আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: শিক্ষাকে কোনো অবস্থাতেই বেধে রাখা সম্ভব নয়। শিক্ষা একটি চলমান প্রবাহ, চলতে চলতে সে নানারূপে নানা বর্ণে নানা ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে চলেছে। তাই যুগ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে আগেও পরিবর্তন এসেছে, ভবিষ্যতেও সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে- কিন্তু সেটি অবশ্যই মহান পূর্বসূরীদের বাতানো পথেই হতে হবে।
‘পরিবর্তিত চলমান বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থায় কওমি মাদরাসা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সেমিনারে অংশ নিয়ে গবেষক আলেমরা এ মন্তব্য করেছেন।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর তোপখানা রোডের হোটেল রয়েল প্যালেসে বাংলাদেশ কওমি ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্বখ্যাত ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের উচ্চতর হাদিস বিভাগের প্রধান আল্লামা আবদুল্লাহ মারুফী।
তিনি বলেন, মানুষের শৈশবে যা অন্তরে বদ্ধমূল হয়, তার প্রতিক্রিয়া পুরো জীবনে থাকে। সন্তান বড় হয়ে স্কুলে পড়ুক বা মাদ্রাসায় সেটি পরের কথা,শৈশবেই যেন তার প্রাথমিক কিছু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন হয় সেটির গুরুত্ব দিতে হবে।এ জন্য মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা গেলে সেটি সবার জন্য উপকারী হবে। দ্বীনিয়াতের মাধ্যমে সর্বস্তরের মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষার আওতায় আনতে হবে।
আল্লামা মারুফী বলেন, দ্বীনের সহীহ শিক্ষার এই স্রোতধারা হয়ত যুগচাহিদার প্রেক্ষিতে কখনো কখনো কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করবে, কিন্তু সহীহ তালীমের ব্যবস্থা কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ায় অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসার সিলেবাসে কিছুটা সংস্কার হতে পারে। বিভিন্ন কিতাব উর্দু ফার্সির পরিবর্তে বাংলা ভাষায়ও পড়ানো যেতে পারে।এছাড়া আরবি ও ইংরেজি ভাষায়ও গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, উপমহাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শে।দারুল উলুম প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল- ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি নিত্যনতুন সৃষ্ট ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, ফিতনা ইত্যাদি থেকে জাতিকে সতর্ক করা এবং মুসলমান জাতিকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে আধুনিক সভ্যতার নামে আগ্রাসনকে রুখে দিয়ে ইসলাম বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তাই যুগ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে আগেও পরিবর্তন এসেছে, ভবিষ্যতেও সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে
আলোচকরা বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্নতার কারণে উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে চরম বিশৃংখলা ও বিভক্তি দেখা দেয় সূচনালগ্ন থেকেই। মোল্লা ও মিস্টার বলে দুটি দল দাঁড়ায়। বিদগ্ধজনরা এই বিভক্তি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিগত একশ বছরেও এর কোনো বিহিত হয়নি। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রস্তাব সামনে এসেছে। সেসব প্রস্তাব সামনে রেখে নিয়মিত আলোচনা পর্যালোচনা হওয়া আবশ্যক।
দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে কয়েকটি সিলেবাস প্রচলিত রয়েছে উল্লেখ করে এগুলোর সমন্বয়েরও দাবি উঠেছে আলোচনা সভায়।
বক্তারা বলেন, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে আজ থেকে বিশ বছর আগেই ইংরেজি ও কম্পিউটার বিভাগ চালু করা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও আমাদের এখানে একেবারেই থেমে আছে সবাই।
সম্প্রতি দারুল উলুম দেওবন্দ তাদের সিলেবাসে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষার্থীদেরকে এসএসসি লেভেল পর্যন্ত জেনারেল সিলেবাস পাঠদান এবং এসএসসি লেভেলের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সার্টিফিকেট নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা।
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো যেহেতু সবক্ষেত্রেই দেওবন্দের অনুসরণ করে থাকে, এই ক্ষেত্রেও তাদের দেওবন্দের অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয় বৈঠক থেকে।
বাংলাদেশ কওমি ছাত্র ফোরামের আহ্বায়ক তানজিল আমিরের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জামিল সিদ্দিকীর পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন- মাদরাসা দারুর রাশাদ মিরপুরের মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মাদ সালমান, জাতীয় দীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী, দৈনিক নয়াদিগন্তের সহ-সম্পাদক ও গবেষক আলেম মাওলানা লিয়াকত আলী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার সাবেক অধ্যাপক ড. হাফেজ এবিএম হিজবুল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মুহাদ্দিস মাওলানা ওলিউর রহমান আজহারী, চিন্তাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক মাওলানা হুসাইনুল বান্না, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহতামিম মাওলানা মাসউদুর রহমান, ও দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের পরিচালক মুফতি সালমান আহমাদ।
আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমি ছাত্র ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা বান্দা মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ , সিনিয়র সদস্য মাওলানা সানাউল্লাহ, দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মাওলানা সাজিদ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
এছাড়া দেশের আরও শীর্ষ আলেম, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও প্রতিনিধিত্বশীল তরুণ আলেমরা উপস্থিত ছিলেন।