আজ  ‘বিশ্ব বসতি দিবস’, কেউই দেশে গৃহহীন থাকবে না!
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর, ২০২৩, ০৩:৫১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

প্রতিবছরের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সোমবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ পালিত হচ্ছে। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ দিবস পালিত হয়ে থাকে।

সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রকল্প এরইমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যাদের ঘর ছিলো না, ভিটেমাটি ছিলো না, তারাও ঘর পেয়েছেন। পেয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। এরইমধ্যে দেশের ২১ জেলা ও ৩৩৪ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা হয়েছে। এই অর্জনকে একটি বড় মাইলফলক হিসাবে বলা হয়ে থাকে। আর এভাবেই  বাংলাদেশ গৃহহীন মুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে চলছে।

বসতি দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনদের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশে আর কোন গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদের আলোকে নগর ও গ্রাম অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।”

তিনি বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন; যাতে দেশের সকল মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় এবং একইসঙ্গে নগর ও গ্রামাঞ্চলের সুষম উন্নয়ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার নগরগুলোকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।’

শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ হতে ২৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা শিগগিরই ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপসমূহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা ভিশন ২০৪১ ঘোষণা করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। বাস্তবায়িত হবে জাতির পিতার আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’।”জানা গেছে, সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করাসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশে সোমবার (২ অক্টোবর) দিবসটি পালিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন দেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। এরই অংশ হিসাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় ২ লাখ ৩৮হাজার ৮৫১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। সবশেষ আগস্টে আরও ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দিয়ে আরও ১২টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়। এ নিয়ে দেশের মোট ২১টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়।

স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালী সফরে গিয়ে আশ্রয়হীনদের প্রথম পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বাসস্থানের নিশ্চয়তার ঘোষণা দেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে সর্বশেষ দেশের আরও ১২৩টি উপজেলা ও ১২ জেলাকে সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেল ৯ আগস্ট গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ ঘোষণা দেন। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আরও ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা হয়। ৪১টি জেলার আরও ১২৩টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। যার ফলে মোট উপজেলার সংখ্যা হলো ৩৩৪টি এবং এই ১২টি জেলাসহ সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১টিতে।

এম আই/