আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: গত কয়েক মৌসুমে দেশে বাম্পার চাল উৎপাদন হয়েছে। গত অর্থবছর (২০২১-২২) সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে দেশে চালের মোট উৎপাদন। একই সঙ্গে বিনাশুল্কে চাল আমদানির সুযোগ বহাল থাকায় বিদেশ থেকেও প্রচুর চাল এসেছে। সবমিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে চালের মজুত এখন পর্যাপ্ত । তারপরও দেশের বাজারে কমেনি চালের দাম। বরং সাধারণ মানুষকে খেতে হচ্ছে সর্বকালের সর্বোচ্চ দামে।
‘সম্প্রতি বাজারে নতুন করে চালের দাম না বাড়লেও গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং সরু চালের দাম ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে’ বলে জানা গেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্য থেকে।
আর বাজারের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি মোটা চাল এখন ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। বেশ কয়েক মাস ধরে এ দাম বহাল রয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি সরু চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে সবশেষ তিন মৌসুমে (ইরি, আউশ ও আমন) মোট ৪ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে, যা এক বছরে উৎপাদনের রেকর্ড। দেশে বিগত ১৪ বছরে চালের উৎপাদন ২৯ শতাংশ বেড়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে ধান-চালের মজুত প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন, যা দেশের রেকর্ড উৎপাদনকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। গত বছর সরকারি মজুত ছিল ২০ লাখ ৭ হাজার টন। এরও আগে সরকারের রেকর্ড মজুত ছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৮ টন।
আবার বিনাশুল্কে চাল আমদানির মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এসময় চাল আমদানিতে শুল্ক দিতে হয়নি। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হয়েছে। এ সুবিধায় ২৯ মার্চ পর্যন্ত দেশে ১০ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এলসি ও পাইপলাইনে রয়েছে আরও প্রায় সমপরিমাণ চাল।
সরকারের হিসাবে দেশে বছরে মোটামুটি সাড়ে ৩ কোটি টন চাল হলেই চাহিদা পূরণ হয়। সেখানে জোগানের হিসাব মাথায় নিলে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বাজারে গেলে চালের সংকটের অজুহাত আমাদের নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উৎপাদনের যে তথ্য দেয় সেটা অনেক সময় মেলে না। আবার ভোগের যে তথ্য দেওয়া হয় সেটাও সামঞ্জস্যহীন।’ বলে মন্তব্য করেন কৃষি গবেষক ও অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান।
তিনি বলেন, ‘আদতে এত চাল থাকলে শুল্ক ছাড় দিয়ে আমদানির প্রয়োজনীয়তা কী? তাহলে বাড়তি চাল যায় কোথায়? এ বিষয়গুলো কখনো পরিষ্কার হয় না, যে সুযোগটা ব্যবসায়ীরা নেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দুর্বলতা থাকে।’
দেশে চালের কোনো অভাব নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়। সরকার যখন তদারকি করে, যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিটিং করা হয়, তখন চালের দাম কমে, তারপর আবার বাড়ে।
এ বিষয়ে চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ‘ঘাটতি বলেই আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। উদ্বৃত্ত থাকলে সেসব চাল যায় কোথায়? নিশ্চয় কেউ চড়ামূল্যের এ বাজারে বছরের পর বছর চাল মজুত রাখে না।’
চালের দাম কমছে না কেন? এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘মিল থেকে চাল যে দামে বিক্রি হয়, খুচরা বাজারে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। সেগুলোতে নিয়ন্ত্রণ নেই। গত কয়েক মাস মিলে চালের দাম কমেছে। কিন্তু বাজারে কমেনি। সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এ বিষয়ে।’
এদিকে দেশে চালের সরবরাহ-মজুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আড়তদারদের জবাবদিহি নিশ্চিত করছে সরকার। সম্প্রতি এমন উদ্যোগের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
তিনি আরও বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া কেউ দেশে ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবে না। এটা করতে হলে তার ফুড গ্রেইন লাইসেন্স থাকতে হবে। আড়তদারদেরও এ লাইসেন্স থাকতে হবে। ১৫ দিন পরপর কতটুকু তিনি ক্রয় করেছেন, কতটুকু বিক্রয় করেছেন- তার রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এ সিস্টেম শিগগির চালু হবে।’
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, ‘দেশে চালের কোনো অভাব নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়। সরকার যখন তদারকি করে, যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিটিং করা হয়, তখন চালের দাম কমে, তারপর আবার বাড়ে। বাড়ার সময় ৫ টাকা বাড়লেও কমার সময় সেভাবে কমে না। ব্যবসায়ীরা এক টাকা কমিয়ে বলে চালের দাম কমেছে।’
-একে