মননশীল আলেমেদ্বীন মাওলানা এনামুল করীম ইমাম। সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র খ্যাত রাজধানীর মাদরাসা দারুর রাশাদের মুহাদ্দিস ও সাহিত্য সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী মুশরিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফরিদপুর জেলার সালথায় ১৯৮৪ সালের ২ মার্চ জন্মেছেন তিনি। দাওরা, উচ্চতর হাদিস ও ফিকাহ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন রাজধানীর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়াতে।
নিজেকে লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চার সঙ্গে জড়িয়েছেন ছাত্র জীবন থেকেই। পড়াশোনার পাঠ শেষ করার আগেই পড়ে ফেলেছেন বাংলা সাহিত্যের বোদ্ধা লেখকদের অধিকাংশ বই। ইসলামী সাহিত্য নিয়ে লেখালেখি করছেন নিয়মিত। তবে প্রচারের আলোর বাইরে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যেতেই পছন্দ করেন এই আলেম লেখক।
কওমি তরুণদের লেখালেখি ও একুশের বইমেলা নিয়ে বেশ ঘনিষ্ঠ সময় দিয়েছেন আওয়ার ইসলামকে। এএকান্ত আলাপচারিতায় তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম।
লেখালেখিতে আসার একেবারে শুরুর দিকের গল্পটা শুনতে চাই; কীভাবে আসলেন? অনুপ্রাণিত হয়েছেন কার লেখা পড়ে?
এনামুল করীম ইমাম: আসলে আল্লাহ তাআলা আমার মধ্যে পড়ার গুণটি জন্মগতভাবেই দিয়েছিলেন। ছোটবেলায় প্রচুর পড়াশোনা করতাম। তেমন বই তো ছিল না। নিজের পাঠ্য বই, ভাইদের পাঠ্য বই, এগুলোই পড়তাম। এজন্য ভাইরা বাংলা, সহপাঠ, ইতিহাস বা সমাজ বই পড়ার আগেই আমি পড়ে ফেলতাম।
আব্বার সাথে একবার জেলা শহরে গেলাম। ঢুকলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে। আব্বা কোন এক লেখকের বই খুঁজতে গিয়ে অনেক বই নামালেন। তখনই মনে মনে বললাম, আমার বই যদি কেউ এভাবে খুঁজত! এভাবেই লেখালেখিতে আসা।
একুশে বইমেলায় আলেম লেখকদের বই প্রকাশ হওয়ার যে ধারাবাহিকতা এতে আপনার নামও যুক্ত হল, বিষয়টা কতটা উপভোগ করছেন অথবা এ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এনামুল করীম ইমাম: এর আগেও মেলায় বই বেরিয়েছিল; কিন্তু আমি নিভৃতচারী মানুষ। এজন্য কোনো প্রচার ছিল না। তবে এবার মুহাম্মদ পাবলিকেশন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা একটু বেশি প্রচার করে ফেলেছে। যা আমার একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তবে আলেমদের বই বের হওয়ার এই ধারাবাহিকতা ভালো।
আপনার নিজের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাই? কী কী বই বেরিয়েছে- অনুবাদ না মৌলিক?
এনামুল করীম ইমাম: আমার মৌলিক গ্রন্থ আছে, আবার অনুবাদ গ্রন্থও আছে। মৌলিক ও অনুবাদ সব মিলিয়ে গ্রন্থ সংখ্যা ৩০-এর কাছাকাছি। অপ্রকাশিত গ্রন্থও প্রায় ৫০টি হতে পারে।
বইমেলায় বই প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক তরুণই আদর্শ থেকে বেরিয়ে যশখ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়েন বলে কথা উঠে- এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
এনামুল করীম ইমাম: দেখুন, লেখালেখি বা মিডিয়া জগতে যশখ্যাতি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এখানে সবসময় ভক্তদের আনাগোণা থাকে। সুতরাং এর থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন। তবে যদি কোনো আল্লাহ ওয়ালার সোহবত থাকে, তাহলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকটা সহজ। এক্ষেত্রে আমি সাইয়েদ আবুল হাসান আলী রহ.-এর খলীফা মাওলানা মুহাম্মাদ সালমান হাফি. -এর অধীনতা গ্রহণ করেছি।
'সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে চিন্তা ভাবনায় তরুণদের ছিটকে পড়ার আশঙ্কা'- বর্তমানে এ জায়গাটা থেকে কি আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে আপনার মনে হয়?
এনামুল করীম ইমাম: সাহিত্য চর্চা করতে গেলেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে। চিন্তা ছাড়া সাহিত্য হয় না। এজন্য আমি ‘বুদ্ধির শুদ্ধি ছাড়া বিবেকের মুক্তি অসম্ভব’ শিরোনামে বুদ্ধির শুদ্ধি আন্দোলন নামে একটি কাজ শুরু করেছিলাম; কিন্তু বেশিদূর আগাতে পারিনি।
আরো পড়ুন: বইমেলায় মাওলানা এনামুল করীম ইমামের ‘এসো রূপকথার গল্প শুনি’ ও‘ মুসলিমদের পারস্য বিজয়ের ইতিহাস’
আলেমদের মাঝে যে পরিমাণ লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চা হচ্ছে, এতে করে শুধু আলেম লেখকদের বই দিয়ে কি স্বতন্ত্র কোন বইমেলা হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন?
এনামুল করীম ইমাম: সেটা তো বায়তুল মোকাররমে হচ্ছেই। তা ছাড়া আঞ্চলিক মেলাও তো হচ্ছে। বলতে গেলে এই জগৎটাই এখন আলেমদের দখলে চলে যাচ্ছে। এটা সুসংবাদ।
একুশে বইমেলা বলেন বা বায়তুল মোকাররম কেন্দ্রিক ইসলামী বইমেলা; কোনটাতেই ইসলামি প্রকাশনীগুলো এখনো নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারেনি, এ নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
এনামুল করীম ইমাম: এজন্য তাদের শক্ত একটি প্লাটফর্ম দরকার। কঠিন ঐক্য দরকার। শাসকরা এদের সৌখিন সামগ্রীর বিক্রেতা মনে করে। সুতরাং নিজেদের প্রয়োজনীয়তা ফুটিয়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রীয় যেসব ব্যবসায়িক সংগঠন আছে, সেগুলোর মেম্বারশীপ নিতে হবে। তাহলে নিজেদের প্রয়োজনের কথা বলার সুযোগ পাওয়া যাবে।
একেবারে তরুণ যারা মাত্র সাহিত্য চর্চা শুরু করেছেন বা এপথে নিজেদের মেলে ধরতে চান, তাদের কিছু বলতে চান?
এনামুল করীম ইমাম: এপথ প্রতিযোগিতার পথ। এখানে টিকে থাকা, উন্নতি করা, চাহিদার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য কঠোর সংগ্রাম, সাধনা ও ধৈর্য দরকার। সুতরাং নিজের সাথে বোঝাপড়া করেই এপথে আসতে হবে।
আওয়ার ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
এনামুল করীম ইমাম: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে আওয়ার ইসলাম পরিবার ও সমস্ত পাঠককেও ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন: ‘অনুবাদ নির্ভর সাহিত্য চর্চা থেকে বেরিয়ে তরুণদের মৌলিক রচনায় মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ’
এটি / এনটি