শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মুসলমানদের জন্য কোন বিধর্মীকে সালাম দেয়া কি জায়েজ?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জামিল আহমদ

একজন মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে যখন দেখা হবে, তখন শুরুতেই সালাম দিতে হবে- এমন বিধান শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মেই রয়েছে। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আদমকে আ. সালামের শিক্ষা দেন। হযরত আদমকে আ. সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তাআলা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন।

সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। আসসালামু আলাইকুম অর্থ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেওয়া অবশ্যকরণীয়।

হাদিসে রয়েছে, একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা হলে কথা বার্তার আগে সালাম দিতে হবে। সালামের ফজিলত অনেক। প্রথমত সালাম দেওয়া সুন্নত ও সালামের উত্তর (ওয়ালাইকুমুস সালাম) দেওয়া ওয়াজিব ।

মেশকাত শরীফে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০ নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০ নেকি লেখা হয়েছে।

এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া বারাকাতুহু।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারও উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০ নেকি লেখা হয়েছে।

সালামের ফজিলত

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন দু’জন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন।

বিধর্মীদের সালাম প্রসঙ্গ

মুসলমানদের জন্য কোন বিধর্মীকে সালাম দেয়া জায়েজ নয়। তবে যদি কোন প্রয়োজন থাকে বা তাকে সালাম না দিলে জান মালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে এই বলে সালাম দেয়ার অবকাশ আছে, ‘আস সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা’।

আর কোন বিধর্মী সালাম দিলে উত্তরে শুধু ‘আলাইকুম বা ওয়ালাইকুম’ বলবে। পূর্ণ উত্তর দিবে না।মুসলিম ও তিরমিজ শরীফ: হাদস নং ২১৬৭, ২৭০০, ইবনে আবী শায়বা ও  ‍বুখারী শরীফ: হাদিস নং ৬২৬৩, ৬৩৫৭, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৯/৫৯০, মুসান্নাফে আহসানুল ফাতাওয়া: ৭/১৩৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৮-২০৯

খাওয়ার সময় সালাম দেয়া প্রসঙ্গ
খাওয়ার সময় সালামের উত্তর দিতে অপারগ হলে সেই সময় সালাম দেয়া মাকরূহ। তবে লোকমা মুখে দেয়ার আগে পরে সালাম দিতে কোন অসুবিধা নেই।ফাতাওয়ায়ে শামী : ৯/৫৯৫,

মসজিদে সালাম দেয়া প্রসঙ্গ

মসজিদে জোরে সালাম দিলে ইবাদত মগ্নদের মনযোগ নষ্ট হয়। সুতরাং জোরে সালাম দেয়া যাবে না। একান্ত সালাম দিতে চাইলে যারা চুপচাপ বসে আছে তাদের কাছে ক্ষীণ আওয়াজে দেয়ার অবকাশ আছে।ফাতাওয়ায়ে  হিন্দিয়া : ৫/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে বাজ্জারিয়া :৩/৩০০, আপকে মাসাইল আওর উনকা হল :৮/১৫৭,

ভিক্ষুকের সালামের উত্তর দেয়া প্রসঙ্গ

ভিক্ষুক যদি কারো দরজায় এসে সালাম দেয় তাহলে সালামের জবাব দেয়া জরুরি না, কেননা এর দ্বারা ভিক্ষুকের আসল উদ্দেশ্য সালাম নয়, ভিক্ষা চাওয়া।ফাতাওয়ায়ে  হিন্দিয়া : ৫/৩২৫, আদ দুররুল মুখতার : ৯/৫৩২.

ওয়েলকাম টিউনের সালামের উত্তর দেয়া প্রসঙ্গ
মোবাইলে ওয়েলকাম টিউনে যে সালাম দেয়া থাকে, কল করলেই বারবার সালাম বলতে থাকে। তার সালামের উত্তর দেয়া জরুরি না। কেননা রেকর্ডকৃত সালাম প্রকৃত সালাম নয়।সুতরাং ওয়েলকাম টিউনের সালামের উত্তরও জরুরি না।ফাতাওয়ায়ে  হিন্দিয়া : ১/১৩২,আদ দুররুল মুখতার : ২/৫৮৩.তাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৮/২,০০

চিঠি বা পোষ্টারের ‘বাদ সালাম’ এর উত্তর প্রসঙ্গ

চিঠি বা পোষ্টারের ‘আসসালামু আলাইকুম’ এর পরিবর্তে ‘বাদ সালাম’ লেখা থাকে। রাসূল সা. থেকে যেভাবে সালাম বর্ণিত আছে সেভাবেই সালাম দেয়া সুন্নত।সুন্নত পরিপন্থী পদ্ধতির সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। আর বাদ সালাম সেটা সুন্নত পরিপন্থী। তবে যদি জানা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলেই বাদ সালাম লিখেছেন তাহলে তার উত্তর দেয়া ওয়াজিব।ফাতাওয়ায়ে শামী : ৬/৪১৪, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৭৬

সূত্র: ফাতাওয়ায়ে মাদানিয়া

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ