সিসিইউতে আট ঘণ্টা থাকার পর কেবিনে খালেদা জিয়া
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর, ২০২৩, ০৪:৪৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। 

শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় সোমবার রাত ৪টার দিকে সিসিইউতে নেওয়া হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। প্রায় আট ঘণ্টা রাখার পর তাকে আবারও কেবিনে নেওয়া হয়। 

গত ৯ আগস্ট থেকে আড়াই মাস ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া।

জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। এরপর তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা কিছুটা কমলে আট ঘণ্টা পর আজ বেলা ১২ টার দিকে তাকে আবার কেবিনে নেওয়া হয়েছে।

এবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এর আগে চার দফায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।

এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হচ্ছে। তাদেরকে বাংলাদেশে আনতে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। মার্কিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ভিসা নিশ্চিত করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়াও দেওয়া হয়েছে। বিএনপির একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মঙ্গলবার জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বারবার সরকারের কাছে বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত দুই মাসে ইতোমধ্যে ৫ বার করোনারি কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছিল। এখন পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের অবস্থা উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। বারবার আমরা বলে আসছি উনার অবস্থা উদ্বেগজনক। সোমবার রাতেও তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছে। 

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ তথ্য জানান।

৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া। এরমধ্যে বেশ কয়েক দফা তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় সোমবার রাত পৌনে ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালের সপ্তম তলার কেবিন থেকে চতুর্থ তলায় সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি শারীরিকভাবে খুব দুর্বল বলে জানা গেছে।

এর আগে ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।

৭৮ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

এর আগেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১০ জুন রাত পৌনে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটি ব্লক এখনো রয়ে গেছে।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্টও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এর পর কয়েক দফা তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এনএ/