শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তিস্তা ও সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে : পররাষ্ট্র সচিব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আজ বলেছেন, নয়াদিল্লি দীর্ঘ মুলতবি থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করা এবং সীমান্তে হত্যা বন্ধ নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভারতী পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা এখানে আলোচনাকালে এ আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন।

আলোচনার পরে ব্রিফিংকালে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, "তারা (ভারত) আশ্বস্ত করেছে যে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যদিও চুক্তিটি নিয়ে নয়াদিল্লি এবং রাজ্য সরকারের (পশ্চিমবঙ্গ) মধ্যে মতপার্থক্য এখনও সমাধান হয়নি।"

মাসুদ আরো বলেন, ভারতীয় পক্ষ সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এই বলে যে, তারা "বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে একটিও প্রাণহানি দেখতে চায় না"।

এর আগে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষের নেতৃত্ব দেন মাসুদ ও কোয়াত্রা।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেছেন যে, ঢাকা সীমান্ত হত্যা ইস্যুটি জোরালোভাবে উত্থাপন এবং সীমান্তে হত্যা শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

তিনি বলেন, যেকোনো দুঃখজনক ঘটনা এড়াতে চোরাচালান কমাতে দুই সীমান্ত বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ ভারতীয় পক্ষ থেকে বিদ্যমান সকল বাণিজ্য বাধা অপসারণ এবং বাংলাদেশে পণ্যদ্রব্যের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভারতের সহায়তা চেয়েছে।
মাসুদের বলেন, আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা তাদের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। "আমরা ভারতের সমর্থন চেয়েছি যাতে আমরা নেপাল এবং ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে পারি"।

তিনি বলেন, ভারতীয় পক্ষ এই বিষয়ে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে এবং আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুতের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে তার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

মাসুদ বলেন, “আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাব, যাতে আমরা নেপাল থেকে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। ঢাকা অদূর ভবিষ্যতে ভারত থেকে আরও বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করবে বলে আশা করছে।

মাসুদ বলেন, ঢাকা বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের আরো সমর্থন চেয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আশা প্রকাশ করেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের সভাপতিত্বে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি২০ সম্মেলনে যোগ দিয়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবেন।

মাসুদ বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এফওসিকে জানিয়েছেন যে, নয়াদিল্লি তার প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার নীতির অধীনে ঢাকার সাথে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতীয় ঋণের আওতায় যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে সেগুলো নিয়েও তারা আলোচনা করেছেন।
এদিকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, কোয়াত্রা এবং মাসুদ এফওসি চলাকালীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব দিক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।
উভয় পক্ষই ভারত সরকারের অর্থায়নে লাইন অফ ক্রেডিট, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সংযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।

তারা যৌথ স্বার্থের বিষয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ বাড়াতে সম্মত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই প্রেক্ষাপটে, জি-২০-এর ভারতের সভাপতিত্বের সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য ভারত উন্মুখ।

উভয় পক্ষ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদের জন্য একে অপরের আসন্ন প্রার্থিতাকে পারস্পরিক সমর্থন দিতে সম্মত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে গত দশকে, ভারত ও বাংলাদেশ নেতাদের পর্যায়ে সহ উচ্চ পর্যায়ের সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব এফওসি-তে ভারতীয় পক্ষের নেতৃত্ব দিতে গত সন্ধ্যায় এখানে এসেছিলেন। সর্বশেষটি এফওসি ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন কোয়াত্রা।

-এসআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ