শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মা ও সন্তানের জীবনযুদ্ধ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাবিব মুহাম্মাদ কবি বলেন, তোমাকে হারানোর পর শোক ও ধৈর্যকে আহবান করলাম। শোক তো সে ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিলো কিন্তু ধৈর্য মোটেই সাড়া দিলনা। তেমাকে ফিরে পাওয়ার আশা যদি বিলীন হয়ে থাকে (তাহলে হোক) কিন্তু তেমাকে হারানোর শোক চিরকাল জাগরুক থাকবে। তার কবরের পাশে দাড়ালেই দুচোখে ঝরঝর করে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে! তাকে ছাড়া এই জীবন বড্ড কষ্টের! সবসময় নিজেকে অসহায় মনে হয়। সবার মাঝে থেকেও বড় শূন্যতা অনুভব হয়।

তাকে ছাড়া এই জীবনে নেই আনন্দের কোনো অনুভূতি। আছে শুধু অসহনীয় দুঃখ-বেদনা আর সীমাহীন সংকট! কী ঈদ কী কোরবানি! বছরের প্রতিটি দিনই যেন সমান।

হৃদয়ে ঘরে-বাইরে সর্বত্রে শুধু শোকের ছায়া । কী করে বোঝাব মানুষকে বুকের পাহাড়সম ব্যাথা-বেদনা। এই ব্যথা যে বোঝাবার মতো নয়, যার হারায় সেই শুধু তা উপলব্ধি করতে পারে। সমাজের মানুষ হয়তো সাময়িক কিছু শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করেছে কিন্তু শোক তো সারা জীবনের জন্য আমার সঙ্গী হলো। সেই হারানো মানিক হলেন আমার প্রিয় বাবা! বাবার ছায়া হারানো হতভাগ্য একজন সন্তান আমি। তখনো কিছু বুঝিনা, কান্না আর বাবা - মা ডাকাই ছিল আমার ভাষা।

সেই মাত্র দু বছর বয়সেই হারলাম বাবার ছায়া। সবার বাবা আছে, বলতে পারে তার কাছে নিজের সুখ দুখের গল্প, কিন্তু আমি হতভাগা ছোট্ট বয়সেই হারালালাম সেই সুযোগ।

এভাবেই বেদনার্ত হয়ে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে অশ্রুসিক্ত নয়নে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিল মাত্র দুই বছর বয়সেই বাবা হারানো সন্তান হাফেজ আবু তালহা। মমতাময়ী মায়ের স্নেহের আঁচলে লালিত পালিত হয় ছোট্ট শিশু আবু তালহা। হাজারো দুঃখ কষ্ট ও নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আদরের সন্তানকে একজন আদর্শ মানুষ ও হক্কানী আলেম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বদ্ধপরিকর তার মা।

এই সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই তিনি স্বপ্ন দেখেননি ভিন্ন কোনো সংসার গড়ার। সপ্ন দেখেছেন তাদেরকে নিয়ে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সন্তানদের হক আদায়ে সকল সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়েছে তিনি। একদিন আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ওদেরকে বুকে নিয়েই আমি বেচে আছি। ওরা ছাড়া আমার আপন কেউ নেই। আমি ওদেরকে আদর্শ মানুষ ও হক্কানী হাফেজ,আলেম হিসেবে গড়তে চাই! আলহামদুলিল্লাহ!

আবু তালহা কুরআনের হাফেজ হয়েছে এবং মাওলানা হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়েছে। মায়ের স্বপ্ন পূরণে সেও বদ্ধপরিকর । একদিনের ডায়েরির পাতায় সে তার মনের অভিব্যাক্তি লেখে, ছোট্ট বয়সেই বাবাকে হারিয়েছি! জানি! এই শোকে আমার মমতাময়ী মায়ের হৃদয় ভেঙ্গে খানখান হয়েছে। শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে তিনি আমাদের মানুষ করার জন্য সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেছেন, সঙ্গী করেছেন দুঃখ কষ্টকে। সারা জীবনের জন্য বিসর্জন দিয়েছেন সব সুখ-শান্তি।

বিনিময়ে আমি একজন আদর্শ মানুষ ও হক্কানী হাফেজ আলেম হয়ে আমার মাকে উপহার দিতে চাই। আমার এই স্বপ্ন পূরণে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এবং সবার কাছে দোয়া কামনা করি!

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন আবু তালহা একজন নয়, এর নজির হাজার হাজার রয়েছে। আমাদের সমাজের একটি বৃহৎ অংশ বাবাহীন। পিতা-মাতা ছাড়া একটা শিশুর একাকী জীবন কতটা অসহায় তা অনেক সময় আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এতিম শিশুদের জীবিকায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এমন সন্তান ও আদর্শ মায়েদের স্বপ্ন পূরণে তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের প্রতি স্নেহশীল, হিতাকাঙ্খী হওয়া সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল হওয়া আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।

প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ