজাজিরার এমন সংবাদ উপস্থাপনা অবশ্য নতুন নয়। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সংবাদ মাধ্যমটি। জনপ্রিয় এই সংবাদমাধ্যমের অধ্যোপান্ত জানবো এই নিবন্ধে-

আরবি ভাষায় الجزيرة (আলজাজিরা) শব্দের অর্থ দ্বীপ। কিন্তু এখানে আলজাজিরা বলতে আরব উপদ্বীপকেই বোঝানো হয়েছে। যা সংবাদমাধ্যমটির আরববিশ্বের প্রতিনিধিত্বের স্মারক বহন করে।

১৯৯৬ সালে ১ নভেম্বর 'অরবিট কমিউনিকেশন কোম্পানি’র যৌথ উদ্যোগে কাতারের রাজধানী দোহা’য় যাত্রা শুরু করে স্যাটেলাইটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘আলজাজিরা’। প্রথমদিকে চ্যানেলটি শুধু আরবি ভাষায় দিনে ৬ ঘণ্টা সংবাদ সম্প্রচার করতো। ১৯৯৭ সাল থেকে ১২ ঘণ্টা এবং ১৯৯৯ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২৪ ঘণ্টা সংবাদ সম্প্রচার করে আসছে আন্তর্জাতিক এই সংবাদমাধ্যম।

যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো আলজাজিরা-
আলজাজিরার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আরববিশ্বে ‘বিবিসি আরবি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করছিল। কিন্তু সৌদি সরকারের সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে ১৯৯৬ সালে চ্যানেলটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বহু সাংবাদিক চাকরি হারান। সুযোগ বুঝে আলজাজিরা বিবিসির সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সাংবাদিকদেরকে লুফে নেয়। ফলে আলজাজিরার কার্যক্রম ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠে।

২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার অভিযোগে আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে আক্রমণ করে, তখন আলজাজিরা উসামা বিন লাদেন ও তালেবানের পক্ষ নিয়ে সংবাদ প্রচার করে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক সমালোচিত হয়। কিন্তু এর ফলে আরব তথা মুসলিম বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আলজাজিরা আফগানিস্তানে অবস্থিত তাদের কার্যালয় থেকে সরাসরি নিউজ প্রচার করে। যার ফলে বিশ্বের বহু সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ফুটেজ কিনে নিয়ে প্রচার করতে থাকে। ২০০৬ সালে ইরাক-আমেরিকা যুদ্ধেও আলজাজিরা সাহসিকতার সাথে সংবাদ প্রচার করে ব্যাপক আলোচনায় আসে।

পশ্চিমারা আলজাজিরাকে ‘সন্ত্রাসীদের কণ্ঠ’ বলে আখ্যায়িত করে। আলজাজিরার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে ২০১০ সালে সংঘটিত ‘আরব বসন্ত’। বলা হয়ে থাকে, মূলত আলজাজিরার তৎপরতায় ২০১০ সালে গোটা আরব বিশ্বে ‘আরব বসন্ত’র নামে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বস্তুত এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে আলজাজিরা সারাবিশ্বে এক জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠে।

রয়েছে বেশ কিছু সমালোচনাও-
জনপ্রিয়তার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক সমালোচনাও রয়েছে। কাতার সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ‘কাতারি প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানোর অভিযোগ তোলা হয়। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে ২০১৭ সালে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর সংবাদমাধ্যমটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তোলে। কিন্তু কাতার সরকার এ দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। যার ফলে সম্মিলিত আরব শক্তি কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে। 

কাতারভিত্তিক জনপ্রিয় এই সংবাদমাধ্যমটি বর্তমান সময়ে আরবির পাশাপাশি ইংরেজি, তুর্কিসহ বেশকিছু ভাষায় সারাবিশ্বে সংবাদ প্রচার করছে। প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবা হচ্ছে ‘আলজাজিরা ইংরেজি’; যেটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংবাদ পরিবেশন করে। ২০১১ সালে এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের স্বীকৃতি লাভ করে। 

সারাবিশ্বের মতো ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও আলজাজিরা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কেএল/