আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: গত ৩১ জুলাই বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলমের জানাজা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক এই জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ, এর চেয়ে যন্ত্রণার কিছু নেই। আমাদের ছেলে নুরে আলম ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। তাকে গুলি করে হত্যা করেছে এই আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনী। গুলি করে হত্যা করেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমকে।
আরও ১৯ জন ঢাকা ও বরিশালে হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায়। এখন আর ক্রন্দন নয়, আমাদের জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী নির্যাতনকারী সরকারের হাত থেকে এই জাতিকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। শান্তিপূর্ণভাবে গণ-আন্দোলন শুরু করে নুরে আলম এবং আবদুর রহিমের হত্যার প্রতিশোধ নেব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে নতুন নয়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একদলীয় শাসন পোক্ত করার জন্য ১৫ বছর ধরে ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।
বিএনপির পূর্বঘোষিত এই জানাজায় অংশ নিতে সকাল ৯টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় নেতাকর্মীরা মিছিল ও স্লোগান দিতে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থায়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জানাজা শেষে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওলামা দলের মাওলানা নেছারুল হক জানাজা নামাজে ইমামতি করেন এবং দোয়া পরিচালনা করেন।
এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার জাহিদ হোসেন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে নুর আলমের মরদেহ বুঝে নেন। নয়া পল্টনে মরদেহ পৌঁছানোর পর বিএনপির এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা আহমেদ আজম খান, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আমান উল্লাহ আমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, এলডিপি একাংশের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা।
ভোলায় পুলিশের গুলিতে নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম নিহতের প্রতিবাদে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
গতকাল রুহুল কবির রিজভী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আগামী ৫ থেকে ৭ আগস্ট তিন দিন সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও দোয়ার আয়োজন করা হবে।
৬ আগস্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকায়, ৭ আগস্ট জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ঢাকাসহ সারা দেশে, ৮ আগস্ট যুবদল ঢাকায়, ১০ আগস্ট শ্রমিক দল ঢাকায় ও ১১ আগস্ট মহিলা দল ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে এবং আগামী ১২ আগস্ট জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশজুড়ে সমাবেশ হবে। এদিকে বিএনপির ডাকা আজকের (শুক্রবার) নির্ধারিত সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি গতকাল দুপুরে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে সেদিনই মারা যান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুর রহিম। গুরুতর আহত হন নুরে আলম। পরে তাকে রাজধানীর গ্রিন রোডের কমফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার মারা যান তিনি।
-এটি