রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তিস্তায় আরও খাল খনন করবে পশ্চিমবঙ্গ, বিপর্যয়ের শঙ্কা বাংলাদেশে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে আরো দুটি খাল খননের জন্য গতকাল শুক্রবার প্রায় এক হাজার একর জমি দখল করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগ। এই পদক্ষেপটি ভারতের জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলায় আরো বেশি কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনতে সাহায্য করলেও বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি সংকট নিরসনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।

গতকাল শুক্রবার (৩ মার্চ) জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই জমি তিস্তার বাম তীরে দুটি খাল তৈরি করতে প্রশাসনকে সহায়তা করবে।

এ ছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আরেকটি নদী জলঢাকা থেকে পানি সেচের জন্য খালের দিকে প্রবাহিত করা হবে।

অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলেছে, ‘পরিকল্পনা অনুসারে, তিস্তা এবং জলঢাকা থেকে পানি তোলার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করা হবে। তিস্তার বাম তীরে আরো একটি খাল নির্মিত হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার হবে।’

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, খালগুলো খনন করা হলে সেখানকার প্রায় এক লাখ কৃষক সেচের সুবিধা পাবেন। ব্যারেজটি জলপাইগুড়ি জেলার গাজলডোবায় অবস্থিত।

তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি ১৯৭৫ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলের ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে চালু করা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল তিস্তা থেকে নদীর দুই তীরের খালের মাধ্যমে পানি পাঠানোর। পথে খালগুলো সেই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্যান্য নদী থেকেও পানি পাবে।

যদিও প্রকল্পটি কয়েক দশক ধরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং পানি এখন মাত্র ১ দশমিক ০৪ লাখ হেক্টর জমিতে পৌঁছেছে। সেচমন্ত্রী ভৌমিক শুক্রবার বলেছেন, ‘জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন খাল খননের জন্য আমাদের কাছে এক হাজার একর জায়গা হস্তান্তর করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার (২০০৯ সালে) এটিকে একটি জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তহবিল সরবরাহ করেনি। তহবিল না পেলেও, আমরা পর্যায়ক্রমে (খালের নেটওয়ার্ক তৈরির) কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।’

এদিকে ২০ বছরেরও বেশি সময় পর তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে নতুন খাল খনন করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত ঢাকার দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে নয়াদিল্লি এবং ঢাকা তিস্তার পানি ভাগাভাগির জন্য চুক্তি করতে পারেনি।

একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছেন, তিস্তা প্রকল্পের আওতা বাড়িয়ে মমতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে দেশটির উত্তরাঞ্চলের নদীর পানি দরকার।

শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের একজন শিক্ষক বলেছেন, ‘এখন যখন সরকার সেচ নেটওয়ার্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, এটা স্পষ্ট যে তিস্তা থেকে আরো বেশি পানি নতুন খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হবে। এর মানে হলো শীর্ণ মাসগুলোতে বাংলাদেশের জন্য কম পানি পাওয়া যাবে।’

উল্লেখ্য, গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তায় প্রায় ১০০ কিউমেক (কিউবিক মিটার প্রতি সেকেন্ড) পানি পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, ভারত ও বাংলাদেশে কৃষি জমিতে সেচের জন্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কিউমেক প্রয়োজন।

সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া

টিএ/


সম্পর্কিত খবর