জাহিদুল ইছলাম: হযরতজী মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) এর ক্ষুধা দারিদ্রতা ও অভাব অনটন: শাইখুল হাদীস যাকারিয়া (রহঃ) বলেন, চাচাজান হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) সম্পর্কে অনেক স্থানে বিভিন্ন ঘটনা অতিবাহিত হয়েছে। রমাযানে ইফতার ও সাহরীতে শুধু বন্য ডুমুর খেয়ে কোনও রকম জীবন ধারণ করতেন। কয়েক দিন হয়ে গেল পয়সা নেই বলে একটি জরুরী চিঠি তিনি ডাকে পাঠাতে পারেন নি। এধরনের আরাে ঘটনা ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে।
সাওয়ানে ইউসুফী’ গ্রন্থে লিখা আছে, বস্তি নেযামুদ্দীনে মাওলানা ইউসুফ সাহেবের শৈশবকাল বড় কষ্ট ও অভাবের মধ্যে কেটেছে। ঘরে অনেককে ক্ষুধার্ত থাকতে হত। কিন্তু কেউ তাদের সম্পর্কে জানতে পারত না। শুধু পরিবারের লােকেরা কিংবা বিশ্বস্ত কেউ থাকলে তাদের অবস্থা জানতে পারত। খাদেম, ভক্ত, শিশু, বৃদ্ধ সকলেই ক্ষুধার্ত থেকেও হাসি-খুশি থাকতেন। চরম ধৈর্য ও অল্পেতুষ্টিতার গুণে সকলে গুণান্বিত ছিলেন।
মাওলানা ইউসুফ সাহেব নিজেই একসময় জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে বলেছেন-হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (রহঃ) জীবনে অনেক সময় ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন যাপন করেছেন। মাদ্রাসা কাশিফুল উলুমে যারা কাজ করতেন, তারাও এটা অনুধাবন করতেন। একসময় লাগাতার কয়েকদিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় কেটে গেল। ভিতরে বাইরে কোথাও আহার করার মতাে কিছু ছিল না। হযরতজী নিজ হুজরা থেকে বের হয়ে হাউজের কিনারায় মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে একত্র করে বললেন, শােন! আমার কারণে তােমরা পেরেশান হয়াে না। এখান থেকে তোমরা অন্য কোথাও চলে যেতে পার। অন্য মাদ্রাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতে পার। আমি একা থাকলে হাউজের পানি পান করেই দিন যাপন করতে পারব আমার ঘরে এবং মাদ্রাসায় একটি পয়সাও নেই।
হযরতজীর এ কথার জবাবে মাদ্রাসার সকলেই একবাক্যে আরজ করলেন, হযরত! আমরাও আপনার সাথে আছি। হাউজের পানি পান করে হলেও এখানে থাকব। হযরত এ জবাব শােনে আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন। দু'চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে এল। এরপর হুজরায় চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে বললেন, আল্লাহ তা'আলা বরকত দিবেন এবং জটিলতা ও সংকট দূর করবেন।
হযরত মাওলানা ইউসুফ (রহঃ) বলেন, এরপর থেকে কোথাও হতে আটা আসলে বরকতের জন্য একটি সিন্দুকে রেখে দেওয়া হত। সেখান থেকে বের করে এনে এনে ব্যবহার করা হত। একসময়ের ঘটনা, সিন্দুকে আটা বিলকুল ছিল না। কয়েকদিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় কেটে গেল।
আমি সিন্দুক খুলে ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আটাগুলাে একত্র করলাম। এগুলাে এত কম ছিল যে, তা দ্বারা কয়েকটি টিকা বানানােই সম্ভব ছিল। মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) হুজরা থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে এ কাজে দেখে ফেললেন, জিজ্ঞেস করলেন আমি কি করছি। আমার অবস্থা দেখে এমনিতেই বুঝে ফেললেন, তখন তার চেহারায় এক বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করলাম । এরপর তিনি পুনরায় হুজরায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর এসে বললেন, ইউসুফ ! এখন থেকে এই চার দেওয়ালের ভিতরে ক্ষুধার্ত কেউ থাকবে না।
-এটি