সকালে যে আমল করলে সারাদিন ভালো কাটবে
প্রকাশ:
১৪ অক্টোবর, ২০২৩, ০৮:৫১ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
সকাল-সন্ধ্যার কিছু আমল ও জিকির আছে। যেগুলো করলে আল্লাহ সারাদিন বা সারারাত নিরাপদে রাখেন। পুরো সময় কল্যাণকর ও বরকতময় করেন। আমলগুলো জেনে রাখা উত্তম। পাঠকদের জন্য সেই আমলগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো- শাদ্দাদ বিন আওস (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার (শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার) হলো- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنوبَ إِلاَّ أَنْتَ উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানি ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লি, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির ওপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে যে নেয়ামত দিয়েছেন আমি তা স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া পাপরাশি ক্ষমা করার কেউ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় বিশ্বাসের সঙ্গে এ বাক্যগুলো বলবে এবং সেদিন সন্ধ্যার আগে যদি সে মারা যায়— তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলায় এ বাক্যগুলো বলবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে— সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসী হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬) আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে একশত বার ও সন্ধ্যায় একশত বার ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না। তবে সে ব্যক্তি ছাড়া— যে তার মত বলবে বা তার চেয়ে বেশি আমল করবে।’ (মুসলিম, হাদিস ২৬৯২) আরবি : سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, এক লোক নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গত রাতে আমাকে একটা বিচ্ছু কামড় দেয়ায় কী কষ্টটাই না পেয়েছি! তিনি বললেন: তুমি যদি সন্ধ্যাকালে বলতে— أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্বা। অর্থ : আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তার নিকট তার সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই। তাহলে তোমার কোনো ক্ষতি হত না। (মুসলিম, হাদিস : ২৭০৯) আবু রাশেদ আল-হুবরানি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আল-আস (রা.)-এর কাছে এসে বললাম, আপনি আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে যা শুনেছেন— সেখান থেকে আমাদের হাদিস শুনান। তখন তিনি আমার সামনে একটি সহিফা (নোট খাতা) পেশ করে বললেন, এটি আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার জন্য লিখেছেন। আমি সে সহিফাতে নজর দিয়ে পেলাম যে, আবু বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যখন সকালে উপনীত হই ও সন্ধ্যায় উপনীত হই তখন কী বলব আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন: হে আবু বকর! আপনি বলুন- اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي ، وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ ، وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِي سُوءًا أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি, লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা, রব্বা কুল্লি শাই’ইন ওয়া মালিকাহু, আ‘উযু বিকা মিন শাররি নাফ্সী ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বা-নি ওয়া শিরকিহি, ওয়া আন আক্বতারিফা ‘আলা নাফ্সি সূওআন আও আজুররাহূ ইলা মুসলিম। অর্থ : হে আল্লাহ! হে আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা! হে গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানধারী! আপনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। হে সব কিছুর রব্ব ও মালিক! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে ও তার শির্ক বা ফাঁদ থেকে এবং আমার নিজের কোন ক্ষতি করা অথবা কোন মুসলিমের ক্ষতি করা থেকে। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৬৮১২; তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২৯) ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সকালবেলা ও সন্ধ্যাবেলা এ দোয়াগুলো পড়া বাদ দিতেন না- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي ، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي ، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ ، وَمِنْ خَلْفِي ، وَعَنْ يَمِينِي ، وَعَنْ شِمَالِي ، وَمِنْ فَوْقِي ، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি আমার দ্বীনদারি ও দুনিয়ার, আমার পরিবার ও সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় পরিণত করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হিফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের উসীলায় আশ্রয় চাই আমি নিচ থেকে হঠাৎ ধ্বংস হওয়া থেকে। [আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৪; আলবানি (রহ.) সহিহ আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।] আবু হুরায়রা (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি সকাল বেলা বলতেন- اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوتُ وَإِلَيْكَ النُّشُورُ. উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বিকা আসবাহ্না ওয়াবিকা আমসাইনা ওয়াবিকা নাহ্ইয়া, ওয়াবিকা নামূতু ওয়া ইলাইকান নুশূর। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার অনুগ্রহে আমরা সকালে উপনীত হয়েছি। আপনার অনুগ্রহে আমরা বিকালে উপনীত হয়েছি। আপনার দ্বারা আমরা বেঁচে থাকি। আপনার দ্বারা আমরা মৃত্যুবরণ করি। আপনার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। আর যখন সন্ধ্যায় উপনীত হতেন, তখন বলতেন- اللَّهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا ، وَبِكَ أَصْبَحْنَا ، وَبِكَ نَحْيَا ، وَبِكَ نَمُوتُ ، وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বিকা আমসাইনা, ওয়া বিকা আসবাহ্না, ওয়া বিকা নাহ্ইয়া, ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকাল মাছির। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার অনুগ্রহে আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। আপনার অনুগ্রহে আমরা সকালে উপনীত হয়েছি। আপনার দ্বারা আমরা বেঁচে থাকি। আপনার দ্বারা আমরা মৃত্যুবরণ করি। আপনার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৬৮; তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৯১; নাসায়ি, হাদিস : ১০৩২৩) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এবং তিনি রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন- যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়াটি দিনে একশত বার বলবে— এটা তার জন্য দশজন দাসমুক্তির অনুরূপ হবে। তার জন্য একশত সওয়াব লেখা হবে। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য শয়তান থেকে সুরক্ষা হবে। সে যে সওয়াব পাবে— আর কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াব পাবে না; তবে হ্যাঁ কেউ যদি তার চেয়ে বেশি আমল করে সে পাবে।’ (বুখারি, হাদিস ৬০৪০) দোয়াটি হলো- لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। অর্থ : এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তার কোন শরিক নেই। রাজত্ব তারই। সমস্ত প্রশংসাও তার। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আবু আইয়াশ থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হলে বলে- لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। অর্থ : এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই, তার কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসাও তার, আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। সেটা তার জন্য ইসমাইলের বংশধর একজন দাসমুক্তির সমান, তার জন্য দশটি সওয়াব লেখা হয়, তার দশটি গুনাহ মাফ করা হয়, তার ১০ স্তর মর্যাদা উন্নীত করা হয় এবং সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত এটি তার জন্য শয়তান থেকে সুরক্ষাকারী হয়। যদি সন্ধ্যায় উপনীত হলে এ বাক্যগুলো পড়ে তাহলে সকাল হওয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তি সমধরণের সওয়াব পায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৭; আলবানি সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) ফাতেমা (রা.)-কে বলেন, আমি তোমাকে যা ওসিয়ত করছি তা শুনতে কিসে তোমাকে বাধা দেয়? তুমি যখন সকালে উপনীত হবে কিংবা সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন বলবে: يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغيثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ উচ্চারণ : ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন। অর্থ : হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন। আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না। [আলবানী হাদিসটিকে 'হাসান' বলেছেন] (ইমাম নাসাঈ তার সুনানে কুবরা গ্রন্থে) ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নবী (সা.) যখন সন্ধ্যায় উপনীত হতেন তখন বলতেন, أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ উচ্চারণ : আমসাইনা ওয়া আমসাল মুলকু লিল্লাহি, ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। রব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি ওয়া খাইরা মা বা‘দাহা, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররি মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি ওয়া শাররি মা বা‘দাহা, রব্বি আঊযু বিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল-কিবারি। রবিব আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযাবিন ফিন্না-রি, ওয়া আযাবিন্ ফিল ক্বাবরি। অর্থ : আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এমতাবস্থায় যে, সমস্ত রাজত্ব ও সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই। প্রশংসা তারই। আর তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। ইয়া রব্ব! এ রাতে ও এর পরের রাতগুলোতে যত কল্যাণ আছে আমি আপনার কাছে সে সব কল্যাণ পেতে প্রার্থনা করছি এবং এ রাতে ও এর পরের রাতগুলোতে যত অকল্যাণ আছে, আমি সেগুলো থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। ইয়া রব্ব! আমি আপনার কাছে অলসতা ও মন্দ বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই। ইয়া রব্ব! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের ও কবরের যে কোন শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। এবং যখন সকালে উপনীত হতেন, তখনও দোয়াটি বলতেন এভাবে— أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ উচ্চারণ : আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ্। অর্থ : আমরা সকালে উপনীত হয়েছি এমতাবস্থায় যে, সমস্ত রাজত্ব আল্লাহর জন্য। (মুসলিম, হাদিস : ২৭২৩) আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোন মুসলিম যখন সকালে উপনীত হয় কিংবা সন্ধ্যায় উপনীত হয় তখন যদি ৩ বার বলে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায়— তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা। رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلاَمِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ ﷺ نَبِيّاً উচ্চারণ : রাদ্বিতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান। অর্থ : আল্লাহকে রব, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৮৯৬৭; মুসনাদ গ্রন্থে মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে সহিহ লি গাইরিহি' বলেছেন] আবদুল্লাহ্ বিন খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) তাকে বলেছেন, ‘তুমি যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে কিংবা সকালে উপনীত হবে তখন তুমি ‘ক্বুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ (সুরা ইখলাস) ও মুআওয়িযাতাইন (সুরা ফালাক ও সুরা নাস) ৩ বার পড়বে। এটি তোমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৫; আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২) উসমান বিন আফ্ফান (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলা তিনবার নিম্নোক্ত দোয়া বলবে— সে ব্যক্তি সকাল পর্যন্ত কোন আচমকা বিপদে আক্রান্ত হবে না। যে ব্যক্তি সকাল বেলা এ বাণীগুলো ৩ বার পড়বেন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তি কোন আচমকা বিপদে আক্রান্ত হবেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮) بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ : বিস্মিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইস্মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামি‘উল ‘আলীম। অর্থ : আল্লাহর নামে (সকল অনিষ্ট থেকে সাহায্য চাই), যার নাম (স্মরণের) সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, কোন বান্দা যদি প্রত্যেক দিন সকালে ও রাতে ৩ বার করে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে— بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ، উচ্চারণ : বিস্মিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়ায্যুররু মা‘আ ইস্মিহি শাইউন ফিল্ আরযি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম) কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৮; জাদুল মাআদ : ২/৩৩৮) আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার নিম্নোক্ত দোয়া পড়বেন— উচ্চারণ : হাসবিয়া আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযিম। অর্থ : আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তার উপরই আমি তাওয়াক্কুল করি। তিনি মহান আরশের অধিপতি) আল্লাহ্ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮১) জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন যে, নবী (সা.) একবার ভোরবেলা ফজরের নামায পড়ার জন্য তার কাছে বেরিয়ে গেলেন। সে সময় জুওয়াইরিয়া জায়নামাজে ছিলেন। পূর্বাহ্ণের পর তিনি ফিরে আসলেন তখনও জুওয়াইরিয়া জায়নামাযে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, আমি যাওয়ার পর থেকে তুমি এ অবস্থায় আছ? জুওয়াইরিয়া বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি ৪টি বাক্য ৩ বার পড়েছি। সে বাক্যগুলো যদি ওজন করা হয় তাহলে তুমি আজকে সারাদিনে যা পড়েছ সেগুলোর সমান হবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৭২৬) سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ ، عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ উচ্চারণ : সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী, ওয়া রিযা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী। অর্থ : আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি- তার সৃষ্ট বস্তুসমূহের সংখ্যার সমান, তার নিজের সন্তোষের সমান, তার ‘আরশের ওজনের সমান ও তার বাণীসমূহ লেখার কালি পরিমাণ। কেএল/ |