ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ।।
অস্ট্রিয়ায় ইসলামের অগ্রযাত্রা অব্যাহত গতিতে চলার কারণে পুরো ইউরোপে নবজাগরণের সূচনা হয়েছে। বিভিন্ন জনপদে মুসলমান, মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্রের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা হচ্ছে ইসলামের মুবাল্লিগ ও প্রচারকদের এখন মূল ঘাঁটি। বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী থেকে যেসব মুসলমান অস্ট্রিয়ায় বসবাস করছেন বিশেষত যারা নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাদের সাধারণ অবস্থা ভালো ও সন্তোষজনক। অস্ট্রিয়া যদিও খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশ, তারপরও সে দেশের বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ পুরো দুনিয়ার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
যেখানে বসনিয়া হার্জেগোভিনা, কসোভো, মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়ার ভূমিপুত্র মুসলমানরা স্বদেশী খ্রিষ্টানদের আগ্রাসনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন- সেখানে ভিয়েনার মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতা সত্যিকার অর্থে আনন্দের বিষয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য সরকারি উদারনীতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, আমদানি-রফতানি সিন্ডিকেট, ক্লিনিক, সমিতি ও স্কুল গড়ে তুলেছেন।
মিসর, সুদান, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ফিলিস্তিনসহ আরব দেশ থেকে আগত মুসলমানদের মধ্যে অনেক পেশাজীবী বিশেষজ্ঞ বিশেষত চিকিৎসাবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, পদার্থবিদ, প্রকৌশলী, আইনজীবী অস্ট্রিয়ায় সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। অস্ট্রিয়ার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী খ্রিষ্টানদের মতো মুসলমানরাও সমান নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন যা তাদের জীবনধারাকে স্থিতিশীল করেছে। নবম শতাব্দীতে অস্ট্রিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটেছিল।
স্মর্তব্য যে, ভিয়েনার মুসলমানরা অস্ট্রিয়ার ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ব্যাপারে যে উদার পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন তা সংবিধানস্বীকৃত। ইউরোপে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র হয়েও অস্ট্রিয়া ১০০ বছর পর সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্ট সেই আইনে (ইসলামিক ল’) সংশোধনী এনে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়- এমন করে ইসলাম বিকাশের সুযোগ সম্প্রসারিত করে।
১৯১২ সালের ১৫ জুলাই সম্রাট প্রথম ফার্ডিনান্দ সংবিধানের ১৫৯ অনুচ্ছেদ বলে এক সরকারি গেজেটের মাধ্যমে ইসলামকে অস্ট্রিয়ার ফেডারেল প্রজাতন্ত্রের দ্বিতীয় সরকারি ধর্ম হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। বসবাসকারী কয়েক হাজার মুসলিমকে দেশের নাগরিকত্বপঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অস্ট্রীয় আইন ও সংবিধান অনুযায়ী মুসলমানরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার ভোগ করে থাকেন।
রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কোনো নাগরিকের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ ও মনোভাব প্রদর্শন সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী। আইনের দৃষ্টিতে যে সব মানুষ সমান অস্ট্রিয়াই তার বাস্তব নজির। বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় ৮০ সহস্রাধিক মুসলমানের অধিবাস। দিন দিন মুসলমানের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে চলেছে।
কেবল ভিয়েনায় ৬০টি ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সমাজ কল্যাণ সমিতি এবং ৮০টি মসজিদ রয়েছে। গোটা অস্ট্রিয়ায় ইসলাম বর্তমানে দ্রুত বিকাশমান ধর্ম এবং মসজিদের সংখ্যা প্রায় ৬২০টি।
প্রাচীন অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মুসলিম ছাত্ররা ১৯১০ সালে সর্বপ্রথম ইসলামী সমিতি গড়ে তোলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিত ওমর ইহরেন ফেলসের নেতৃত্বে ইসলামী সাংস্কৃতিক সংস্থা নামে দ্বিতীয় বৃহত্তর সংগঠন তার পূর্ণাঙ্গ শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়।
১৯৩৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার মুসলমানদের কল্যাণে এ সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অস্ট্রিয়া যখন জার্মানির অধীনে চলে যায় তখন এ সংগঠনের তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বর্তমানে এ সংস্থা তার সাংগঠনিক শক্তি হারিয়ে নির্জীব হয়ে গেছে। পরবর্তীতে ‘অস্ট্রিয়ান মুসলিম অরগানাইজেশন’ নামে আরেকটি সংগঠনের জন্ম হয়।
মুসলিম ছাত্র ও স্কলাররা ছিলেন এ সংগঠনের উদ্যোক্তা। তারা এ সংগঠনের সহায়তায় একটি ইসলামী পাঠাগার স্থাপন করতে সক্ষম হন। ১৯৬২ সালে এ সংগঠন বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ড. ইসমাইল বালিকের নেতৃত্বে ইমিগ্র্যান্ট মুসলিম স্কলারদের সহায়তায় ইসলামিক সার্ভিস অরগানাইজেশন নামে একটি শক্তিশালী সেবা সংস্থা গড়ে তোলা হয়।
১৯৭৯ সালে অস্ট্রিয়ার তৎকালীন শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ বলে এ সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয় এবং সংগঠনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদান করে। এটিই অস্ট্রিয়ায় সর্বপ্রথম ইসলামী ধর্মীয় গ্রুপ যা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পায়। এ সংগঠন অস্ট্রিয়ার স্কুলে ইসলামী বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
ইউরোপের বৈরী পরিবেশে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের ঈমানি চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যাতে বহাল থাকে সে জন্য এ সংগঠনের কর্মকর্তারা ইসলামী সিলেবাস প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। ১৯৮২ সালে অস্ট্রিয়ার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ইসলামী বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তি লাভ করে।
‘ইসলামিক সার্ভিস অরগানাইজেশন’ অস্ট্রিয়ায় বসবাসরত মুসলমানদের অভাব-অভিযোগ পূরণে, ব্যবসায়- বাণিজ্যের উন্নয়নে ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে, বিশেষত- শিশুদের আকিকা, সুন্নাতে খাতনা, বিয়ে, জানাজা প্রভৃতি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে তাদের মানবিক তৎপরতা প্রশংসনীয়।
বার্লিন কংগ্রেসের পর ১৮৭৮ সালে বসনিয়া হার্জেগোভিনা যখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে পড়ে তখন থেকে মুসলমানরা গণনায় আসে। জনৈক খ্যাতনামা মুফতির তত্ত্বাবধানে ভিয়েনার অখণ্ড Serstrasse-এ একটি সামরিক মসজিদ স্থাপিত হয়। ভিয়েনার মেয়র Karl Lueger ভিয়েনা পৌরসভা ও সম্রাট প্রথম ফ্রাঙ্ক জোসেফের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার স্বর্ণ গিল্ডার্স (অস্ট্রীয় মুদ্রা) মুসলমানদের দেন একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য।
ভিয়েনায় মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নামাজ পড়ার জন্য বড় আকারের মসজিদের প্রয়োজন দেখা দেয়। আটটি মুসলিম রাষ্ট্রের ভিয়েনাস্থ রাষ্ট্রদূতরা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেন।
১৯৬৮ সালে ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টারের জন্য মিসরের রাষ্ট্রদূত হাসান মোহাম্মদ আল-তোহানির নেতৃত্বে ইরান, ইরাক, লেবানন, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে গঠিত হয় ট্রাস্টিবোর্ড।
গঠিত ট্রাস্টিবোর্ড ভিয়েনা নগর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৮.৩০০ বর্গমিটারের একখণ্ড জমি কিনে নেন। ১৯৬৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টারের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
এ অনুষ্ঠানে মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতরা ছাড়াও অস্ট্রিয়া ফেডারেল প্রজাতন্ত্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইম, ভিয়েনার আর্চবিশপ কার্ডিনাল ড. ফ্রাগ কনিগ অতিথি ছিলেন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ইসলামিক সেন্টার নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়ে পড়লে ভিয়েনার মুসলমানরা তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সরকারি কার্যালয়ে এবং Potzleinsdorf নামে জনৈক মুসলমানের বাসভবনে জামাতের সাথে পাঞ্জেগানা ও জুমার নামাজ আদায় করেন।
প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে ভিয়েনায় ইসলামিক সেন্টার নির্মাণকাজ স্থগিত হয়ে পড়ে- এ সংবাদ সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আবদুল আজিজের গোচরীভূত হলে তিনি ইসলামিক সেন্টারটি নির্মাণের জন্য সরকারি তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দেন। ১৯৭৭ সালে ভিয়েনায় নিয়োজিত সৌদি রাষ্ট্রদূত শায়খ ফরিদ বসরাভির তত্ত্বাবধানে Richard Lugner নামে একটা নির্মাণসংস্থা সেন্টারটি নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়।
১৯৭৭ সালের ১১ নভেম্বর ইসলামিক সেন্টারের মিনার থেকে প্রথম আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। মসজিদের গম্বুজে সোনালি বর্ণের অর্ধচন্দ্রের প্রতীক স্থাপিত হয় ১৯৭৯ সালের ২৬ এপ্রিল। ভিয়েনার ইসলামিক সেন্টার অস্ট্রিয়ার ক্রমবর্ধমান মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মিলনভূমিতে পরিণত হয়।
কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, ছাত্র ও শ্রমিকরা নিয়মিত এ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ঐসব অসহায় মুসলমান যারা ইহুদি-খ্রিষ্ট অক্ষশক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন (বিশেষত, আলবেনীয়, বসনীয় ও প্রাক্তন অটোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসী, যারা প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর স্থানচ্যুত হয়েছিলেন) তাদের জন্য ভিয়েনার ইসলামিক সেন্টার মরুভূমিতে মরূদ্যানের মতো নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ভিয়েনার ইসলামিক সেন্টারে রয়েছে জুমা ও ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য সুপরিসর মসজিদ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য নির্ধারিত কক্ষ, একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, একটি মিলনায়তন, পবিত্র কুরআন ও আরবি ভাষা শিক্ষাদানের জন্য একটি শ্রেণিকক্ষ, প্রশাসন ও সভাপতির জন্য পৃথক পৃথক কক্ষ।
এ ছাড়া ইমাম ও কেন্দ্রের কর্মচারীদের জন্য রয়েছে পৃথক দু’টি বাড়ি। কেন্দ্রের মিনারটি ৩২ মিটার ও গম্বুজটি ১৬ মিটার উঁচু। গম্বুজের ব্যাস হচ্ছে ২০ মিটার। ১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন অস্ট্রিয়ান ফেডারেলের চ্যান্সেলর ড. ব্রুনো ক্রেইসি, ভিয়েনার মেয়র, অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সৌদি আরবের শিক্ষামন্ত্রী, অস্ট্রিয়ায় নিয়োজিত বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রিয়ার সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা। ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টারের উদ্বোধনের মাধ্যমে ইউরোপে ইসলামের নতুন যুগের সূচনা হয়।
ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- ১. ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ও নৈতিক আদর্শ সংরক্ষণে অস্ট্রিয়ার মুসলমানদের সহায়তা করা; ২. ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের আসল ভাবমর্যাদা তুলে ধরা এবং যারা ইসলামকে জানতে চায় তাদের কাছে মূলসূত্র থেকে ইসলামের সহিষ্ণুতার বাণী পৌঁছে দেয়া; ৩. তাদের কাছে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ ব্যাখ্যা করা এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতার সেতুবন্ধ রচনা করা। ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টার যেসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এর মধ্যে রয়েছে- ১. ইসলামিক পাঠ্য নির্ঘণ্ট ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাশ্চাত্যকে ইসলামের আসল চিত্র প্রদান; ২. ইউরোপীয় সভ্যতার ওপর ইসলামী সভ্যতার প্রভাবের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো দৃষ্টিগোচরকরণ; ৩. ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের ভূমিকার আলোচনা।
বিগত দু’দশক ধরে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব পালন, ইসলামী বিষয়াদির ওপর সিম্পোজিয়াম ও লেকচার ক্লাসের আয়োজন করে কেন্দ্রটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে খোলা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কুল। স্কুলটি জার্মান ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি সৌদি স্কুল সিলেবাস অনুসরণ করে থাকে।
কেন্দ্রটির বহুমুখী তৎপরতার মধ্যে রয়েছে- বসনিয়ার উদ্বাস্তুদের সাহায্যের জন্য চাঁদা সংগ্রহ, সাধারণ জনগণকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসুবিধা দেয়ার জন্য ফ্রাইডে ক্লিনিকের উদ্বোধন, জাকাত ফান্ড, সামাজিক বীমা তহবিল গঠন ইত্যাদি। সাম্প্রতিককালে মক্কাভিত্তিক রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামির ব্যবস্থাপনায় ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হয় ‘পাশ্চাত্য পাঠ্যসূচিতে ইসলামের ভাবমর্যাদা’ শীর্ষক এক সিম্পোজিয়াম। এ সিম্পোজিয়ামে ইউরোপে অবস্থানরত মুসলমানের অবস্থা ও ইসলামের নীতি এবং আদর্শের ওপর আলোকপাত করা হয়। সংবিধান ও আইনের কারণে অপরাপর ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অস্ট্রিয়ার ব্যতিক্রমধর্মী অবস্থানের চিত্রও সিম্পোজিয়ামে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়।
ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়া হচ্ছে নেতৃস্থানীয় জাতি যারা ধর্মীয় সমতার নীতি সাংবিধানিকভাবে প্রয়োগ করেছে এবং মুসলমানদের দিয়েছে অধিকার ও স্বাধীনতা। ভিয়েনার মহামান্য আর্চবিশপ কার্ডিনাল ড. ফ্রাঞ্চ কলিগ ইসলামি ও খ্রিষ্টান দুনিয়ার মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠতর করার উদ্দেশ্যে একসময় প্রচুর সময় ব্যয় করেন।
এ উদ্দেশ্যে তিনি সিরিয়া ও মিসর সফর করে কায়রো আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় এবং দামেস্কের উমাইয়া মসজিদে যে ভাষণ দেন তা দু’ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ ঐকমত্য ও সম্পর্ক নিবিড়করণের ক্ষেত্রে মাইলফলকের ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ভিয়েনা সফরকালীন সময়ে দামেস্কের গ্র্যান্ড মুফতিকে আর্চবিশপ উষ্ণ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে বর্তমান আন্তর্জাতিক অনৈতিক প্রবণতা প্রতিরোধে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের পারস্পরিক সহায়তার কার্যকর উপায় উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তার ওপর সবিশেষ জোর দেন।
অস্ট্রিয়ার আর্চবিশপ ও সরকারের উদার নীতি এবং মানসিকতা ইউরোপের অন্যান্য দেশে ইসলামের শাশ্বত বাণী ও মহান আদর্শ প্রচার-প্রসারে আগামী দিনগুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এটি আশা করা যায়। আরব-ইসলামী ও অস্ট্রিয়ান নিউজ মিডিয়াগুলো যদি ভিয়েনার মুসলমানদের কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচক কভারেজ দেয় তাহলে ইসলামের জোয়ার আসতে বেশি দিন সময় লাগবে না। স্পেন হারানোর বেদনা মুসলমানরা কিছুটা হয়তো ভুলতে পারবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
-এটি