খাদিজা ইসলাম।।
সাঝঁ সকালে পাখির কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙ্গে। কুকিলের কুহুতান যেন মনকে করে দেয় আরো উতলা। দখিনা বাতাস জানান দেয় আমারই রাজ্য এটা। শিমুলের ফুল,আমের মুকুল, কাঁঠালের মুচি সব কিছুই যেন ফাগুনের কর্তৃত্ব। চারদিকে গাছের পাতা ঝরে নতুন পাতা গজিয়েছে। সকালের সে নির্মল বাতাস যেন গ্রামীণ পরিবেশে সারাদিন ই লেগে থাকে। সারাদিন হৈ হৈ রব পড়ে যায়, শিশুরা দলবেঁধে ছুটে ছোট সে ছেলুকলের কাছে। দেখা মেলে পাতা কুঁড়ানিদের। বাঁশ ঝাড়, আর গাছপালার পাতা সংগ্রহে পড়ন্ত দুপুরে। এ যেন ফাগুনের টালমাটাল দিনেরই জীবন্ত উদাহরণ।
কখনো চোখে পরবে জংলী ফুল সংগ্রহে বালক বালিকারা দলবেঁধে ছুটছে। কার আগে কে কত বেশি ফুল সংগ্রহ করবে। দেখা যাবে সবাই মিলে বরই ভর্তা বানানোর জন্য সংগ্রহ করবে, বরই,কাঠালের মুচি,টমেটো,ধইনচা,কাচা মরিচ। একসাথে সব তুলবে ভারাতে। তার পর ভর্তা বানিয়ে তা বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করবে। আড্ডা দেখা যাবে শিমুল তলায়। শিমুলের ফুল দিয়ে তৈরি করবে নকল কেরোসিন তেল। কেরোসিন তেলের কারিগররা আবার কলা গাছের খোল দিয়ে ইটের ভাটাও তৈরি করে। কতশত শুভ বুদ্ধি উদয় করে দেয় এ ফাগুন।
সারাদিন যেন ফূর্তি একটা ভাব এনে দেয় ফাগুন। বিকাল হওয়ার সাথে পাখিদের দেখা যায় নীল আকাশে। খাবারের সন্ধানে ছুটতে দেখা যায় বড়ই গাছে। নিজের জন্য বাচ্চার জন্য খাবার সংগ্রহ করছে। কখনো বা দেখা যায় ধানের খেতের পোকা ধরতে। প্রকৃতির এ ফাগুনের ছাপ দেখা যায় মানব মনে ও। চোখে পড়ে তারুণ্যের, উদ্দীপনায় তৈরি করা দোলনা। বাতাসের সাথে ধুলতে থাকে রশি দিয়ে তৈরি করা দোলনা।
পেছন থেকে সঙ্গীরা জোরে ধাক্কা দেয়!কখনো রশি ছিড়েঁ পড়তে দেখা যায় তরুণীকে। এ যেন দুখের মধ্যে ও হাসি। ফাগুনের আরেক সৌন্দর্য। প্রকৃতি আর মানবমনের চলে লুকোচুরি প্রেম। কখনো বা মাঠ থেকে কানে আসে বাঁশির সুর। বাশেরঁ বাঁশি মনের কিছুতেই যেন নিস্তার দেয় না। গোধূলির শেষ লগ্নে পাখিরা নীড়ে ফিরে ঝাঁকে ঝাঁকে। ঘাসের উপর হালকা শিশিরের ফোঁটা। শেষ বিকেলের সূর্যটা যেন আগুনের ঝলক। প্রকৃতির বায়ুতে মন যেন মনের বাঁধন ছেড়ে দূরে কোথাও হারাতে চাই। মন, প্রকৃতি দুটোই জানান দেয় এ যেন ফাগুনের রাজত্ব। সেই রাজ্যে প্রেম চলবে মানব- প্রকৃতির।
লেখক- শিক্ষার্থী, সম্মান ২য় বর্ষ,বাংলা, সরকারি তিতুমীর কলেজ।
-কেএল