মুহাম্মদ সুফিয়ান তাসদিক।।
মানুষ বেচেঁ থাকে স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্নপূরণে অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনায় বিলিয়ে দেয় আপন জীবন। কিন্তু মানুষের যদি সেই কাঙ্কিত স্বপ্নপুরণ না হয় অথবা নিজ মন-মুওয়াফিক কাজের ফল না মিলে, তাহলে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় অবসাদ। যাকে হতাশা বলা হয়।
আমাদের এই ছোট্ট জীবন নানা কারণে অনেক সময় হতাশায় আচ্ছাদিত হয়ে পরে। হারিয়ে ফেলে উৎসাহ উদ্ধিপনা। তখন নিজেকে মনে হয় চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ।
ঠিক ওই মুহুর্তে আমরা খোঁজে বেড়ায় এমন একজন আশ্রয়দাতা, যার কাছে পেতে পারি সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। কিন্তু কে সেই উত্তম আশ্রয়দাতা! যিনি দিতে পারেন একমাত্র যাবতীয় সমস্যার সমাধান!
তিনি আল্লাহ! আল্লাহ তা’য়ালায় উত্তম আশ্রয়দাতা। একমাত্র তিনিই দিতে পারেন যাবতীয় সমস্যার সমাধান। আল্লাহ তা’য়ালার উপর নির্ভর করে মুমিন কখনোই হতাশ হন না। কোন অপুর্ণতা তাদের আঘাত করে না। বরং মহাসফলতার প্রহর গুনে তারা। যার ওয়াদা স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা দিয়েছেন।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন; হে আমার বান্দারা তোমরা যারা নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করেছো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা জুমার-৫৩) আল্লাহ তা’য়ালার বাণী; অবশ্যই বিশ^াসীরা সফল হয়েছে ( সূরা মুমিনুন-০১)
অর্থাৎ মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না। এই হতাশা মুমিনের জন্য নয়। আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহ, দয়া ও করুণার যে আলোকধারা সদা সর্বদা মুমিনের ওপর বর্ষিত হচ্ছে সে গুলো থেকে আপনি/মুমিন কিভাবে নিরাশ হবেন? এই ইহকালের ব্যর্থতা/ পরাজয়ে কি বা আসে যায়!
দুনিয়া হলো পরিক্ষার হল। আল্লাহ তা’য়ালার প্রিয় বান্দারা বিভিন্ন ভাবে পরিক্ষার সম্মখিন হয়ে থাকেন এক মাত্র তাঁর ইচ্ছায়।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন; অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো ভয়, ক্ষুধা এবং তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। (সূরা বাকারা-১৫৫)
প্রিয় পাঠক, মুমিনের জন্য পরিক্ষা আসবেই। এই পরিক্ষার সম্মখিন হয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) সহ সকল নবী রসুলগন।
রসুল (সাঃ) এর তিন পুত্রসন্তান শৈশবে ইন্তেকাল করেন । কিন্তু তিনি হতাশ হন নি। যে মক্ষাবাসী তাঁকে আল-আমীন বলে ডাকতো, তারাই তাকে শিয়াবে আবু তালেবে তিন তিনটি বছর বন্দি রেখেছিলো। তাদের জুলুম আর নির্যাতন এতোটাই তীব্র ছিলো যে, অসহ্য হয়ে অবশেষে আল্লাহর হুকুমে প্রিয় জন্মভূমি থেকে হিজরত করেন মদিনায়। তারপরও তিনি হতাশ হননি।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) দোয়া করলেন আল্লাহ তা’য়ালার নিকট, হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎ ছেলে সন্তান দান করুন। (সূরা সাফফাত-১০০) আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইব্্রাহীম (আঃ) কে সুসংবাদ দিলেন, সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সংবাদ দিলাম।(সূরা সফফাত-১০১)।
অতপর পুত্র ইসমাইল (আঃ) যখন বাবা ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলেন, তখন আল্লাহ তা’য়ালা বাবা ইব্রাহীমকে সপ্নে পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন। হযরত ইব্রাহীম হতাশ হন নি।
হযরত জাকারিয়া (আঃ) বৃদ্ধ বয়সে হতাশ না হয়ে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, হে আমার পালনকর্তা ! তোমার কাছ থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।(সূরা মরয়ম-৩৮)
আল্লাহ তা’য়ালা তাকে এক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিেেলন। যার নাম ইয়াহ ইয়া। প্রিয় পাঠক, আমরা যদি আল্লাহ তা’য়ালার উপর ভরসা করে তাঁর নিকট প্রার্থনা করি, তাহলে তিনি কখনো আমাদের হতাশ করবেন না।
প্রকৃত মুমিন বান্দাদের জন্য উচিৎ দুনিয়ার দুঃখ কষ্টে কখনো হতাশ না হওয়া। আল্লাহ তা’য়ালার বাণী; নিশ্চয় কষ্টে সাথে রয়েছে স্বস্তি। ( সূরা আলম নাশরাহ-০৬)
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন; আর যে আল্লাহ কে ভয় করে আল্লাহ ত’য়ালা তাকে নিস্কৃতির পথ করে দিবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা হতে রিযিক দান করবেন। যে ব্যাক্তি আল্লাহ উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যতেষ্ট। (সূরা তালাক-১-৩)
আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর উপর নির্ভরকারীকে এই আয়াতে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, তিনিই তার জন্য যতেষ্ট। সুতরাং যখন বান্দা এক আল্লাহর উপর নির্ভর করবে তখন দুনিয়ার যাবতীয় আপদ,বিপদ, দুশ্চিন্তা থেকে সে নিশ্চিন্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে হতাশা থেকে মুক্ত করে একমাত্র তাঁর উপর নির্ভর ও ভরসা করার তৌফিক দান করুক (আমীন)
লেখক: মুদাররিস: জামি’আ কোরআনিয়া সাইফুল উলূম, খিলক্ষেত, ঢাকা
-এটি