শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন ‘প্রকৃতপক্ষে ভুল হলে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ’ সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নেবেন রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হলেন মুন্সিগঞ্জের নিরব ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু বাজারে এলো ইনফিনিক্সের সবচেয়ে স্লিম স্মার্টফোন

ছাত্রদের মৌলিক যোগ্যতা কেন হচ্ছে না?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সাদেকুর রহমান।।

একজন ছাত্র নাহবেমীর জামাত থেকে দাওরা হাদিস পর্যন্ত ৭/৮ বছর পড়াশোনা করে এবং আরবি কিতাবাদী অধ্যয়ন করে।অথচ সে নিজ থেকে সহীহ ভাবে আরবি ইবারত পড়তে পারে না, তরজমা করতে পারেনা, আর তারকীব জিজ্ঞেস করলে তো চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এর কারণ কী? এর বহুবিধ কারণ রয়েছে। তবে মৌলিকভাবে ছয়টি কারণ আমরা চিহ্নিত করতে পারি।

এক,মীজান, নাহবেমীর ও হেদায়াতুন্নাহু এই জাতীয় বুনিয়াদী কিতাব গুলোর পাঠদান যথার্থ ও সঠিক পন্থায় না হওয়া।
দুই, কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা।
তিন, তালেবুল ইলমদের উদাসীনতা ও লক্ষ্য স্থির না করা।
চার, পরীক্ষা ও ভালো ফলাফল মুখী পড়াশোনা।
পাঁচ. বাংলা নোট ও গাইড নির্ভরশীল পড়াশোনা।
ষষ্ঠ কারণ: বুনিয়াদি কিতাবের দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও উপরের জামাতে তারাক্কি দিয়ে দেওয়া।

নীচে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হলো। প্রথম কারণ বুনিয়াদি কিতাবের পাঠদান যথার্থ ও সঠিক পন্থায় না হওয়া। এটা স্বীকৃত বিষয় যে, একটি বিল্ডিং এর মজবুতি ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে তার ফাউন্ডেশন মজবুত ও পাকাপোক্ত হওয়ার উপর। এসো আরবী শিখি, মিজান ও মুনশাইব, নাহবেমীর, রওজাতুল আদব, হেদায়াতুন নাহু ও নুরুল ইজাহ এজাতীয় বুনিয়াদি কিতাব গুলোর পাঠদান যথা নিয়মে হয় না। বিশেষ করে একজন ছাত্রের যে মৌলিক তিনটি যোগ্যতা থাকা আবশ্যক (অর্থাৎ সহীহ ভাবে আরবি ইবারত পড়ে তার তরজমা ও তারকীব করতে পারা )এটা মিজান, নাহবেমীর ও হেদায়াতুন নাহু এর উপর নির্ভর করে। কিন্তু আমরা এই তিনটি কিতাব যথা নিয়মে পাঠ দান করি না। ফলে ছাত্রদের কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জিত হয় না।

যেমন নাহবেমীর কিতাবের পাঠদান কেমন হওয়া উচিত? বিস্তারিত আলোচনা দাবি রাখে । তবে মৌলিকভাবে কয়েকটি পদ্ধতি হলো
ক, কিতাবের মৌলিক মাসআলা গুলো ভালো ভাবে মুখস্ত ও জবত করানো । খ.মিছাল গুলো ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া।
গ, ব্যাপক ইজরা ও তামরীন করা ।
ঘ,তারকীব করার মৌলিক ফাউন্ডেশন তৈরি করা।

প্রত্যেক ছাত্রের মধ্যে প্রথমত তারকিবের মৌলিক যোগ্যতা সৃষ্টি করা অর্থাৎ জুমলা ইসমিয়া ও জুমলা ফেলিয়া, খবরিয়া ও ইনশাইয়্যাহর পরিচয় তুলে ধরা। পর্যাপ্ত মিছাল পেশ করার মাধ্যমে ছাত্রদের তারকীবের ফাউন্ডেশনকে পাকাপোক্ত করা।যাতে সে যে কোন জুমলা সামনে আসলে অনায়াসে নির্ভুলভাবে ইনশাইয়্যাহ- খবরিয়া, ইসমিয়া -ফেলিয়া নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। তারপর পুরো নাহবেমীরের মিছালগুলোর বাকায়দা তারকীব করা। এতে করে ছাত্রদের জেহেন থেকে তারকীব ভীতি দূরীভূত হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের অনেকেই তারকীবের এই প্রাথমিক ফাউন্ডেশন পাকাপোক্ত না করেই নাহবেমীর কিতাবের শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত লাগাতার তারকীব করি ।এতে ছাত্রদের কাছে তারকীব পাহাড়ের মত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। যা কখনো উচিত নয়। আর অনেক প্রতিষ্ঠানে তো পুরো নাহবেমীরের মিছালগুলোর তারকীব করা হয় না । শুধু নামকাওয়াস্তে কিছু কিছু মিছালের তারকীব করানো হয়।

নাহবেমীর কিতাব পাঠদানের ক্ষেত্রে আমাদের যে ভুলগুলো হয়:
১. মূল মাসআলা মুখস্ত করানোর পরিবর্তে লম্বা লম্বা তাকরির করা হয়। ফলে ছাত্ররা মূল কথাটাই বুঝতে সক্ষম হয় না। বিশেষত ইসমে মুতামাক্কিন ষোল প্রকারের আলোচনাটি। এই অধ্যায়টিকে পড়ানোর সময় তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

প্রথমত, ১৬ প্রকারের শুধু নাম গুলো ব্ল্যাকবোর্ডে লিখিয়ে মুখস্থ করানো। দ্বিতীয়ত, অল্প অল্প করে প্রত্যেক প্রকারের এরাব মিছাল সহ মুখস্থ করানো। তৃতীয়ত, প্রত্যেক প্রকারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরে মুখে মুখে মুখস্ত করিয়ে দেওয়া। এবং প্রত্যেক প্রকার পড়ানোর সময় পর্যাপ্ত মিছাল পেশ করা।

এক্ষেত্রে আমরা অনেকেই প্রথম দিনেই প্রথম প্রকার থেকে লম্বা তাকরির শুরু করে দেই ফলে ছাত্ররা মূল কথাটাই বুঝতে পারে না। ২. নাহবেমীর কিতাবের সব অধ্যায় গুলো সমান্তরালে পড়ানো হয় অথচ কিছু অধ্যায় এমন রয়েছে যেগুলো প্রাথমিকভাবে ছাত্রের জন্য বোঝা কষ্টকর হয় কিন্তু সামনের অধ্যায়গুলো বুঝে পড়লে সেটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা সবগুলোকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সমান তাকরির করে পড়াই। ফলে কিতাব বুঝার ব্যাপারে ছাত্রদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। যেমন.أية اي এর হালাতের আলোচনা পুরো কিতাব শেষ করার পর করা। এতে ছাত্রদের জন্য বুঝা সহজ হয়।

ঠিক সেম কাজ আমরা হেদায়াতুন নাহুর বেলায়ও করে থাকি। যেখানে উচিত ছিল মূল কিতাবের ইবারত সহিহ ভাবে পড়া, তরজমা উঠানো ও তারকীব করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অর্থাৎ এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে পুরো বছর মূল কিতাবের ইবারতকে হল করা ।এবং মূল মাসআলা গুলো ভালোভাবে ইয়াদ ও যবত করানো। সেখানে আমরা তা না করে কাফিয়া ও শরহে জামির আন্দাজে লম্বা তাকরীর করতে থাকি। ইল্লত ও রুমুয বয়ান করতে থাকি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। নাহবেমীরে যা কিছু তারকীব বুঝে এসেছিল হেদায়াতুন নাহুতে এসে তাও ভুলে যায়।

দ্বিতীয় কারণ : ছাত্রদের উদাসীনতা ও লক্ষ্য স্থির না করা
অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমান ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থা খুবই ভয়ানক। নানান ফিতনা ইসলামে অনুপ্রবেশ করছে। যোগের বহু চ্যালেঞ্জ ওলামায়ে কেরামকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং আরো করতে হবে। এহেন পরিস্থিতিতে দক্ষ যোগ্য, প্রাজ্ঞ যোগ সচেতন আলেম হওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, আমাদের তালেবুল ইলেমদের অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, তারা এগুলোর কোন ভ্রুক্ষেপই করছে না। তারা তাদের লক্ষ্য স্থির করছে না। শুধু ক্লাস ডিঙিয়ে যাচ্ছে। মনে বদ্ধমূল করে নিয়েছে, দাওরা শেষে একটি নূরানী কিংবা হুফফাজুল কুরআন ট্রেনিং নিয়ে খেদমতে লেগে যাব।
অন্তত মৌলিক তিনটি যোগ্যতা যেকোন ভাবেই তাকে অর্জন করতে হবে, এর জন্য যত ধরনের মেহনত করার প্রয়োজন হয় করতে হবে এই মনোভাব তাদের মধ্যে দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর এর জন্য তাদের অনুসন্ধানী মনোভাব থাকা অপরিহার্য। অর্থাৎ এখানে রফা/নছব/জর কেন হল? কীভাবে হল? এর সমাধান কি? এখন এগুলো ছাত্ররা করতে মজা পায় না। নিজের মেধা ও ফিকির ব্যয় করে না।
এক কথায় তাদাব্বুর ও তাফাক্কুরের মাদ্দা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে ।

তৃতীয় কারণ: মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা।
ছাত্রদের মধ্যে ইলমের তলব পয়দা করা, তাদের নজরিয়া ও চিন্তাধারা দুরস্ত করা, তাদের আখলাক ও চলাফেরা সুন্দর করা, এবং মৌলিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য সুপরিকল্পিত মেহনতের মধ্যে সর্বদা লাগিয়ে রাখা কেবল একজন আদর্শ যোগ্য ও দরদী ও মেহনতি ওস্তাদের পক্ষেই সম্ভব। অর্থাৎ নিচের দিকের বুনিয়াদি কিতাব গুলো পড়ানোর জন্য একজন ওস্তাদের মধ্যে অন্তত তিনটি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে।
এক, ইস্তিদাদ তথা নাহু, সরফ ও আরবী লুগাতে পারদর্শী হওয়া।

দুই,ইজতিহাদ অর্থাৎ ছাত্রদের অবস্থা বিবেচনায় কিতাবটি কোন তরিকায় এবং কিভাবে পড়ালে সহজেই তারা বুঝতে পারবে এবং তাদের কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জিত হবে এ বিষয়ে স্পষ্ট চিন্তাশক্তির অধিকারী হওয়া।
তিন, ইশফাক ও মুজাহাদা অর্থাৎ ছাত্রদের প্রতি দরদী হওয়া এবং নিজে মেহনতী হওয়া।

অনেক ওস্তাদ এমন থাকেন যারা উপরের জামায়াতের কিতাব গুলো ভালোভাবে পড়াতে পারেন এবং ছাত্ররা তাদের পড়া বোঝে এবং সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু তাঁরা নিচের দিকের কিতাবগুলো ওভাবে পড়াতে পারেন না। ফলে ছাত্ররা তাদের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনা । কারণ নিচের দিকে ওস্তাদের মেহনত ছাত্রের চেয়ে বেশি করতে হয়। শুধু পড়িয়ে দিলে যথেষ্ট হয় না বরং খারেজী সময়েও তাদের খোঁজখবর নিতে হয়।পড়া বুঝেছে কিনা? মুখস্থ করেছে কিনা ? বারবার জিজ্ঞেস করতে হয়। হাতে কলমে শেখাতে হয়। কিন্তু অনেক ওস্তাদের তবিয়ত ঐরকম মেহনত করতে প্রস্তুত থাকে না।

তাই কর্তৃপক্ষের জন্য আবশ্যক হল, যোগ্য, দক্ষ, দরদী ও মেহনতি ওস্তাদকেই নিচের দিকের বুনিয়াদি কিতাব গুলোর পাঠদানের দায়িত্ব দেওয়া । এবং সব সময় তদারকি করতে থাকা, খোঁজখবর নিতে থাকা, দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে থাকা। এবং তাদের পর্যাপ্ত সম্মানী দেওয়া। কারণ তাঁরা শাইখুল হাদিস থেকে কোন অংশে কম নয়। কারণ ওই সকল মেহনতি ওস্তাদরা যোগ্য ছাত্র তৈরি করে না দিলে কাদেরকে তারা বুখারী পড়াবেন? কিন্তু আফসোস, এক্ষেত্রে অনেক কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন না। যথাযথ ফিকির করেন না। বরং গতানুগতিক একজন ওস্তাদকে এক একটি কিতাব পাঠদানের জন্য জন্য দায়িত্ব দিয়ে দেন। ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট। আদৌ কি তাঁর দ্বারা হক আদায় হচ্ছে কিনা? ছাত্রদের কাঙ্খিত যোগ্যতা তৈরি হচ্ছে কিনা এ বিষয়টির প্রতি তাঁরা লক্ষ্য রাখেন না। আমি জামিয়া রহমানিয়ায় দেখেছি, উপরস্ত মুরব্বিরা পুরো বছরেই মিজান এবং নাহবেমীর জামাতের খোঁজখবর নেন। বিশেষ করে বার্ষিক পরীক্ষার খেয়ার চলাকালীন সময়ে তাঁরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের জিজ্ঞেস করেন এবং দেখেন কতটুকু তারা নাহু- এবং সরফ আয়ত্ত করেছে? এতে ছাত্র এবং দায়িত্বশীল ওস্তাদ উভয় সচেতন হয়। ছাত্ররা পুরো বছরেই প্রচুর মেহনত করে। কারণ তাদের জানা আছে, বছর শেষে মুরুব্বিরা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন। না পারলে তখন অনেক শরম পেতে হবে। এবং আমাদের ওস্তাদের বদনাম হবে। উস্তাদও পুরো বছরেই সর্বোচ্চ শ্রম ব্যয় করেন যাতে কর্তৃপক্ষের কাছে লজ্জিত হতে না হয়। এভাবে উভয়ের সমন্বিত মেহনতের ফলে লেখাপড়ার মানোন্নয়ন হয়। ছাত্রদের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জিত হয়।

চতুর্থ কারণ: পরীক্ষা ও ভালো ফলাফল মুখী পড়াশোনা।
ছাত্র -ওস্তাদ সবাই কেমন যেন দিন দিন পরীক্ষা মুখী হয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে অনেক প্রতিষ্ঠানে মিজান এবং হেদায়াতুন নাহু এই দুটি জামাতের পরীক্ষা আঞ্চলিক বোর্ডের অধীনে হয়। সেসব মাদ্রাসা গুলোতে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য সব কিতাবকে সমান ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সমান্তরালে মেহনত করা হয়। অথচ এই দুই জামাতের সব কিতাবের মান সমান নয় বরং দুইটা বা তিনটা হলো যোগ্যতা তৈরীর কিতাব। আগে যোগ্যতা তৈরি করার জন্য ঐ কিতাবগুলোকে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হতো এবং অধিক মেহনত ও পরিশ্রম করা হতো এবং ঐ জামাতের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জনের প্রতি বেশি জোর দেওয়া হত। ফলে অধিকাংশ ছাত্রদের মৌলিক যোগ্যতা অর্জন হয়ে যেত। এখন পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সব কিতাবের বেলায় সমান মেহনত করা হয়। ফলে বুনিয়াদি কিতাবের কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন হয় না।

পঞ্চম কারণ: বাংলা নোট ও গাইড নির্ভরশীল পড়াশোনা।
এখনকার ছাত্ররা কিতাবের কোন অংশ না বুঝলে নিজেদের মেধা ব্যয় করে না। ফিকির করে না ।ওস্তাদের কাছে যায় না। বরং সরাসরি বাংলা নোট দেখে নেয়। অনেকে তো মেইন কিতাব সামনে না নিয়ে গাইড দেখেই পড়া মুখস্ত করে নেয়। আর এই মহামারী উপরের জামাত গুলোতে তো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নিচের বুনিয়াদি জামাত গুলোতেও শুরু হয়ে গেছে। হেদায়াতুন্নাহ থেকেই ছেলেরা বাংলা গাইড ব্যবহার শুরু করে দেয়। নিজেদের মেধা ও ফিকির ব্যয় করে না। যেহেতু তারা প্রাথমিক শিক্ষার্থী প্রথম প্রথম আরবি ইবারত সহিহ ভাবে পড়তে, তরজমা করতে এবং তারকীব করতে কষ্ট হবে, কঠিন মনে হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তা সত্ত্বেও ওস্তাদের নেগরানীতে লাগাতার মেহনত-মোজাহাদা পরিশ্রম করতে থাকলে এক সময় তা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ছাত্ররা এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করে না। পাশাপাশি অধিক পরিমাণে আরবী কিতাব ও হাশীয়া মুতালাআ করার অভ্যাস করে না। অথচ এমনটা করতে পারলে আরবী ইবারতের কাঠামোটা অন্তরে গেঁথে যেত।

ষষ্ঠ কারণ: বুনিয়াদি কিতাবের দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও উপরের জামাতে তারাক্কি দিয়ে দেওয়া।

অনেক ছাত্র এমন থাকে যারা বিভিন্ন বাংলা নোট গাইড ইত্যাদি পড়ে মুখস্ত করে পরীক্ষা দিয়ে দেয়।আর ফলাফল ও ভালো হয় কিন্তু তাদের মৌলিক যোগ্যতা তৈরি হয় না। বুনিয়াদি কিতাবে বেশ দুর্বলতা থাকে। তা সত্ত্বেও আমরা ফলাফলের ভিত্তিতে উপরের জামাতে তারাক্কি দিয়ে দেই। এভাবে মৌলিক যোগ্যতা না হওয়ায় তাদের জন্য কিতাব বোঝা কঠিন হতে থাকে হতে থাকে এবং বোঝা দিন দিন বাড়তে থাকে। ফলে সেই দুর্বলতা তারা আর কাটিয়ে উঠতে পারে না ।এজন্য অন্তত নিচের দিকের ছাত্রদেরকে বিশেষ করে মিজান, নাহবেমীর ও হেদায়াতুন্নাহু জামাতের ছাত্রদের তারাক্কি দেওয়া উচিত নয়।

পরিশেষে আমি বিনীত নিবেদন করতে চাই, নিচের দিকের বুনিয়াদি কিতাব গুলো কিভাবে পড়াতে হবে এ বিষয়কে সামনে রেখে বড়দের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অতিব জরুরী। বেফাক কেন্দ্রিক যা হচ্ছে এতোটুকু যথেষ্ট নয়।আর এত অল্প সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় না। নূরানী এবং হুফফাজুল কুরআন যেরকম মাসব্যাপী শুধু একটা বিষয়কে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে ঠিক তেমনি ভাবে শুধু নাহু সরফ বিষয়ে ও এভাবে প্রশিক্ষণ হওয়া জরুরী। প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ করা হবে। নূরানী এবং হিফজ বিভাগের ওস্তাদের ব্যাপারে দায়িত্বশীলগন যেভাবে ফিকির করেন, যেকোন বোর্ড থেকে তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। নিচের দিকের কিতাবগুলো পড়ানোর জন্য এরকম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ ওস্তাদ নির্বাচন করা জরুরি।এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমাদের বড়রা যদি আশু পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ছাত্রদের থেকে যোগ্য মুদাররিস পাওয়া বড় দায় হবে। আল্লাহ আমাদেরকে যথাযথ দ্রুত সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণের তৌফিক দান করুন। আমিন
ছাত্রদের মৌলিক যোগ্যতা কেন হচ্ছে না?

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন র.দারুল কুরআন মাদ্রাসা চৌধুরী পাড়া, ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ