আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তিন দফায় হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ালেও আশানুরূপ ফল মিলছে না। প্রাক-নিবন্ধন করে হজের জন্য প্রস্তুতি নিলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পিছু হটছেন হজ গমনেচ্ছুরা। এ বছর হজের খরচ আকস্মিক বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর বিমান ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বেড়েছে দেড় লাখ টাকারও বেশি। এর পেছনে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া এবং সৌদি রিয়ালের মান অপরিবর্তিত থাকাকে দায়ী করছেন তারা। একইভাবে সৌদি আরবে হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের কারণও দেখছেন তারা। হজের এই খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিবন্ধনে।
প্রথম পর্যায়ে আগে ২২শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনের সময় দেয়া হয়েছিল। পরে সেটি বাড়িয়ে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। এরপরও আশানুরূপ নিবন্ধন না হওয়ায় ৭ই মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করার সুযোগ পাবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১৫ হাজার হজযাত্রী। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন।
২০১৯ সালে তা ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জনে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশকে সীমিত পরিসরে ৬০ হাজার ১৪৬ জন হজযাত্রীর কোটা দেয়া হয়েছিল।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত হজযাত্রীর কোটা ১৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরও কোটা না থাকার কারণে বহু হজযাত্রীকে অপেক্ষমাণ থাকতে হয় পরের বছরের জন্য। কিন্তু এ বছর কোটার অনুপাতে নিবন্ধন করছেন অপেক্ষাকৃত কম হজযাত্রী। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৯৮২ জন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৭১ জন। হজ অফিসের দেয়া তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রাক-নিবন্ধন থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় অপেক্ষমাণ ছিলেন ৮ হাজার ৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অপেক্ষমাণ ২ লাখ ৩১ হাজার ২৩৯ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজের ধর্মীয় শর্তই হচ্ছে শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম হওয়া।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যে শ্রেণির মানুষ এই ধর্মীয় বিধানে অংশ নেন তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত। সারাজীবনের উপার্জন থেকে জমিয়ে শেষ বয়সে তারা হজের প্রস্তুতি নেন।
খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজ গমনেচ্ছুদের বড় অংশ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। হজের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এ-ক্যাটাগরিতে বিমান ভাড়া বাবদ ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা, সার্ভিস চার্জ বাবদ ৯৯ হাজার ৩৯৪ টাকা, হজ গাইড ফি বাবদ ৩ হাজার ৪৫৬ টাকা বেড়েছে।
বি-ক্যাটাগরিতে বিমান ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ একই হারে বাড়লেও গাইড ফি বেড়েছে ৪ হাজার ৯০৮ টাকা। সার্ভিস চার্জের মধ্যে রয়েছে- পবিত্র হজের ৫ দিন মিনা, আরাফাহ ও মুযদালিফায় মোয়াল্লেমের দেয়া সেবা তথা তাঁবু, তাঁবুতে ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ, কম্বল, এয়ারকন্ডিশন ও খাবার।
মিনার তাঁবুর সি-ক্যাটাগরির মূল্য ৫ হাজার ৬৫৮ সৌদি রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২২ সালে এই খরচ ছিল ২৫২০ রিয়াল। তবে পরিবহন খাতে কিছুটা ব্যয় কমেছে। জেদ্দা-মক্কা-মদিনা ও আল মাশায়েরে (মক্কা-মিনা-আরাফাহ-মুযদালিফা-মিনা-মক্কা) রুটে পরিবহন ব্যয় ২০২২ সালে ছিল ১৭৫৪ সৌদি রিয়াল। চলতি বছর এই খরচ ধরা হয়েছে ১২৩৮ রিয়াল। ২০২২ সালে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৯৪ টাকা ৩০ পয়সা।
এ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া প্রতি ডলারের দাম ১০৮ টাকা। আর সৌদি রিয়ালের দর ছিল গত বছর ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। এ বছর প্রতি সৌদি রিয়ালের দাম ২৮ টাকা ৩৯ পয়সা।
হজ সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ শতাংশ কমলেও ডলারের বিপরীতে সৌদি মুদ্রা রিয়ালের দাম কমেনি। বরং রিয়ালের বিপরীতে ডলার দুর্বল হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে রিয়াল। এদিকে টাকার বিপরীতেও ডলারের দাম বেশি বেড়েছে, সে তুলনায় রিয়ালের দাম বেড়েছে কম। এ ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৩ দশমিক ৭৬ রিয়াল।
ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দাম সামান্য কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৭৫ রিয়াল। অর্থাৎ সৌদি মুদ্রার মান কিছুটা বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় বাংলাদেশে পণ্যের দাম বেড়েছে, কমেছে ক্রয়ক্ষমতা।
এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, আমাদের যে কোটা রয়েছে সেটা পূরণ না হলে অসুবিধা নেই। খরচ যা বেড়েছে সৌদি আরবের কারণে।
রিয়ালের দর খরচের ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক্-নিবন্ধনের ক্রমিক পূর্বের সিরিয়াল বহাল রেখে ৪৫ হাজার ৫১৪ পর্যন্ত এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক্-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক পূর্বের সিরিয়াল বহাল রেখে ৮ লাখ ৪৬৭ পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর হজ বন্ধ থাকার পর গত বছর পুনরায় হজ চালু হয়। এ বছর বয়সের সর্বোচ্চ সীমার শর্ত তুলে দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরাও হজ পালন করতে পারবেন। তবে ন্যূনতম বয়স ১২ করা হয়েছে প্রথমবারের মতো। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭শে জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
-এটি