শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বাইতুল্লাহর মুসাফির

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদুল্লাহ শাব্বির।।

রমযান পেরুলেই শাওয়াল মাস আসে। আর তখন আসন্ন বাইতুল্লাহর মুসাফিরদের কলবে শিহরণ জাগে। কাবা প্রেমিকদের হৃদয়ের গভীরে ঝড় ওঠে। যত সময় গড়ায়, ততই তারা পুলকিত হয়। আসন্ন প্রতিটি মুহূর্ত তাদের নিকট খুশির বান বয়ে আনে। সুখের বৃষ্টি ঝরঝর করে ভিজিয়ে দেয় প্রতিটি হিয়াকে। অহোরাত্রী বাইতুল্লাহকে নিয়ে হৃদয়ের আরশিতে স্বপ্ন বুনে। ছবি আঁকে। কল্পে ভাসে। গুনগুনিয়ে তালবিয়া পাঠ করে। দুরুদ শরীফের নাযরানা পাঠায় পাক রওযায়। আর শুধু মিটিমিটি হাসে। কেন হাসে? এর উত্তর দেয়া যায় না কাউকে।

শুধু বাইতুল্লাহর মুসাফিরই অনুভব আর উপলব্ধি করে। কিছু কিছু সুখ আছে, যা আত্মাকে করে সিক্ত! কলবকে করে পরিতৃপ্ত! এ-সুখ, না বলে বুঝানো যায়, আর না লিখে। আত্মা কেন্দ্রীক বিষয়ে শুধু আত্মার মিলনে লেনদেন করা সম্ভব! হৃদয়ের উত্তাপ তো যেন তেন হৃদয়কে দেয়া যায় না। সুকুনে কলবের অধিকারী হতে হয়।

যত দিন গড়ায়, ততই আসন্ন বাইতুল্লাহর মুসাফিরের মাঝে পরিবর্তন সাধিত হয়। কলবের পরিবর্তন। আত্মার পরিবর্তন। হৃদয়ের পরিবর্তন। সলাতের পরিবর্তন। আমলের পরিবর্তন। হাঁটার পরিবর্তন। বলার পরিবর্তন। ব্যবহারের পরিবর্তন। চেহারার পরিবর্তন। মোটকথা তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়।

এরপর একদিন সেই শুভক্ষণটি সামনে এসে ধরা দেয়। অপেক্ষার দীর্ঘ যন্ত্রণাময় ও প্রীতিময় যাত্রার পরে। অপেক্ষাটি কেমন ছিলো— আসন্ন বাইতুল্লাহর মুসাফির প্রতিটি মুহূর্তে ভাবতো— আমি কি সত্যি সত্যি বাইতুল্লাহর মুসাফির হতে চলছি! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমায় নিরাশ করবেন না তো? আমার হায়াত ততদিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে তো? আজকের ঘুৃমটা আমার জীবনের শেষ ঘুম নয় তো!

রাত্রি বেলা ঘুমাতে চায় না। হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। স্বপ্ন চোখে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। আবার জাগ্রত হয়। জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। সেজদার জায়গায় চোখের উঞ্চ জলে ভেজিয়ে ফেলে। এরপরও হৃদয়ের বে-কারারী, আত্মার বে-চাইনী ও দিলের তড়প কাটে না। কলবের এ-হালত বাইতুল্লাহকে দু-চোক্ষে দেখা পর্যন্ত থাকে। চোখের ঝুম বৃষ্টি সবুজ গম্বুজকে না দেখা পর্যন্ত জারি থাকে।

অবশেষে মুমিন হৃদয়ে খুশির ফুল ফোটে। মুমিন মুখে হাসির ঝলক ঝলসে ওঠে। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। পোশাকের শুভ্রতা আর কলবের শুভ্রতা একাকার হয়ে তালবিয়ার মধুর সুর-মূর্ছনা তুলে হারিয়ে যায় তাওয়াফের ভীড়ে। মাতাফে। হাতিমে কাবায়। যামযামের পাড়ে। সাফা থেকে মারওয়ায়। মারওয়া থেকে সাফায়। মিনায়। মুযদালিফায়। আরাফায়। সবুজ গম্বুজের ছায়ায়। হাবীবের রওজা মুবারকে।

আয় রাব্বে কারীম! এই নিশুতি রাতে তুমি আমাকে দেখছো। আমার দিলের তড়প অনুভব করছো। আমি দূর বাংলায় থেকে তোমার বায়তুল্লাহর কল্প-ছবি আঁকছি হৃদয়ে আরশিতে। মনের মণিকোঠায়। হিয়ার গভীরে। তুমি আমাকে তোমার বাইতুল্লাহর মুসাফির হিসেবে কবুল করে নাও না, ইয়া আল্লাহ! তোমার হাবীবের রওজায় সালামের নাযরানা পেশ করার তাওফিক দান করো না, হে রাব্বে কাবা। আমিন! ছুম্মা আমিন!

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ