আখেরী চাহার শোম্বাহ : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
প্রকাশ:
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৬:১৫ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী বহু মানুষ সফর মাসের শেষ বুধবারকে একটি বিশেষ দিবস গণ্য করে এবং এতে বিশেষ আমল আছে বলে মনে করে। ‘মকসুদুল মোমিনীন’ ও ‘বার চান্দের ফযীলত’ এবং এ জাতীয় যেসব অনির্ভরযোগ্য পুস্তক-পুস্তিকা এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তাতে এই বিষয়টি রয়েছে। মকছুদুল মুমিনীন, বার চান্দের ফযীলত জাতীয় অনির্ভরযোগ্য বইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী সফর মাসের শেষ বুধবারকে আখেরী চাহার শোম্বাহ বলে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে একবার এক ইহুদীর যাদুর কারণে ভীষণ অসুস্থ হন এবং এই দিনে একটু সুস্থতা বোধ করেন এবং গোসল করেন ও মসজিদে জামাতে শরিক হন। খুশি হয়ে হযরত ওসমান রা. তার নিজ খামারের ৭০টি উট জবাই করে গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। খুশিতে আত্মহারা সাহাবীগণ আনন্দ প্রকাশ ও শুকরিয়া আদায় করেছিলেন রোযা রেখে, নফল নামায পড়ে এবং হামদ-নাত গেয়ে। সুতরাং এটা মুসলমানদের খুশির দিন এবং তা উদযাপনের একটি দিবস। এ ছাড়াও এ জাতীয় বইগুলোতে এ দিনের বিভিন্ন করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন যেমনটি ভিত্তিহীন উপরোক্ত বিবরণ। কারণ- ১. হাদীস বিশারদ ও ইতিহাসবিদ কারো মতেই সুস্থতার তারিখ সফরের আখেরী চাহার শোম্বা ছিল না। (দ্র. ফাতহুল বারী ১০/২৩৭ : আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ২/১৫৪; শরহুয যুরকানী ৯/৪৪৬-৪৪৭) ২. জাদুর ঘটনা হাদীস ও সীরাত-গ্রন্থসমূহে বিস্তারিতভাবে এসেছে। কিন্তু কোথাও জামাতে শরীক হতে না পারা ও জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার পর গোসলের কথা নেই। ৩. রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়েছে সোমবারে। এর চার-পাঁচদিন পূর্বে তাঁর সুস্থতার জন্য যে সাত কুঁয়া থেকে সাত মশক পানি আনা হয়েছিল এবং সুস্থতার জন্য তার দেহ মোবারককে ধৌত করা হয়েছিল। তা কি বুধবারের ঘটনা না বৃহস্পতিবারের? ইবনে হাজার ও ইবনে কাছীর একে বৃহস্পতিবারের ঘটনা বলেছেন। (দ্র. ফাতহুল বারী ৭/৭৪৮, কিতাবুল মাগাযী ৪৪৪২; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/১৯৩; সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী ২/১১৩) ৪. যদি বুধবারের ঘটনা হয়ে থাকে তবে সফর মাসের শেষ বুধবার কীভাবে হচ্ছে? রসমের পৃষ্ঠপোষকতাকারীগণ সকলে ইন্তেকালের তারিখ বারো রবিউল আওয়াল বলে থাকেন। সোমবার যদি বারো রবিউল আওয়াল হয়ে থাকে তাহলে এর পূর্বের বুধবার তো সফর নয়, রবিউল আওয়ালেই হচ্ছে। ৫. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অনেক মুসিবত এসেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নাজাত দিয়েছেন। তায়েফ ও অহুদে আহত হয়েছেন, আল্লাহ তাকে সুস্থ করেছেন। একবার ঘোড়া থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছেন, যার কারণে মসজিদে যেতে পারেননি, আল্লাহ তাঁকে সুস্থ করেছেন। তার সুস্থতা লাভের এই সব আনন্দের স্মৃতিগুলোতে কি দিবস উদ্যাপনের কোনো নিয়ম আছে? তাহলে আখেরী চাহার শোম্বাহ, যার কোনো ভিত্তি নেই, তা কীভাবে উদযাপনের বিষয় হতে পারে? তথ্যসূত্র: ফাতহুল বারী, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, শরহুয যুরকানী, কিতাবুল মাগাযী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী, মাসিক আল-কাউসার। আরএম |