রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র মরক্কো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ মরক্কো। যা দুই সাগরের দেশ বলেও পরিচিত। দেশটির পূর্বে আলজেরিয়া, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও স্পেন, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর।

মরক্কো পশ্চিম সাহারা এলাকার মালিকানা দাবি করে এবং ১৯৭৫ সাল থেকে ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা দখলে রেখেছে। মরক্কো ইউরোপের খুব কাছে, অথচ ইউরোপ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মরক্কোতে ঐতিহ্যের পাশাপাশি প্রগতির মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। আধুনিকতার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার মিশেল ঘটেছে।

এই দেশে ইসলাম ও আধুনিকতার মহামিলন ঘটেছে। মরক্কোর রাজধানী রাবাতে চোখে পড়ে বিলাসবহুল গাড়ি, সেখানেই উট ছাড়া ভ্রমণ অসম্ভব। মরক্কো ১৬টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলোকে ৬২টি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে। দেশটিতে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব। শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য ইউনেসকো দেশটিকে ২০০৬ সালে পুরস্কৃত করে।

খ্রিস্টপূর্ব আট হাজার বছর আগে মরক্কোয় জনবসতি গড়ে ওঠে। তখন দেশটি অনুর্বর আর বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক মরুভূমি ছিল। বারবার, ফোনেশীয়, ইহুদি ও সাব-সাহারার লোকেরা ক্রমান্বয়ে বসতি গড়ে এখানে। শুরু থেকেই বারবারদের প্রাধান্য ছিল। ফোনেশীয়রা ছিল বণিক জাতি, প্রাচীনকালে তারাও কিছুটা প্রাধান্য বিস্তার করে। ফলে রোমানদের আধিপত্য বাড়ে। এক পর্যায়ে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চম শতকে রোমানরা সরে গেলে পূর্ব জার্মান বংশোদ্ভূত ভেন্ডাল আর গ্রিক বাইজেন্টাইনরা পর্যায়ক্রমে দেশটি শাসন করে। তবে বিস্তৃত মরক্কোর বেশির ভাগ অংশই ছিল বারবারদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। বিচ্ছিন্নভাবে তারা বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করত।

প্রধান ধর্ম ইসলাম। সিআইএ দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য মতে, মরক্কোর মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ সুন্নি মুসলমান। মাত্র ১ শতাংশের মধ্যে আছে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বাহায়ি। দেশটির মুদ্রার নাম মরোক্কান দিরহাম। প্রধান রপ্তানি পণ্য খনিজদ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ থেকে তৈরি খাদ্য ও ফল। প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশ মরক্কোয় মসজিদ, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে ‘নতুন দিনের ডাক’ দিচ্ছে নারীরা।

দামেস্কের উমাইয়া খলিফার আদেশে উকবা ইবনে নাফি (রহ.)-এর নেতৃত্বে মরক্কোয় অভিযান চালানো হয়। ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে তারা দেশটিতে প্রবেশ করে। দীর্ঘ ১০০ বছরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও কলোনিকে একত্র করে একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। ইসলাম এখানে নিয়ে আসে উন্নত সংস্কৃতি ও উন্নত জীবনাচরণ। ইসলামের আলোকে গঠিত হয় একটি নতুন সমাজ। ব্যাপক হারে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। উন্নত আরবীয় সংস্কৃতিতে ছাপিয়ে যায় বারবার আর যাযাবর জীবন। ১৬৬৬ সালে বর্তমান বাদশাহর পূর্বপুরুষরা আসার আগে কয়েক শ বছরে দেশটিতে নানা উত্থান-পতন হয়। আব্বাসি ও উমাইয়া খেলাফতের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রাজত্বের উদ্ভব ঘটে। শেষের দিকে স্পেনে মুসলমানদের পতন প্রভাবিত করে দেশটিকে। খ্রিস্টান আগ্রাসনের কবলে পড়ে মরক্কো। আগ্রাসনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ১৬৬৬ সালে আলউতি রাজবংশ (বর্তমান রাজবংশ) দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর ফেস শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় আল-কারাউইন ইউনিভার্সিটি। এটি বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। মরক্কো একমাত্র আফ্রিকান দেশ, যা আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য নয়। সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশটি আরব লীগ, ওআইসি, গ্রুপ অব ৭৭ ইত্যাদি জোটের সদস্য। আরবি শব্দ মরক্কোর অর্থ পশ্চিমের রাজ্য। এই অঞ্চল আল-মাঘরেব বা দূরতম পশ্চিম নামে পরিচিত। মরক্কো নামটি এসেছে দেশটির আগের রাজধানী মারাক্কেশ থেকে। এর অর্থ স্রষ্টার দেশ।

মরক্কো উত্তর আফ্রিকার একমাত্র দেশ, যেখানে কখনো অটোমান শাসকদের রাজত্ব ছিল না। ১৯১২ সালে ফরাসি ও স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মরক্কোকে ভাগ করে নেয়। দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৫৬ সালে। দেশটির সংস্কৃতিতে আরব, আদিবাসী বারবার, সাব-সাহারান আফ্রিকা ও ইউরোপীয়দের প্রভাব রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রগতি ও আধুনিকতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে মরক্কো একটি মডেল। সিআইএ দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের সর্বশেষ তথ্য মতে (জুলাই ২০২০), মরক্কোর জনসংখ্যা তিন কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৫৪। দেশের নাম দ্য কিংডম অব মরক্কো। রাজধানী রাবাত। আয়তন সাত লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার। প্রধান ভাষা আরবি। পাশাপাশি সেখানে বারবার, ফ্রেঞ্চ ও স্প্যানিশ ভাষাও প্রচলিত।

-এসআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ