মো: সোহেল রানা: হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস পবিত্র সাবান মাস চলছে। এরপরেই শুরু হচ্ছে আল্লাহ তাআলার রহমত বরকত মাগফেরাত নাজাতসহ অনেক কল্যাণের মাস রমজানুল মোবারক শুরু হবে। এ মাসে ত্রিশটি রোজা রাখা হয়। তাই রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই পূর্ণতা ও সফলতা অর্জনের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিৎ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো বান্দা যে কোনো ভালো কাজ বা আমল যদি যথাযথভাবে উত্তম উপায়ে করে; তবে সে আমল বা কাজ আল্লাহ তাআলা পছন্দীয় হিসেবে গ্রহণ করেন।’ (তাবারানি)
সুতরাং রমজানের আমল বা কাজ যেনতেনভাবে নয়; বরং পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আদায় করতে হবে। আর তাতে আল্লাহ সন্তুষ্টিও পাওয়া যাবে।
জেনে নিন যেভাবে রোজার প্রস্তুতি নিবেন:
তাওবাহ-ইসতেগফার করা: রমজানের আগের সব গোনাহ থেকে তাওবাহ ইসতেগফার করতে হবে। আগে থেকে তাওবাহ-ইসতেগফার করে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ লাভে নিজেকে প্রস্তুত করা খুবই জরুরি। এতে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার আগের সব গোনাহ মাফ করে দিয়ে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ দিয়ে জীবন সুন্দর করে দেবেন। এ জন্য বান্দা বেশি বেশি পড়বে-
- اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ : আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন।
রমজানের সব উপকারিতা সম্পর্কে জানা: বরকতময় মাস রমজান সম্পর্কে কুরআন-সুন্নায় যেসব ফজিলত মর্যাদা ও উপকারিতার বর্ণনা রয়েছে, রমজান শুরু হওয়ার আগেই সেসব সম্পর্কে জেনে নেয়া। সেসব উপকার পেতে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার প্রস্তুতি নেয়া।
এছাড়া মানসিকভাবে বারবার এ কথার স্মরণ ও নেক আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা-
- اَللَّهُمَّ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ : আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।’
মানসিক প্রতিজ্ঞা নেওয়া: রমজান মাসে পরিপূর্ণ সওয়াব ও ক্ষমা পেতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। জীবনভর যত গোনাহ করেছি এ রমজানে সেসব গোনাহ বা অন্যায় থেকে পরিপূর্ণ ক্ষমা পেতে হবে। সবচেয়ে বেশি সওয়াব পেতে হবে।
প্রতিজ্ঞা এমনভাবে করা যে, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা নিজের কাজ যেমনই হোক, আমি আমার বিগত জীবনের সবে গোনাহ থেকে নিজেকে মাফ করিয়ে নেব। আমার প্রতি আল্লাহকে রাজি-খুশি করিয়েই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
কাজা রোজা আদায় করা: রমজান শুরু হওয়ার আগে বিগত জীবনে অসুস্থ হওয়ার কারণে বা সফরের কারণে রমজানের ফরজ রোজা কাজা হয়ে থাকলে তা যথাযথভাবে আদায় করে নেয়া। বিশেষ করে মা-বোনদের ভাঙতি রোজা থাকতে পারে। তাই রমজানের আগে শাবান মাসের এ সময়ে রোজা আদায় করে নেয়া।
এতে দুইটি ভালো আমল বাস্তবায়িত হবে:
প্রথমটি : বিগত জীবনের কাজা রোজা আদায় হবে। রমজানের রোজা পালনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
দ্বিতীয়টি : সুন্নাতের অনুসরণ হবে। রমজানের আগের মাস শাবানে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে। কাজা রোজা আদায় করার মাধ্যমে সুন্নাতের অনুসরণও হয়ে যাবে।
ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করা: আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে অনেক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। তাই সাধারণভাবে ক্ষমা পেতে হলে দুইটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষমা প্রার্থনা করে তা থেকে ফিরে আসতে হবে। তাহলো-
- শিরক থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক না করা। কেউ ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়, ছোট বা বড় শিরক করে থাকলে রমজান আসার আগেই তা থেকে তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে ফিরে আসা।
- হিংসা থেকে মুক্ত থাকা। কারো প্রতি কোনো বিষয়ে হিংসা না করা। কারণ হিংসা মানুসের সব নেক আমলকে সেভাবে জালিয়ে দেয়; যেভাবে আগুন কাঠকে জালিয়ে দেয়। তাই হিংসা পরিহার করে মনকে ক্ষমা লাভে স্বচ্ছ রাখা।
ফরজ রোজার নিয়ম সর্ম্পকে জানা: রমজান মাস শুরুর আগেই রোজা পালনের মাসআলা-মাসায়েল তথা নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে জেনে নেয়া জরুরি। ঙাতে কোন কারণে রোজা নষ্ট বা মাকরূহ না হয়।
আগের রমজানের ভুল বা অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা: রমজান মাস আসার আগে বিগত রমজানের নেক আমলগুলো করতে না পারার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। যেমন-
- কেন নিয়মিত কুরআন অধ্যয়ন করা হয়নি?
- কেন তারাবিহ পড়া হয়নি?
- কেন দান-সহযোগিতা করা হয়নি?
- কেন ইতেকাফ করা হয়নি?
- কেন রোজাদারকে ইফতার করানো হয়নি?
- কেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের স্ঙ্গে আদায় করা সম্ভব হয়নি?
- কেন কুরআন-সুন্নার আলোচনায় বসা হয়নি?
- কেন রমজানের পরিবারের লোকদের হক আদায় করা হয়নি?
- কেন রমজানের পাড়া-প্রতিবেশি বা আত্মীয়দের হক আদায় করা হয়নি?
এ বছর রমজান আসার আগে আগে চিহ্নিত কারণগুলো থেকে নিজেকে বিরত রেখে কিংবা প্রস্তুতি গ্রহণ করে কল্যাণকর সব নেক আমলগুলো করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
শাবান মাসে আমলে থাকা: রমজান মাসের বেশি বেশি ইবাদত করতে এবং রোজা পালনের জন্য শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বেশি বেশি কুরআন পড়াসহ সকল ধরণের ইবাদতে নিজেকে যুক্ত রাখা।
রমজানের রুটিন করা: রমজান মাসে কোন সময়ে কোন আমল করবেন বা কতটুকু সময় ব্যায় করবেন তা নিয়ে একটি সম্ভাব্য রুটিন তৈরি করে নেয়া। এতে রমজানে চরম ব্যস্ততা থাকলেও নেক আমলসহ অন্যান্য কাজগুলোও ইবাদতের মধ্যেই কেটে যাবে।
বেশি বেশি দোয়া পড়া: রমজানের আগে আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করা। হে আল্লাহ! আমি যতই চেষ্টা করি, তোমার তাওফিক বা ইচ্ছা না থাকলে আমি যেমন রমজান পাবো না। আবার রমজান পেলেও রবকত লাভে সক্ষম হবো না। সুতরাং রমজান ও রমজানের নেক আমল করার তোমার কাছে চাই।
হে আল্লাহ! রমজানে যত মানুষ সৌভাগ্যবানদের কাতারে নাম লেখাবে, তাদের কাতারে আমাকেও শামিল করো; হে রাব্বুল আলামিন।
আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম উম্মাহকে রমজানের আগে উল্লেখিত প্রস্তুতি যথাযথভাবে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। একই সাথে সেই অনুসারে আমাদেরকে আমল করা তাওফিক দান করুন। আমিন।
-এসআর