আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: গার্মেন্টস শিল্প ও বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হওয়ায় অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক নিবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে।
যখন সংকট আর গুজবে অস্থির ডলারের বাজার, তখন দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২২০ কোটি ডলার; যা দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি গত জুনের চেয়েও প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের (ইটি) কূটনৈতিক সম্পাদক দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী সোমবার (১ আগস্ট) তার পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু, শেখ হাসিনার সরকার অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে বদ্ধপরিকর।’
মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে বলা হয়েছিল, অনেকে এটি ধরে নিয়েছিল, অনেক প্রবাসী চাকরি হারানোয় রেমিটেন্স কমে যাবে। তবে, সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সফলতার কারণে অনেক বাংলাদেশি বিদেশে তাদের নিজ কর্মস্থলে ফিরে গেছে এবং তারা মহামারির আগের হারে টাকা পাঠাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২২ সালের বসন্তকালীন বৈঠকে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা ও এর প্রভাব থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সফলভাবে নীতি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। ভিশন ২০৪১ নামে বাংলাদেশ নিজেই একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো ও ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়া।
দেশ বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করছে-উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, কৃষি থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জাহাজ নির্মাণ থেকে গার্মেন্টস, দেশের শিল্প ভিত্তি বহুমুখী হচ্ছে এবং এর রফতানি বাড়ছে।
বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু অর্থনীতিকে একই সমান গতিতে সচল রাখতে কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর নগদ অর্থ পুরস্কার এবং বিলাস দ্রব্যের ওপর করারোপ সবই দেশটির রিজার্ভ তৈরি করতে সাহায্য করছে, যাতে আমদানি চাহিদা সহজেই পূরণ করতে পারে।
এরই মধ্যে সরকারের রফতানি বাড়ানো এবং আমদানি কমানোর নীতি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে।
নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে ‘তলাবিহিন ঝুড়ি’ বলেছিলেন, অথচ সেই বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। সম্প্রতি পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তারা এখন নির্মাণ কাজ সমাপ্তিতে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করা এই সড়ক-রেল সেতু (পদ্মা সেতু) উদ্বোধন করেন, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এদিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা নিয়ে সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে কণ্টকাকীর্ণ অর্থনৈতিক যাত্রা এবং সমৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে এবং পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কোন কোন নির্ণায়কে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধটি লিখেছেন ডেভিড পিলিং।
-এএ