গাজায় হামলা: এই শিশুদের কী দোষ ছিল
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর, ২০২৩, ১০:৪৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

‘এই শিশুদের দিকে তাকান। কারা তাদের হত্যা করেছে?’ স্ট্রেচারের ওপর পাশাপাশি রাখা ছোট্ট ছয়টি লাশের সামনে দাঁড়িয়ে গাজার একটি হাসপাতালের পরিচালক ছুড়ে দেন এই প্রশ্ন। 

এই ব্যক্তি গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের শহরের ইউরোপিয়ান গাজা হাসপাতালের পরিচালক ইউসেফ আল-আক্কাদ। তাঁর ভিডিওটি উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গত বুধবার প্রকাশ করেছে। 


ভিডিওতে ইউসেফ আল-আক্কাদকে বলতে শোনা যায়, ‘এই শোকাহত ও নির্যাতিত মানুষদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলার সময়ে মুক্ত বিশ্ব তুমি কোথায়?’ সরাসরি তিনি প্রশ্ন না ছুড়লেও, এই শিশুদের কী দোষ ছিল তাই যে তিনি বলতে চেয়েছেন এই আকুতিতে স্পষ্ট। এ সময় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ বন্ধে আবেগঘন আকুতি জানাতে দেখা যায় তাঁকে। 

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালান। এরপর ওই দিন থেকেই গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছেন ইসরায়েল। এতে নিহত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনি। এর এক-তৃতীয়াংশই শিশু। জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলায় অনেক নবজাতকও নিহত হয়েছে। 

ফিলিস্তিনের নিউজ এজেন্সি ওয়াফার খবরে বলা হয়, গত বুধবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় খান ইউনিস শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত আল-বাকরির পরিবারে ভয়াবহ শোক নেমে আসে। ওই হামলায় ৭ শিশুসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে এই পরিবারে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বুধবার ইসরায়েলের হামলায় হতাহত পরিবারগুলোর একটি হলো আল-বাকরির পরিবার। এমন আরও অনেক পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে কেড়ে নিয়েছে সেদিনের হামলা। 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, চিকিৎসক ও বাসিন্দারা এই হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ হামলার খবর খুব দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। 

তবে, ইসরায়েলি বাহিনী এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। 

আবেগতাড়িত কণ্ঠে ইউসেফ আল-আক্কাদ আরও বলেন, এটি গণহত্যা। বিশ্ব এই শিশুদের লাশ দেখুক। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মোট বাসিন্দা ২৩ লাখ। এর প্রায় অর্ধেকই শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। বিগত ১৫ বছরে এই শিশুরা দেখেছ পাঁচটি যুদ্ধ। ২০০৮-০৯ সালে ২৩ দিনব্যাপী চলা যুদ্ধে নিহত হয় ৩৪১, ২০১২ সালের যুদ্ধে নিহত হয় ৩৫, ২১৪ সালের যুদ্ধে ৫৩২ এবং ২০২১ সালের যুদ্ধে ৬৬ জন শিশু নিহত হয়। গাজায় দুই সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনি শিশু নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। 

বলা হচ্ছে, ২০০৮-০৯ সালের যুদ্ধে যে শিশুর বয়স ছিল দুই বছর, সে-ও এ পর্যন্ত পাঁচটি যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছে। যুদ্ধের সাক্ষী হওয়া শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা যেমন কঠিন, তেমনি যুদ্ধ শিশুদের মনে বড় ধরনের দাগ তৈরি করে বলেও ধারণা করা হয়। 

সুত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সি

এনএ/