আবু তালহা তোফায়েল ।। আল-রশীদ মসজিদ কানাডার সর্বপ্রথম মসজিদ। ১৯৩৮ সালে আলবার্টা প্রদেশের এডমন্টন শহরে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত দেশ কানাডা। ১০টি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত দেশটি আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও শীতলতম দেশ। সিআই-এর তথ্য অনুসারে এর আয়তন ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭০ বর্গ কিলোমিটার। দেশটির মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৭৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ২৩১ জন। এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত বর্তমানে ৬.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ১৯৩১ সালে জনশুমারির তথ্যমতে দেশটিতে নিবন্ধিত মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৬৪৫ জন।
উইকিপিডিয়ার তথ্যনুসারে জানা যায়, নর্থ ডাকোটা ও Iowa প্রদেশের মাদার মসজিদ এর পর উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় মসজিদ। ১৯৩৮ সালে আলবার্টার এডমন্টনে নির্মিত এই মসজিদকে আবার উত্তর আমেরিকার প্রথম মসজিদ মনে করা হয়। সে সময় কানাডায় ৭০০ জন মুসলিম বাস করত। হালাবি হামদুন (Hilwi Hamdon) নামক একজন মহিলা এডমন্টনের মেয়র জন ফ্রাই সাথে সর্ব প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের জন্য আলোচনা শুরু করেন। তিনি ও তার আরো কিছু বন্ধু মিলে মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনিয় অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। খ্রিস্টান, ইহুদী ও মুসলিমরা এই মসজিদ তৈরীতে অর্থ সাহায্য করেন।
তারা মেয়রকে জানান যে এই অঞ্চলের সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয় আছে; তাই নিজস্ব জায়গায় প্রার্থনার স্থান মুসলিমদের প্রাপ্য। মেয়র পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যে রয়্যাল আলেকজান্দ্রা হাসপাতালের পাশের জমি বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন।
নির্ধারিত জমি ক্রয় ও মসজিদ নির্মাণে মুসলিমদের পাশাপাশি স্থানীয় খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। তাতে ইউক্রেনীয়-কানাডিয়ান ঠিকাদার মাইক ড্রেউথ (Mike Drewot) নামক একজন অর্থডক্স চার্চের আদলে মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৯৩৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মসজিদটি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। ধীরে ধীরে মসজিদটি স্থানীয় মুসলিম পরিবারগুলোর মূলকেন্দ্রে পরিণত হয়। বর্তমানে মসজিদটি ফোর্ট এডমন্টন পার্কের অধীনে রয়েছে।
আরও জানা যায়, বিশিষ্ট ভারতীয় ইসলামি চিন্তাবিদ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী এই মসজিদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেন।
আল-রশিদ মসক ডটসিএ-সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে শহরটিতে মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাজারের বেশিতে পৌঁছে। ফলে ১৯৮২ সালে আল-রশিদ মসজিদে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আরেকটি মসজিদ তৈরি করা হয়। তা শুধু নামাজের স্থান নয়; বরং বিয়ের অনুষ্ঠান, জানাজার নামাজ, আলোচনা অনুষ্ঠানসহ কানাডার অন্যতম ইসলামিক সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে একসঙ্গে ২০ হাজারের বেশি মানুষ সমবেত হওয়া যায়।
২০১৩ সালে মসজিদ আল-রশিদ পরিদর্শনকালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মুসলিম কমিউনিটির ভূমিকা তুলে ধরেন। কানাডার সংবিধানে স্বাধীনতা ও অধিকারের নীতিতে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ নির্মাণে মুসলিম সমাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বর্তমানে কানাডায় মসজিদের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১৫০টি, কোনো সূত্রমতে দেড় হাজারটি। দিন দিন মুসলিম জনসংখ্যার পাশাপাশি মসজিদের এ সংখ্যা বেড়েই চলছে। ৭০ শতাংশের বেশি মুসলমান নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করে। প্রতিটি মসজিদে জুমায় একাধিকবার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদগুলোতে দৈনন্দিন উপচে পড়া ভিড় লক্ষণীয়। প্রায় সব মসজিদে এক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে অনায়াসে নামাজ আদায় করতে পারে।
লেখক: তরুণ আলেম ও কলামিস্ট।
-এটি