আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: জাতির পিতা হত্যার পর দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, তা যেন ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই, আমাদের মতো কেউ যেন আর বিচারহীনতার (ইনডেমনিটি) কষ্ট না পায়, বাবা-মা-ভাই মারা গেল, তার বিচার চাইতে পারব না, আবার তাদেরই গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক বলা হয়; এটা সত্যিই দেশের জন্য, জাতির জন্য, স্বাধীনতার জন্য, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এ রকম অবস্থায় যেন বাংলাদেশ আর কোনো দিন না পড়ে। ’
তিনি বলেন, জাতির পিতা সারাটা জীবন এ দেশের মানুষের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করলেন, তাঁকে হত্যা করে প্রকৃতপক্ষে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকেই হত্যা করা হয়েছিল। আর এই হত্যাকারীদের বিচার যাতে না হয়, সে জন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। আর এর মাধ্যমে খুনিদের বিচারের হাত থেকে শুধু যে মুক্তি দিয়েছিল তাই নয়, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে খুনিদের পুরস্কৃতও করে। বাংলাদেশে শুরু হয় বিচারহীনতার এক সংস্কৃতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এই ইনডেমনিটি আইন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। এর মাধ্যমে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ অবারিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই সুপ্রিম কোর্টকে, কারণ এই অর্ডিন্যান্স যাতে বাতিল না হয় সে জন্য আমাদের বিরোধী পক্ষ সব সময় সক্রিয় ছিল। কাজেই কোর্টে যখন এটা আসে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের রায়ে এটা বাতিল করার নির্দেশ দেন এবং পার্লামেন্টে আমরা তা বাতিল করি। ’
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার রশিক ভাই শাহ এবং বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ‘ন্যায়বিচারের অনির্বাণ সুবর্ণ যাত্রা’ শীর্ষক একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ টাকার স্মারক নোট এবং স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। তিনি ৫০ বছরের পথচলায় সুপ্রিম কোর্ট এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ইংরেজি কপির মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিম্ন আদালতের বিচারকদের মধ্যে ছয়টি ক্যাটাগরিতে এই প্রথমবারের মত প্রবর্তিত ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ তুলে দেন।
পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা তথা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ দেওয়া হয়েছে। আর দলগতভাবে এ পদক পেয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
ব্যক্তিগতভাবে পদকপ্রাপ্ত পাঁচ ক্যাটাগরির বিচারক হলেন জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা, অতিরিক্ত জেলা জজ ক্যাটাগরিতে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সউদ হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে নওগাঁর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. খোরশেদ আলম, সিনিয়র সহকারী জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ মোসা. রেশমা খাতুন এবং সহকারী জজ ক্যাটাগরিতে রংপুরের সহকারী জজ মো. হাসিনুর রহমান মিলন।
আর দলগতভাবে পদকজয়ী জেলার পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিন পদক গ্রহণ করেন।
ব্যক্তিগতভাবে পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম সোনার পদক ও দুই লাখ টাকার চেক এবং ময়মনসিংহ জেলাকে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম সোনার পদক এবং পাঁচ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
-এসআর