মুফতি ফয়জুল্লাহ।। আমার জানা মতে, শবে বরাত নিয়ে আমাদের সমাজের মানুষ তিন মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে আছে। একদল করে চরম বাড়াবাড়ি। আরেক দল করে ছাড়াছাড়ি। অপর দল করে ধরাধরি।
অথচ পবিত্র কুরআন ও রাসূল সা: এর সহিহ সুন্নাহ অধ্যয়ন করলে টের পাওয়া যায়, যারা শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, তারা হাদিস বিরোধী সম্প্রদায়।
আর যারা শবে বরাতকে করে ছাড়াছাড়ি, তারা কুরআন বিরোধী জনগোষ্ঠী! পক্ষান্তরে যারা শবে বরাত কে করে ধরাধরি, তারাই কেবল প্রকৃত কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী।
এ কথাগুলো পরিষ্কারভাবে বুঝে আসলেই আমার মনে হয়, আমাদের সমাজের শবে বরাত নিয়ে চলমান বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটবে ইনশাআল্লাহ।
তাই আমি বক্ষমান প্রবন্ধে উপরোক্ত তিন সম্প্রদায়ের তিন দৃষ্টিভঙ্গীকে কুরআন-সুন্নাহর কষ্টিপাথরে পরখ করতে চাই।
প্রথমদল: যারা শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, তাদের বাড়াবাড়ির কিছু নমূনা হল---
১. মসজিদের বাহিরে চতুর্দিকে বাতি জ্বালানো,
২. কবরকে বাতি দিয়ে সজ্জিত করণ,
৩. ঘরে হালুয়া-রুটি ইত্যাদি পাকানো, ইত্যাদি,
অথচ এসব কাজ সম্পূর্ণ হাদিস বিরোধী...! কারণ সুনানে আবু দাঊদের বর্ণিত হাদিসে নবীজি সা: বলেছেন, আল্লাহর রাসূল সা: কবর যিয়ারতকারিণী নারী আর কবরের উপর বাতি প্রজ্জ্বলনকারিদের উপর অভিশাপ প্রদান করেছেন। (সূত্র: সুনানে আবি দাঊদ, খ:২, পৃ:১৫ )
তবে উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাদিসবেত্তা ও ফক্বীহগণ লিখেছেন, নারীদের জন্য যদিও কবর যিয়ারত করা অনুত্তম, তবে দুই শর্তে জায়েয
১ম শর্ত হল: পরিপূর্ণ পর্দার বিধান রক্ষা করতে হবে। ২য় শর্ত হল: গলার স্বর উঁচু না হতে হবে। এতদুভয়ের কোন একটি লংঘন করলেই নারীদের কবর যিয়ারত রাসূল সা: এর অভিশাপের আওতায় চলে যাবে।
অনুরুপভাবে কবরের উপর বাতি প্রজ্জ্বলনকারিও অভিশপ্ত, তবে ঢালাওভাবে নয়। কারণ আমাদের সমাজে সাধারণত কবরে তিন ধরণের বাতি জ্বালানো হয়।
১. দরকারি ২. সরকারি ৩. মশকারি।
প্রথম প্রকারের বাতি জ্বালানো হয়, কবর খনন বা লাশ দাফনের সুবিধার্তে। দ্বিতীয় প্রকারের বাতি জ্বালানো হয়, কাফন চোর বা লাশখেকো প্রাণী থেকে সুরক্ষার জন্য। তৃতীয় প্রকারের বাতি প্রজ্জ্বলন করা হয় অনর্থক। কবরের উপর প্রথম দুই প্রকারের বাতি জ্বালানো শরীয়ত সম্মত।
তবে তৃতীয় প্রকারের বাতি প্রজ্জ্বলনকারি রাসূল সা: এর উল্লেখিত অভিশাপের আওতাভুক্ত হবে। এমনকি আল্লামা শাহ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ: তাঁর অমর গ্রন্থ মা-ছাবাতা বিস সুন্নাহ তে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এসব বাড়াবাড়ি প্রসঙ্গে বলেন, এসব কুপ্রথা হয়তো মুসলমানদের ভিতর হিন্দুদের থেকে ঢুকে পড়েছে। (সূত্র: মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ, পৃ: ২১৪)
সুতরাং পরিষ্কার হয়ে গেল, যারা শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, তাদের আমল হাদিস বিরোধী। দ্বিতীয়দল: যারা শবে বরাতকে করে ছড়াছাড়ি, তারা বলে শবে বরাত বলতে কিছু নেই।
অথচ এটা একটি সম্পূর্ণ কুরআন বিরোধী বক্তব্য!! কারণ শবে বরাতের পূণ্যতা নিয়ে স্বয়ং পবিত্র কুরআনের সূরায়ে দুখানের ৩নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, একটি বরকতময় রজনীতে আমি এ কুরআন নাযিল করেছি।
অতঃপর ৪নং আয়াতে বলেন: এই রাত্রেই প্রত্যেক জ্ঞানপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। অর্থাৎ মানুষের ভাগ্য তালিকা বন্টন হয়। এ দিকে ভাগ্য তালিকা বন্টনের রাতকে রাসূল সা: এর হাদিসে শবে বরাত বলা হয়েছে।
এ দুটি কথা একত্র করলে মর্ম দাঁড়ায়, শবে বরাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। অথচ সূরায়ে ক্বদরে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, পবিত্র কুরআন শবে ক্বদরেই নাযিল করা হয়েছে। যে রাতটা পবিত্র রমজান মাসের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে দু'টি বিষয় লক্ষ্যণীয়। একটা হলো কুরআন নাযিল হওয়ার রাত। আরেকটা হলো ভাগ্য তালিকা বন্টনের রাত। সূরায়ে ক্বদর এবং সূরায়ে বাক্বারার ১৮৫ নং আয়াতের দ্বারা প্রমাণীত যে, রমজান মাসের শবে ক্বদরে কুরআন নাযিল হয়েছে। আর হাদিসের দ্বারা প্রমাণীত যে, ভাগ্য বন্টনের রাত হলো শবে বরাত।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন দাঁড়ায়, সূরায়ে দুখানের তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াত নিয়ে। যেখানে কুরআন নাযিলের রাতকেই ভাগ্য বন্টনের রাত বলা হয়েছে।
এ প্রশ্নের মীমাংসায় তত্ত্ববিদ মুফাস্সিরগণ লিখেছেন, শবে বরাতেই ভাগ্য বন্টন হয়। তবে এর বাস্তবায়ন শুরু হয় শবে ক্বদর থেকে। এ হিসেবে সূরায়ে দুখানে ভাগ্য বন্টনের রাতকেই কুরআন নাযিলের রাত বলা হয়েছে।
যেমনটা তাফসীরে কাবীরের আলোচনার উপর দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়। তাফসীরে কাবীরে এ মীমাংসাটি সুস্পষ্টভাবে উদ্ধৃত হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে যে, শবে বরাতে লাওহে মাহফূয হতে কুরআন অবতরণের কাজ শুরু হয় এবং শবে ক্বদরে এসে তার সমাপ্তি ঘটে। (সূত্র: তাফসীরে কাবীর, খ: ১৪, পৃ: ৩৪১)
সুতরাং শবে বরাতের কোন প্রসঙ্গই কুরআনে নাই বলা, কৌশলে কুরআন বিরোধীতারই নামান্তর!! তাছাড়া সূরায়ে দুখানের ৩নং আয়াতের " লাইলাতুম মুবারাকা " এ অংশের ব্যাখায় হযরত ইকরামা বলেন: রাতটি হচ্ছে শবে বরাত।
সূত্র: ১. তাফসীরে কাবীর, খ: ১৪, পৃ: ৩৩৮, ২. তাফসীরে রুহুল মাআনী, খ: ৯, পৃ: ১১০, ৩. তাফসীরে রহুল বয়ান, খ: ৮ পৃ: ৪০৪, ৪. তাফসীরে কুরতুবী, খ: ১৬, পৃ: ৮৫, ৫. তাফসীরে ত্বাবারী, খ: ১১, পৃ: ২২১, ৬. তাফসীরে বাগাভী, খ: ৪, পৃ: ১১১, ৭. তাফসীরে খাযেন, খ: ৪, পৃ: ১৪৩
এসব তাফসীর গ্রন্থসমূহের বিবৃতি দ্বারা একথা সুস্পষ্ট যে, শবে বরাত স্বয়ং কুরআন দ্বারাও প্রমাণীত। তাই যারা শবে বরাত নিয়ে করে ছাড়াছাড়ি, তারা কুরআন বিরোধী সম্প্রদায় সরাসরি!!
তৃতীয়দল: যারা শবে বরাতকে করে ধরাধরি, না করে বাড়াবাড়ি, না করে ছাড়াছাড়ি, তারাই সত্যিকার অর্থে কুরআন-সুন্নাহর প্রকৃত অনুসারী।
যেহেতু তারা উল্লেখিত আয়াতের তাফসীরের আলোকেও শবে বরাতে বিশ্বাসী এবং রাসূলে কারীম সা: এর সহিহ ও হাসান পর্যায়ের বহু হাদিসের আলোকেও শবে বরাতের ফজিলত তাদের কাছে স্বীকৃত।
এ পর্যায়ে সকলের জ্ঞাতার্থে শবে বরাতের ফজিলত প্রসঙ্গে সর্বাধিক বিশুদ্ধ, সহিহ ও অথেন্টিক সূত্রে বর্ণিত হাদিসখানা পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি।
হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাযি: রাসূল সা: থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা'আলা মধ্য শা'বানের রাত্রে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করতঃ মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।
সূত্র: ১. সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং- ৫৬৬৫ ২. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং - ১৩৯০ ৩. মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস নং - ৩০৪৭৯ ৪. মুসনাদে বাযযার, হাদিস নং - ২৭৫৪ ৫. মুসনাদে ইসহাক্ব ইবনে রাহওআইহ, হাদিস নং - ১৭০২ ৬. আল মু'জামুল আওসাত্ব লিত ত্বাবরানী, হাদিস নং - ৬৭৭৬ ৭. আল মু'জামুল কাবীর, হাদিস নং - ২১৫ ৮. মুসনাদুশ শামীন, হাদিস নং
- ২০৩ ৯. শুআবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী, হাদিস নং - ৬২০৪ ১০. আস সিলসিলাতুস সহিহাহ লিল আলবানী, খ:৩, পৃ: ১৩৫।
হাদিসটিকে, যারা শবে বরাতকে নিয়ে করে ছাড়াছাড়ি, তাদের বরেণ্য মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী সহ অনেক বড় বড় হাদিস নিরুপণকারিগণ সহিহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
আলবানীর বক্তব্যটি নিম্নরুপ-- হাদিসটি সহিহ। যা সাহাবায়ে কেরামের বড় একটি জামাআত থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত। যা পরষ্পরকে শক্তিশালী করে তোলে। ( সূত্র: সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহিহাহ লিল আলবানী, খ:৩, পৃ:১৩৮ )
শবে বরাতের স্বপক্ষে এত বড় শক্তিশালী হাদিস থাকা সত্ত্বেও তা অস্বীকার করা ধর্মহীন, বে-দ্বীনের পক্ষেই কেবল সম্ভব!!
উপরোক্ত হাদিস ছাড়াও শবে বরাতের ফজিলত প্রমাণে আরো বেশ কিছু হাদিস পাওয়া যায়, যা এককভাবে যঈফ হলেও সম্মিলিত ও সামগ্রিকভাবে হাসান লি-গাইরিহীর পর্যায়ে পড়ে।
তাছাড়া যঈফ হাদিসও ফজিলতের ক্ষেত্রে হাদিস বিশারদগণের নিকট গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত।
নিম্নে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হলো ১. অর্থাৎ: হযরত আয়শা রাযি: বলেন, এক রাতে আমি রাসূল সা: কে বিছানায় পেলাম না। তাই তাঁকে খোঁজ করতে বের হলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে।
আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তুমি কি এই আশংকা করছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার সাথে অবিচার করবেন? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম, আপনি অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে তাশরীফ নিয়েছেন। তখন রাসূল সা: বললেন, আল্লাহ তা'আলা মধ্য শা'বানের রাতে দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন এবং বনু কালব গোত্রের ছাগলের পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন। ( সূত্র: সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং: ৭৩৯ )
এ হাদিস দ্বারা দুটি বিষয় স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় ১. শবে বরাতে কবর যিয়ারত করা নবীজির সুন্নাহ। ২. শবে বরাতে ইবাদাতের উদ্দেশ্যে ঘরের বাহিরেও গমন করা শরিয়ত সমর্থিত, যেহেতু নবীজি সা: স্বয়ং এমনটি করেছেন।
(২) অর্থাৎ: হযরত আলী রাযি: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন যখন মধ্য শা'বানের রজনী আগমন করে, তখন তোমরা তার রাতের অংশে রাত্রি জাগরণ করে ইবাদাত করো, আর দিনের অংশে রোজা রাখো।
কারণ ওই রাত্রে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই আল্লাহ তা'আলা প্রথম আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন: আছো কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে মাফ করে দিবো। আছো কি কোন রিযিকের যাচনাকারি? আমি তাকে রিযিক দিবো। আছো কি কোন সমস্যার সম্মুখীন ব্যক্তি? আমি তার সমস্যা দূর করে দিবো। আছো কি অমুক? আছো কি তমুক?--- এভাবে প্রভাতের সূচনা পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। ( সূত্র: সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদিস নং ১৩৮৮ )
এ হাদিস দ্বারা পরিষ্কারভাবে শবে বরাতের ফজিলতসহ তিনটি আমলের সন্ধান পাওয়া যায় ১. শবে বরাতে রাত্রি জাগরণ
করে ইবাদাত করা, ২. পরের দিন একটি নফল রোজা রাখা, ৩. কায়মনোবাক্যে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করা
(৩) অর্থাৎ: আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, এই পূণ্যময় রজনীতে আল্লাহ তা'আলা (১) মুশরিক (২) হিংসুক (৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারি (৪) টাখনুর নিচে পোষাক পরিধানকারি (৫) মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান (৬) মদ্যপ, এদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। ( সূত্র: শুআবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী, খ: ৩, পৃ: ৩৮৪ )
উপরোক্ত হাদিসে ছয়টি সম্প্রদায়ের অপরাধ একনিষ্ঠ তাওবা ছাড়া এই রাতেও অমার্জনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব হাদিস দ্বারা শবে বরাতের ফজিলত ও আমলের চিত্র খুব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। যা না মানার কোনো অবকাশ নেই।
তথাপী শবে বরাতের অস্বীকারকারিরা উদ্ধৃত হাদিস সমূহকে কৌশলে যঈফ বলে উড়িয়ে দেয়।
তাই তাদের অপকৌশলের ধুম্রজাল ছিন্ন করতঃ বলতে হয়, যঈফ হাদিস ঢালাওভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে বড় কোন হাদিসবেত্তা বলেননি।
বরং যঈফ হাদিস প্রমাণযোগ্য হওয়ার বিবরণ দিতে গিয়ে আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রহ: তাঁর হাদিস শাস্ত্রীয় নীতিমালা বিষয়ক অমরগ্রন্থ " কাওয়াইদু ফী উলূমিল হাদীস " এ লিখেছেন, আমলের ফজিলতের ক্ষেত্রে যঈফ হাদিসের উপরও আমল করা যাবে। ( সূত্র:ক্বাওয়াঈদু ফী উলূমিল হাদিস,পৃ: ৯২ )
সুতরাং পরিষ্কার হয়ে গেল, শবে বরাত প্রসঙ্গীয় কোনো হাদিস যদি যঈফও হয়, তারপরও সেটি মুহাদ্দিসীনের নিকট আমলযোগ্য।
তাছাড়া যঈফ হাদিস যদি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়, তখন তা আর যঈফ থাকে না। এ মর্মে উপরোক্ত কিতাবে বিবৃত হয়েছে, যঈফ হাদিসের বর্ণনারীতি যদি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়, এমনকি একটি সূত্রও যদি অতিরিক্ত থাকে, পরিণামে তা হাসান স্তরে উপনীত ও উন্নিত হয় এবং প্রমাণযোগ্য হয়ে যায়। (সূত্র: ক্বাওয়াঈদু ফী উলূমিল হাদিস, পৃ: ৭৮)
যঈফ হাদিস প্রমানযোগ্য হওয়ার প্রসঙ্গে কুয়েত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমূদ আত্ব-ত্বাহ্হান তাঁর রচিত " তাইসীরু মুসতালাহিল হাদিস " গ্রন্থে লিখেছেন, অধিকাংশ বিজ্ঞ হাদিস নিরুপণকারিগণের নিকট আমলের ফজিলত বিষয়ক যঈফ হাদিসের উপর আমল করা মুস্তাহাব তথা অতি উত্তম। (সূত্র: তাইসীরু মুসতালাহিল হাদিস, পৃ: ৪৪)
হাদিস নিরুপণকারিদের উল্লেখিত বক্তব্যের দ্বারা একথা সুস্পষ্ট যে, শবে বরাতের ব্যাপারে যেহেতু একটি সহিহ হাদিস রয়েছে এবং যঈফ হাদিসগুলোও একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, বিধায় এ মর্মের যাবতীয় যঈফ হাদিসগুলোও হাসান পর্যায়ের হাদিসে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই এ প্রসঙ্গীয় সবগুলো হাদিসের উপর আমল করা শুধু বৈধ নয়, বরং মুস্তাহাব তথা অতি উত্তমও বটে।
শুধু তাই নয়, বরং শবে বরাতকে যারা করে ছাড়াছাড়ি, তাদের কতিপয় মান্যবর মহাপুরুষগণ পর্যন্ত শবে বরাতের ফজিলত ও পূণ্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন!
তাইতো তাদের প্রয়াত মুরব্বী আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তার রচিত "তুহফাতুল আহওয়াযী" তে লিখেছে, সুতরাং এসব হাদিসের সমষ্টি তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণস্বরুপ যারা শরীয়তের মধ্যে শবে বরাত ও তার ফজিলতের কোন ভিত্তি নেই বলে মনে করে। ( সূত্র: তুহফাতুল আহওয়াযী, খ: ৩, পৃ: ৪৪২ )
তাই যারা শবে বরাতকে করে ধরাধরি, একমাত্র তারাই প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কুরআন ও সহিহ সুন্নাহর অনুসারী। তারাই সত্যিকারের আহলে সুন্নত ওয়াল জামা'আত।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুক, আমীন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী আইন গবেষক, লেখক, আলোচক ও খতীব: মনুরবাগ জামে মসজিদ বসুন্ধরা রিভারভিউ কেরানীগঞ্জ ঢাকা
-এটি