আবদুল্লাহ তামিম।। পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের আয়োজনে প্রতিবছর মতো এবারও বায়তুল মোকাররাম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ইসলামি বইমেলা’। ৬৪টি স্টলে সেজেছিলো এবারের ইসলামী বইমেলা। আগামীকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়বে কি না জানা যায়নি এখনো। লেখক প্রকাশ পাঠকের মিলনমেলায় প্রাণবন্ত ছিলো এবারের বইমেলা। তবে লেখক প্রকাশ পাঠকের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি কতটুক সেটা জানতেই আজকের আওয়ার ইসলামের আয়োজন।
এবারের ইসলামী বই মেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বই বিক্রি কেন্দ্র, সমকালীন প্রকাশন, কালান্তর প্রকাশনী, রাহনুমা প্রকাশনী, বই ঘর, চেতনা প্রকাশন, মাকতাবাতুল ফোরকান, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, সালসাবীল পাবলিকেশন্স, ইত্তেহাদ পাবলিকেশন্স, রফরফ প্রকাশনীসহ আছে ৬৪টি স্টল। এছাড়াও ইসলামী বই মেলায় প্রথম ‘লেখক কর্নার’ চালু করেছে কর্তৃপক্ষ।
এবারের মেলা অন্যবারের তুলনায় বেশি জমজমাট হয়েছে বলে মতামত প্রকাশ করেছেন অনেকে। অনেক নতুন বইও প্রকাশিত হয়েছে। তবে মেলার পরিধি খুব ছোট হবার কারণে বইকেন্দ্রীক অনেক আয়োজন সু্ষ্ঠুভাবে করা যাচ্ছে না বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। তাই শুরু থেকেই ইসলামী বইমেলার পরিধি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন লেখক প্রকাশক ও পাঠকেরা।
দেশের প্রসিদ্ধ দাঈ, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বছরে দুইবার মেলা করে। এই মেলা যেভাবে জমজমাট হয়ে উঠছে, তাতে আমাদের দাবি হলো, মেলার পরিধি বাড়ানো। বাইতুল মোকাররমের পশ্চিম দিকের যে পথ, সেটা যদি মেলার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে আরও অনেক স্টল আমরা বসাতে পারবো। এই দাবি বাস্তবায়নে পাঠকদের উচিত, বেশি বেশি মেলায় এসে একথা প্রমাণ করে দেয়া, এতটুকু জায়গা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়।
শায়েখ আহমাদুল্লাহর মতই মত প্রকাশ করেছেন, রাহনুমা প্রকাশনীর ওনার দেওয়ান মোঃ মাহমুদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আসলে প্রত্যাশা প্রাপ্তির বিষয়টা বলতে গেলে আমরা এ বছরই প্রথম অংশ নিয়েছি ইসলামী বইমেলায়। স্টল কম থাকায় বরাদ্ধ পাওয়া যায় না। তবে বড় বড় প্রকাশকদের সম্মেলিত প্রচেষ্টা আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ থাকলে এ বইমেলাকে আরো গোছানো ও সুন্দর করা যেতে পারে। আরো বড় পরিসরে আমরা পরিকল্পনা করতে পারি।
আগের তুলনায় ইসলামী বইমেলা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে বইপ্রেমি থেকেও জনসাধরণসহ সবাই বইমেলাকে এখন ট্রেন্ড হিসেবে নিয়েছে। মেলায় আসলো সেলফি তুলল চলে গেলো। বইপ্রেমিক আর ক্রেতার আগের তুলনায় কমই দেখা গেছে। ইনশাআল্লাহ জোয়ার শুরু হয়েছে আশা করা যায় ভবিষ্যতে এ অবস্থাটার পরিবর্তন হবে।
এবারের মেলা আগের থেকে প্রণবন্ত হয়েছে তবে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। এর কারণ কী? এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন, বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি গ্রন্থের লেখক ওমর আলী আশরাফ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। দ্রব্যমূ্ল্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়াও মেলার কয়েকদিন আগে লটারীর মাধ্যমে স্টল বরাদ্ধ দেয়ায় নতুন বই আনার পরিকল্পনা করতে পারছে না অনেক প্রকাশনী। তাই ক্রেতারাও হতাশ হচ্ছে অনেক সময়।
বইমেলা আরো প্রাণবন্ত ও সাফল্যমণ্ডিত করতে সব ইসলামী প্রকাশনীর অংশগ্রহণ অনেক জরুরি। সর্বপরি ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরও সুন্দর ও গোছানো পরিকল্পনা থাকা চাই। প্রয়োজনে বড় জায়গা ও বড় প্রকাশনীগুলোকে প্যাভিলিউন করার জায়গা করে দিতে পারলে মেলাটা আরো সুন্দর হয়ে ওঠবে বলে আশা করি। এ কাজগুলোর পাশাপাশি মেলায় হকার নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরা এমন একটি জায়গা ও আয়োজন পেয়েছি। এটা আমাদের আসলেই বড় একটি প্রাপ্তি
তরুণ আলেম শিক্ষক ও লেখক মাওলানা সাখাওয়াত রাহাত বলেন, বই মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল ও সৃজনশীল চিন্তার সূতিকাগার হিসেবে স্বীকৃত। বই পড়ার অভ্যাস পাঠকের স্মৃতিশক্তি প্রখর করে, কল্পনাশক্তি ও সৃষ্টিশীলতা শাণিত করে, নতুন চিন্তা ও আবিষ্কারক্ষমতা সৃষ্টি করে, আত্মোন্নতিতে সহায়তা সহ প্রভূত কল্যাণ সাধন করে। পাশাপাশি পাঠকের মানসিক উত্তেজনা প্রশমন, হতাশা দূরীকরণ, দুশ্চিন্তা বিতাড়ন ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে বই।
পাঠকের চাহিদা ও উপস্থিতির তুলনায় মেলাপ্রাঙ্গণ যে সীমিত ও ছোট—এটা সচেতন মানুষমাত্রই জানে। তাই ভবিষ্যতে মেলার পরিধি আরও বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি। পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও কাম্য।
উল্লেখ্য, এবার মেলায় রাহনুমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তিনটি বই, আরও একটি বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স দুইটি, মুহাম্মদ পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে চারটি বই, আরও বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। চেতনা প্রকাশন প্রকাশ করেছে চারটি বই। এছাড়াও বই প্রকাশ করেছে মাকতাবাতুল আজহার, মাকতাবাতুল আসলাফ, ইত্তেহাদ, কালান্তর, সমকালীন এবং সিয়ানসহ আরও অনেক প্রকাশনী।
-এটি